রিসাংঝর্নার শিরশির ছন্দ পর্যটকদের মন মাতায়

0
262

রিসাং ঝরণাখাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলা থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার পূর্ব দিকে ঢাকা-মাটিরাঙ্গা-খাগড়াছড়ি মূল সড়কের পাশে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত রিসাংঝর্নার শিরশির ছন্দে হিম শীতল বহমান স্বচ্ছ পানির আওয়াজ পর্যটকদের মন আকর্ষণ করে। আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত রিসাং ঝর্না । মূল সড়ক থেকে নেমে খানিকটা উত্তরে গেলেই শোনা যায় ঝর্নার পানির শব্দ।

ঝর্ণার সমগ্র যাত্রা পথটাই দারুণ রোমাঞ্চ কর ।যাত্রাপথে দূরের উঁচু-নীচু সবুজ পাহাড়,বুনোঝোঁপ,নামহীন রঙ্গীন বুনোফুলের নয়নাভিরাম অফুরন্ত সৌন্দর্য্য যে কাউকে এক কল্পনার রাজ্যে নিয়ে যায় । ঝর্ণার কাছে গেলে এক পবিত্র স্নিগ্ধতায় দেহ মন ভরে উঠে । ২৫-৩০ হাত উঁচু পাহাড় থেকে আছড়ে পড়ছে ঝর্ণার জলরাশি, ঢালুপাহাড় গড়িয়ে নীচে মেমে যাচ্ছে এই প্রবাহ। কাছাকাছি দুটো ঝর্ণা রয়েছে এ স্থানে, প্রতিদিন বহু সংখ্যক পর্যটক এখানে এসে ভীড় জমান এবং ঝর্ণার শীতল পানিতে গাভিজিয়ে প্রকৃতির সাথে একাত্মহন। মারমা ভাষায় এর নাম রিছাং ঝর্ণা, ‘রি’ শব্দের অর্থ পানি আর ‘ছাং’ শব্দের অর্থ গড়িয়ে পড়া। মূল সড়ক হতে রিছাং ঝর্ণায় যাওয়ার পথে চারিদিকের পাহাড়ী প্রকৃতি মনের মাঝে এক অনুপম অনুভূতির সৃষ্টি করে। ইচ্ছে করে প্রকৃতির মাঝেই কাটিয়ে দিই সারাক্ষণ। ঝর্ণা ছেড়ে মন চায়না ফিরে আসতে কোলাহল মূখর জনারণ্যে । এখানে পাশাপাশি দুটি ঝর্নার মধ্যে পর্যটকদের সুবিধার জন্য একটি ঝর্নায় যাওয়ার জন্য পাকা সিঁড়িতৈ রিকরা হয়েছে। আর প্রথম এই ঝর্নাটি থেকে আর ও প্রায় ২০০ গজ ভেতরে গেলে দেখা মেলে দ্বিতীয় ঝর্নাটির । খাগড়াছড়ি জেলা শহর এবং মাটিরাঙ্গা উপজেলা পরিষদ থেকে রিসাং ঝর্নার এই স্থানটির দূরত্ব মাত্র ১১ ও ১০ কিলোমিটার । তবে একেবারে ঝর্নার উত্ সমুখে যাওয়ার জন্য স্রেফ গাড়িতে বসে থাকলে চলবে না। বরংঅল্প বিস্তর পথ পায়ে হেঁটেও চলতে হবে ।

রিসাং ঝর্নায় যেতে চাইলে খাগড়াছড়ি শহর কিংবা মাটিরাঙ্গা থেকে সকাল সকাল বাস বা চাঁদের গাড়িতে চড়ে বেরিয়ে পড়াই ভালো । ঢাকার দিককার রাস্তায় দশ কিলোমিটার পথ এভাবে এসে আলুটিলার গুহা পার হলেই মূল রাস্তা থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার ভেতরে রিসাং। রিসাং ঝর্নার সৌন্দর্যের পাশাপাশি পাহাড়ি পথে দুই কিলোমিটার হাঁটা টাও কম মোহনীয় নয়। তাই একদিকে সবুজ পাহাড়ও পাহাড়ী মানুষের জীবন ধারা আর অন্যদিকে হাজার ফুট নিচের উপত্যকার সৌন্দর্য দেখতে দেখতে এই পথ টুকু খুব সহজেই হেঁটে যাওয়া যায় । রিসাং এর মূল প্রাকৃতিক ঝর্নাটি প্রায় ১০০ ফুট উঁচু থেকে নিচে আছড়ে পড়ছে । আর এক বার জলের ধারা নিচে পড়ার পর তা আর ও প্রায় ১০০ ফুট পাথরেরও পর গড়ি য়ে নেমে এসেছে সমতলে । মূলত ঝর্নাটির বিশেষ এই বৈশিষ্ট্যটির কারণেই অনেকে ঢালু এই পথে পিছল খেয়ে পড়ার মতো করে প্রাকৃতিক ওয়াটার স্লাইডিং করতে ভালোবাসেন । যদিও পাথুরে স্লাইড বলে পিছল খেয়ে নামার জন্য মোটা কাপড় বা ছালার মতো কোনো সামগ্রী ব্যবহার করাই বুদ্ধিমানের কাজ । এ ছাড়া রিসাং ঝর্নার পাদদেশে যেখান থেকে ঝর্নার পানি সমতলের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে সেখানে চাইলে সাঁতার কাটা বা গোসল করার সুবিধাও আছে। কিভাবে যাওয়া যায়: মহাসড়ক হতে হেরিংবোন রাস্তায় জীপ, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস বা পায়ে হেঁটে যাতায়াত করা যায়।