রাউজানে ব্যঙ্গেঁর ছাতার মতো গড়ে উঠেছে ডায়গনেষ্টিক সেন্টার

0
101

এলাকার লোকজন থেকে পরিক্ষার নাম দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা মনগড়া রিপোট দিয়ে এলাকার লোকজনকে ঠেলে দিচ্ছে মৃত্যুর মুখে

শফিউল আলম, রাউজান ঃ চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার ফকির হাট বাজারে মেডিকো ডায়গনেষ্টিক সেন্টার, মুন্সির ঘাটায় কেয়ার ল্যাব, সেবা ডায়গনেষ্টিক সেন্টার, জলিল নগরে ইনটেনসিভ ডায়গনেষ্টিক সেন্টার, সুপার ল্যাব ডায়গনেষ্টিক সেন্টার, মর্ডান ডায়গনেষ্টিক সেন্টার, রাউজান ডায়গনেষ্টিক সেন্টার সহ রাউজান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে, রাউজানের আমির হাট, রাজানের গহিরা চৌমুহনী, রাউজানের পাহাড়তলী চৌমুহনী, রাউজানের নোয়াপাড়া পথের হাটে গড়ে উঠেছে ব্যঙ্গেঁর ছাতার মতো ঙায়গনেষ্টিক সেন্টার । এই সব ডায়গনেষ্টিক সেন্টারে এলাকার লোকজন থেকে রোগ পরিক্ষার নামে প্রতারণা করে হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা । মনগড়া রির্পোট দিয়ে এলাকার লোকজনকে প্রতিনিয়তমৃত্যুর মুখে ঠেলে দিলে ও সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ নিরবতা পালন করছে । রাউজান ডায়গনেষ্টিক সেন্টারে আল্ট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষা করতে গিয়ে রাউজান সুরেশ বিদ্যায়তনের ৮ ম শ্রেণীর ছাত্রী ইয়াসমিন আকতারকে ভুল রিপোর্ট দেওয়ায় ইয়াসমিন আকতার এখন মৃত্যুর মুখে রয়েছে । এ ব্যাপারে ইয়াসমিন আকতারের চাচাত ভাই আকবর রাউজান ডায়গনেষ্টিক সেন্টারের বিরুদ্বে রাউজান উপজেলা নির্বাহী অফিসার কুল প্রদীপ চাকমার কাছে অভিযোগ করলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কুল প্রদীপ চাকমা রাউজান উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে তদন্ত পুর্বক রিপোট প্রদানের জন্য নির্দেশ প্রদান করেন ।
গতকাল ১০ সেপ্টম্বার বুধবার রাউজান উপজেলা নির্বাহী অফিসার কুল প্রদীপ চাকমা তদন্ত কমিটি গঠনের ব্যাপারে নিশ্চিত করেছেন ।অপর দিকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক থেকে রাউজানে সব ডায়াগনিষ্টিক সেন্টারের রেজিষ্ট্রশন ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ঠিক আছে কিনা তদন্ত করতে চিটি দিয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে। জানা যায়, রাউজান ডায়গনেষ্টিক সেন্টারের বিরুদ্বে মোহাম্মদ আকবর নামে এক মাইক্রোবাস চালক গত ৭ সেন্টম্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে প্রতিকার ও আইন গত ব্যবস্থা নিতে একটি অভিযোগ করেন। আলী আকবরের অভিযোগের পরিপেক্ষিতে রাউজান ডায়াগনিষ্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তদন্ত কমিটি গঠন করে। রাউজান উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা অসীম কুমার নাথকে প্রধান করে এই তদন্ত কমিটি করা হয়। এ প্রসঙ্গে রাউজান উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. অসীম কুমার নাথ জানান, জেলা প্রশাসক থেকে একটি চিটি এসেছে । এই চিটিতে রাউজানের সব ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের রেজিষ্ট্রশন এবং প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র ঠিক আছে কিনা দেখতে বলেছে। রাউজান ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের ব্যাপারে তিনি বলেন, তদন্ত কমিটির ব্যাপারে এখনো চিটি পায়নি। চিটি পেলে তদন্ত করে দেখা হবে। তিনি বলেন, রাউজানে এতবেশি ডায়াগনিষ্টি সেন্টারের প্রয়োজন নেই, মান সম্মত উত্তরে দুইটি এবং দক্ষিনে দুইটি ডায়াগনিষ্টিক সেন্টার হলে যতেষ্ট। সরোজমিন পরিদর্শন কালে দেখা গেছে, রাউজান সদর ও নোয়াপাড়া এলাকায় ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে রোগ নিরুপনী প্রতিষ্ঠান ডায়াগনিষ্টিক সেন্টার। