যাতায়াতে শুরু হয় নতুন দিগন্ত

0
104

চাকা আবিষ্কার মানুষের সৌভাগ্যের দরজা খুলে দেয়। যাতায়াতে শুরু হয় নতুন দিগন্ত। উদ্ভাবনের সেই ধারাবাহিকায় আসছে ঘণ্টায় ১২২০ কিলোমিটার গতিতে চলার প্রযুক্তি।

এমন গতিতে ছুটে চলা বাহন আকাশে উড়বে না, ভূমি দিয়েই চলবে। বিস্ময়কর এমন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছেন অনেক কাজের কাজী এলোন মাস্ক।

যাতায়াতে খরচ কমিয়ে আনতে অনেকদিন ধরে ভূমিতেই আকাশের গতি এনে দেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। উদ্ভাবিত হয়েছে বুলেট ট্রেন, ম্যাগল্যাব ট্রেনের মতো নানান বাহন। এর কোনটিই কাঙ্খিত গতি এনে দিতে পারেনি। ২০১২ সালে নতুন ভাবনা নিয়ে এগিয়ে আসেন টেসলার প্রতিষ্ঠাতা মাস্ক।

অসম্ভব চিন্তা করতে পটু মাস্কের পরিকল্পনা একেবারে আনকোরা নতুন এক যাতায়াত ব্যবস্থার, যেটির নাম দিয়েছেন তিনি হাইপারলুপ। ধারণা করা হয়, হাইপারলুপ প্রতি ঘণ্টায় ১২২০ কিলোমিটার বেগে চলতে পারবে। মাত্র কয়েক মিনিটে ভ্রমণ করা যাবে এক শহর থেকে অন্য শহর।

কয়েকদিন আগে হয়েছে ছোট্ট একটি পরীক্ষাও। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে গতি উঠেছে ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার। তবে এখনও হাইপারলুপের মধ্যে দিয়ে মানুষ বসিয়ে চলাচলের অবস্থা তৈরি হয়নি।

হাইপারলুপ কী?

এটি হচ্ছে এক ধরনের যানবাহন, যা মাটি না ছুঁয়ে বায়ুহীন টিউবের মধ্য দিয়ে চলবে অবিশ্বাস্য হাজার কিলোমিটার গতিতে। এ মাটি না ছোঁয়া আর বায়ুহীন টিউবের মধ্যে চলাচলের ব্যবস্থাই এটির বৈপ্লবিক দিক।

সড়কযানের গতিরোধকারী দুটি প্রধান উপাদান হচ্ছে ঘর্ষণ ও বায়ু। রাস্তার ঘর্ষণবল এবং বাতাসের বাধা গাড়িকে বেশি জোরে চলতে দেয় না।

প্রযুক্তিটির মূল ধারণা হচ্ছে, রাস্তার ঘর্ষণ ও বাতাসের বাধা কমিয়ে এনে কম শক্তি ব্যয়ে বেশি বেগ অর্জন করা। হাইপারলুপ প্রযুক্তিতে বাতাসের বাধা দূর করতে লম্বা নিশ্চিদ্র টিউবের লাইন তৈরি করা হবে।

টিউবের ভেতরের বাতাসকে বের করে নেওয়া হয়। বায়ুশূন্য টিউবের মধ্য দিয়ে ম্যাগনেটিক এলিভেশন লাইনের ওপর ভেসে ভেসে হাইপারলুপ পড গন্তব্যে এগিয়ে যায়।

কোনও প্রকার বাধাহীন না হওয়ায় পডগুলো অবিশ্বস্য গতি অর্জন করে। সম্পূর্ণ নাবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করবে বলে এই যানবাহন ব্যবস্থায় খরচ অনেক কম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সর্বশেষ অবস্থা

বহুল আলোচিত প্রযুক্তিটি এখনও উন্নয়নের পর্যায়েই রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নাভাদাতে পরীক্ষামূলক ভার্জিন হাইপারলুপ ওয়ানের নির্মাণকাজ চলছে।

কিছুদিন আগে ২৮ ফুটের একটি পরীক্ষামূলক পড মাত্র কয়েক সেকেন্ডে ঘণ্টায় প্রায় ২০০ মাইল গতি অর্জন করে। ইতিমধ্যে ভারতও এ ব্যবস্থায় আগ্রহ দেখিয়েছে। চেন্নাই ও বেঙ্গালুরুর মধ্যে হাইপারলুপ যোগাযোগ ব্যবস্থা নির্মাণের আগ্রহ দেখিয়েছে তারা।

দুবাইতেও চলছে লাইন বসানোর কাজ। ভার্জিনের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে হাইপারলুপ পডে মানুষ বসিয়ে পরীক্ষামূলক যাত্রা শুরু হবে।

রয়েছে প্রশ্ন

হাইপারলুপ নিয়ে আশাবাদী হওয়ার মতো অনেক যুক্তি যেমন আছে, তেমনি আছে সমালোচনা করার মতো আশঙ্কার জায়গাও। প্রায় বায়ুশূন্য শতশত কিলোমিটার লম্বা টিউবের ওপর বাতাসের চাপের কারণে টিউব ভেঙে দুর্ঘটনার আশঙ্কা কিভাবে মোকাবেলা হবে সেটা বড় প্রশ্ন।

গরমের দিনে ইস্পাতের প্রসারণের জন্য স্থান কীভাবে দেওয়া হবে সেটি নিয়েও জানার আছে। সবচেয়ে বড় আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, একটি বদ্ধ স্থানে এত গতিতে চড়তে মানুষ আগ্রহী হবে কী?

তাই অনেক কট্টর সমালোচক মনে করেন, এটি একটি বিলিয়নিয়ারের বিলাসী স্বপ্ন হয়েই থেকে যাবে।

আশার বিষয় হচ্ছে, ১৯০৩ সালে রাইট ভাইয়েরা যখন বিমান আবিষ্কার করেন তখনও এমন কথা বলেছেন অনেকেই। প্রশ্ন তোলা হয়েছিল হাজার ফুট ওপর দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কেউ চলবে তো?

এখন সময়ই বলে দেবে মাস্কের পাগলামি কতটা খাটে।