রাজপথে শক্তি প্রদর্শন করতে চায় বিএনপি

0
91

আজ ও আগামীকাল জেলা এবং মহানগরের কর্মসূচির মাধ্যমে সেই রাজনীতিরই সূচনা করছে দলটি। সম্প্রতি ঘোষিত ৭ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বিএনপি এ কর্মসূচি ঘোষণা করে। কর্মসূচিতে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে কাজ করছেন নেতারা। এত দিন দলটির বিরুদ্ধে মাঠে নামার অনীহা বা শক্তি সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও হাইকমান্ড অপেক্ষা করছিলেন উপযুক্ত সময়ের। একাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্বাচনের পরিবেশ আদায়ের লক্ষ্যে সামনের দিনগুলোকেই আন্দোলনের মোক্ষম সময় বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা। তাই চলতি সপ্তাহের কর্মসূচির পর ধাপে ধাপে আরো কঠোর কর্মসূচি দিকেই হাঁটছে বিএনপি। দলটির নেতাদের কথায় এমনই আভাস পাওয়া যায়।

সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারি মাসের ৮ তারিখে দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গ্রেফতার হলেও তার মুক্তির আন্দোলনে কঠোর কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়নি। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের কথা বলে দলটি এত দিন খালেদার মুক্তির দাবিতে কোনো আগ্রাসী কর্মসূচি দেয়নি।

অল্প কয়েকটি মানববন্ধন ও প্রতীকী অনশন বাদ দিলে সেসব কর্মসূচি দিয়ে তেমন কোনো সুবিধা করতে পারেনি বিএনপি। যদিও রাজনৈতিক মহলের ধারণা ছিল চেয়ারপারসনের মুক্তি বিষয়টি বিএনপির জন্য স্পর্শকাতর বিষয়। তাই এ ইস্যুতে তুমুল আন্দোলন গড়ে তুলতে পারে দলটি। সরকারি দল থেকে আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারার জন্য সমালোচনা শুনতে হয় বিএনপিকে। তারপরও গত ৬-৭ মাসে কঠোর কর্মসূচিতে যায়নি বিএনপি। নির্বাচনের আগের তিন মাস সময়কে সামনে রেখে আটঘাট বেঁধেই রাজপথে থাকতে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন।

এদিকে দীর্ঘ ১ বছর পর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করে উজ্জীবিত বিএনপি। রোববারের এ সমাবেশ থেকে দলের সাত দফা দাবি ঘোষণা করা হয়েছে। এ সাত দফা দাবি আদায়ে দুই দিনের কর্মসূচিও দেওয়া হয়। কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ সব জেলা শহরে সমাবেশ ও জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেয়া হবে। আগামীকাল বিভাগীয় শহরে সমাবেশ ও বিভাগীয় কমিশনার বরাবর স্মারকলিপির কর্মসূচি পালন করা হবে। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, অক্টোবরে ধাপে ধাপে আরো কর্মসূচি আসবে। ঐক্য প্রক্রিয়ার অগ্রগতি দেখেই পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করতে চায় দলটি। আপাতত দলগত একক কর্মসূচি দেয়া হলেও সামনে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য হলে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচিও আসতে পারে। তবে বিএনপির মধ্যম সারির এক নেতা জানান, আগামী ১০ অক্টোবর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় হওয়ার কথা রয়েছে। সেই রায় দেখে বিএনপি অবরোধ ও হরতালের মতো কঠোর কর্মসূচিতেও যেতে পারে।

এ বিষয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসিচব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, সরকার জোর করে আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে সাজা দেওয়ার জন্য সব রকম কাজই করেছে। মুফতি হান্নানকে ২০০ দিন রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি আদায় করেছে, যদিও সেই মুফতি হান্নান নির্যাতন করে আদায় করা জবাববন্দি বাতিলেরও আবেদন করেছে। সঠিক বিচার হলে কিছুই হবে না। কিন্তু কথা হচ্ছে সরকারি দলের নেতাদের ভাষা দেখলে বুঝা যায় রায়টা তারাই নির্ধারণ করে দিচ্ছে। রায়ে উল্টাপাল্টা কিছু হলে বিএনপি অবশ্যই রাজপথে এর কঠোর জবাব দেবে। আর ঘরে বসে থাকবে না।

জাতীয় ঐক্যের ব্যানারে নিবার্চনকালীন সরকারের রূপরেখা প্রদান এবং পরবর্তী আন্দোলন ও নির্বাচন একসঙ্গে যেতে আগ্রহী বিএনপি। কিন্তু নিজ দলের পাশাপাশি ২০ দলীয় জোটের আপত্তি এবং ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত দলগুলোর দেয়া বিভিন্ন শর্তের কারণে শেষ পর্যন্ত জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় বেশ অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। তাই চলতি সপ্তাহ পর্যন্ত এই ঐক্য প্রক্রিয়ার ভবিষ্যৎ দেখবে বিএনপি। শেষ পর্যন্ত প্রত্যাশিত ঐক্য না হলে তারা বসে থাকবে না। একাই আন্দোলনের মাঠে নামবে।

বিএনপি দীর্ঘদিন থেকেই জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে একটি অবস্থান তৈরির চেষ্টা করছে। এ লক্ষ্যে তৎপরতা এগিয়েছেও অনেক দূর। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত নেতারা একের পর শর্তজুড়ে দিয়ে সন্দেহ বাড়াচ্ছেন। অন্যদিকে নামসর্বস্ব দলগুলো অতিরিক্ত প্রাধান্য দেয়ায় দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ব্যাপক ক্ষুব্ধ। পাশাপাশি ২০ দলীয় জোটের শরিক দু-একটি দল এই প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। সঙ্গতকারণে শেষ পর্যন্ত ঐক্য প্রক্রিয়া আলোর মুখ দেখবে কিনাÑ সেটা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। আগামী ৫ অক্টোবর ড. কামাল হোসেন দেশে ফেরার পর ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন বিএনপি নেতারা। কারা বৃহৎ ঐক্য গঠনে বড় বাধা এবং কেনÑ সেটাও উপস্থাপন করা হবে। এরপর আলোচনা করে জাতীয় ঐক্য বাস্তবায়নের জন্য সর্বশেষ চেষ্টা চালাবে বিএনপি। সম্ভব না হলে এককভাবেই আন্দোলন করে দাবি আদায়ের চেষ্টা করা হবে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এ ব্যাপারে আলোচনা চলছে। আরো আলোচনা হবে। ড. কামাল হোসেন দেশে ফেরার পরও আলোচনা হবে। সবার মতামত ও আলোচনার ভিত্তিতেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে। জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, সেটা বাস্তবায়নও হবে; এ আশা সবার। এরপরও এর ব্যতিক্রম হলে বিএনপি নিজের মতো পথ চলবে।

সূত্র মতে, এককভাবে আন্দোলন করে দাবি আদায়ের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য তৃণমূল থেকে শুরু করে সর্বস্তরে বার্তা দেয়া হয়েছে। প্রস্তুতিও সন্তোষজনকভাবে এগোচ্ছে। তবে অহিংস আন্দোলনের বাইরে এবার যেত চায় না বিএনপির হাইকমান্ড। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করতে চায় তারা। আন্দোলনের প্রস্তুতির সাংগঠনিক বিষয়ে নানাভাবে তদারকি করছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে, রোববারের জনসভা সফল হওয়ায় বিএনপি নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত। মাত্র ২৪ ঘণ্টার নোটিশে এত বড় জনসভা করতে পারায় নেতাকর্মীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। জাতীয় ঐক্যের জন্য নামসর্বস্ব নেতাদের কাছে ধরনা না দিয়ে নিজেরাই এগিয়ে যাওয়ার দাবি উঠেছে তৃণমূল থেকে। তা না হলে যারা ঐক্য প্রক্রিয়া প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে তাদের বাদ দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার দাবিও রয়েছে বিএনপিতে।