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এসব প্রতিষ্ঠান দেখলে সঠিক নিরুপনী কেন্দ্র মনে হলেও বাস্তবে মানুষের রক্ত চুষে খাচ্ছে। রোগের সঠিক রিপোর্ট দিতে বার বার ব্যর্থ হচ্ছে ডায়াগনিষ্টিক সেন্টার গুলো। যার কারণে বাড়ছে মৃত্যুর ঝৃঁকি। চলছে প্রতারনা। ডায়াগনিষ্টিক সেন্টার করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তর হতে রেজিষ্ট্রেশনসহ ছাড়পত্র নিতে হয়। অধিকাংশ ল্যাবের তা নেই। নেই সার্টিফিকেটধারী টেকনিশিয়ান। অজ্ঞ লোক দিয়ে চলছে যাবতীয় রক্ত নেয়া থেকে শুরু করে জটিল পরীক্ষা গুলোর কাজ। পরিবেশে অধিদপ্তরের নেই কোন ছাড়পত্র। ফায়ার সার্ভিস এর ছাড়পত্রও দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে এসব ডায়াগনিষ্টিক সেন্টারের নিয়োজিন কর্মচারীরা। ড্রাগ লাইন্সেন নেই বেশি ভাগ প্রতিষ্ঠানের। অভিযোগ রয়েছে, একাদিক প্রতিষ্ঠানে একই রোগ পরীক্ষা করে রিপোর্ট এসেছে ভিন্ন ভিন্ন। গত রবিবার জলিল নগর এন.ডি টাওয়ারস্থ রাউজান ডায়াগনিষ্টি সেন্টার নামে একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কুল প্রদীপ চাকমা বরাবরে লিখিত অভিযোগ দেয়ার পর ও বিভিন্ন পত্রিকায় নিউজ প্রকাশিত হলে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ঐ অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, পূর্ব রাউজান রশিদর পাড়া এলাকার প্রবাসী মোঃ জাফরের কন্যা রাউজান সুরেশ বিদ্যায়তনের ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ইয়াসমিন আকতার (১৭) এর পেটের ব্যথা অনুভব হলে তাকে অসুস্থ অবস্থায় রাউজান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায় । রাউজান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডাঃ জোবায়ের আহম্মদ প্রাথমিক চিকিৎসা করে তাকে আল্ট্রাসনোগ্রাফি সহ কয়েকটি পরিক্ষা করার জন্য বলে । চিকিৎসকের পরামর্শে স্কুল ছাত্রী ইয়াসমিন আকতারকে রাউজান জলিল নগরের রাউজান ডায়গনেষ্টিক সেন্টারে আল্ট্রাসনোগ্রাফি পরিক্ষা করা হয় । রাউজান ডাযাগনেষ্টিক সেন্টারের পরিক্ষায় তার এপেনটিসাইটিস পাওয়া যায়নি মর্মে রির্পোট প্রদান করেন । স্কুল ছাত্রী ইয়াসমিন আকতারের ব্যথা আরো বেড়ে গেলে তার স্বজনেরা ইয়াসমিন আকতারকে ডাঃ কামাল লোহানীর কাছে নিয়ে যায় । ডাঃ কামাল লোহানীর পরামর্শে রাউজান জলিল নগর বাস ষ্টেশনের সুপার ল্যাব ডায়াগনেষ্টিক সেন্টারে আবারো আল্ট্রাসনোগ্রাফি পরিক্ষা করতে বলে। ঐ খানে পরিক্ষা করার পর স্কুল ছাত্রী ইয়াসমিন আকতারের এপেনটিসাইটিস রোগ ধরা পড়ে । পরে তার অবস্থা অবনতির দিকে গেলে স্বজনেরা ইয়াসমিনকে হাটহাজারীর আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ হাসান ইয়াসমিনকে দেখে আবারো এপেনটিসাইটিস রোগ হয়েছে কিনা নিশ্চিত হওয়ার জন্য চট্টগ্রাম নগরীর মেট্রো ডায়াগনেষ্টিক সেন্টারে আল্ট্রাসনোগ্রাফি পরিক্ষা করার নির্দেশ দেয় । এই খানেও এপেনটিসাইটিস রোগে আক্রান্ত হয়েছে বলে রিপোর্ট দেওয়ার পর স্কুল ছাত্রী ইয়াসমিনকে নগরীর পাচঁলাইশ নিরাময় ক্লিনিকে অপারেশন করা হয়। ইয়ামিনের অভিবাবকের অভিযোগ রাউজান ডায়গনেষ্টিক সেন্টারের আল্ট্রাসনোগ্রাফি পরিক্ষায় ভুল রিপোর্ট দেওয়ার কারনে স্কুল ছাত্রী ইয়াসমিন আকতার মৃত্যুর ঝুঁকিতে ছিল। সেই জন্য নির্বাহী কর্মকর্তার হস্তক্ষেপ কামনা করে অভিযোগ দিয়েছি। এ প্রসঙ্গে উপজেলা নিবাহী কর্মকর্তা কুল প্রদীপ চাকমা জানান, অভিযোগটি তদন্ত করে দেখা হবে। এই প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে ভুল রিপোর্ট দেয়ার অভিযোগ করেছেন পৌর এলাকার প্রীতি রানী নামে এক মহিলা ও নুরুল আলম নুরু নামে এক ব্যবসায়ী। তারা জানান, অসুস্থার কারণে ঠিক সময়ে কাউকে অভিযোগ করতে পারি নাই। তারা মান সম্মত ডায়াগনিষ্টিক সেন্টার রেখে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠা ভূয়া সব প্রতিষ্ঠানকে করে বন্ধ করে দেয়ার জন্য অনুরোধ জানান সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে।