লা লিগা নয়, এটা যেন মেসি লিগা

0
88

লিওনেল মেসি সব সময়ই বার্সেলোনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। তবে ২০১৭-১৮ মৌসুমে কাতালানদের হয়ে মেসির প্রভাবটা আগের যেকোনো মৌসুমের চেয়ে যেন একটুু বেশিই। বিশেষ করে লা লিগায়।

পাঁচবারের ফিফা বর্ষসেরা খেলোয়াড় মেসির হ্যাটট্রিকে রোববার দেপোর্তিভো লা করুনাকে ৪-২ গোলে হারিয়ে লা লিগা শিরোপা পুনরুদ্ধার করেছে বার্সেলোনা। কাতালান ক্লাবটি চার ম্যাচ বাকি থাকতেই জিতেছে নিজেদের ২৫তম লিগ শিরোপা। পুরো মৌসুমে অপরাজিত থাকারও পথেই রয়েছে আর্নেস্তো ভালভার্দের দল।

মেসিকে ছাড়া এসবের কিছুই সম্ভব হতো না! গ্রীষ্মের ট্রান্সফার উইন্ডোতে বার্সেলোনা ছেড়ে গিয়েছিলেন ব্রাজিলিয়ান তারকা নেইমার। আগস্টে স্প্যানিশ সুপার কাপের দুই লেগে রিয়াল মাদ্রিদের কাছে হেরেছিল বার্সা। এর একটি ৩-১ গোলে, অপরটি ২-০ গোলে।

প্রাক-মৌসুমে বার্সা খেলেছিল ৪-৩-৩ ফর্মেশনে। তখন নেইমার খেলেছেন বাম উইংয়ে, লুইস সুয়ারেজ ডানে, মেসি মাঝে। কিন্তু নেইমার রেকর্ড ২২২ মিলিয়ন ইউরোতে পিএসজিতে যাওয়ার পর বার্সা কোচ ভালভার্দে চলে যান ৪-৪-২ ফর্মেশনে, যা শক্তি বাড়ায় বার্সার মিডফিল্ডে, আরো অভেদ্য হয় রক্ষণ। কিন্তু দুর্বল হয়ে পড়ে আক্রমণভাগ।

মৌসুমের শুরুর দিকে চোটের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে সুয়ারেজকে। পাশাপাশি নেইমার চলে যাওয়ায় তাকে পালন করতে হয়েছে নতুন ভূমিকাও। সব মিলিয়ে মেসি হয়ে পড়েন অনেকটাই একা। বেশিরভাগ ম্যাচে সেন্ট্রাল মিডফিল্ড পজিশনে খেলেও আর্জেন্টাইন তারকা এই মৌসুমে বার্সার সর্বোচ্চ গোলদাতা। রোববারের হ্যাটট্রিকসহ লা লিগায় মেসির গোল এখন ৩২টি, অ্যাসিস্ট করেছেন ১২টি। যদিও সংখ্যাগুলো পুরো গল্প বলছে না।

এই মৌসুমে লা লিগায় মেসি তার সতীর্থদের জন্য গোলের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন ৭৮ বার, ড্রিবলিং করেছেন ৮৪টি, অন-টার্গেটে শট নিয়েছেন ৮৬টি, যার ১৪টি বারে লেগেছে।

প্রতিপক্ষের খেলোয়াড় দ্বারা মেসি ফাউলের শিকার হয়েছেন ৭৩ বার, বেশিরভাগই বিপজ্জনক জায়গায়। যেখান থেকে তিনি গোল করতে সক্ষম। মেসির ৩২ গোলের মাত্র দুটি এসেছে পেনাল্টি থেকে।

যখন বার্সার গোল দরকার হয়েছে, মেসি গোল করেছেন। যখন প্রতিপক্ষের রক্ষণ কঠিন হয়ে উঠেছে, তিনি তা ভেদ করেছেন।

মৌসুমের শুরুর দিকে সুয়ারেজ যখন চোটে পড়েছিলেন, মেসি আলাভেসের বিপক্ষে করেছিলেন জোড়া গোল, এসপানিওলের বিপক্ষে তিনটি, এইবারের বিপক্ষে হ্যাটট্রিকসহ করেন চার গোল।

নভেম্বরে বার্সার অপরাজিত যাত্রা হুমকির মুখে পড়েছিল দারুণ ফর্মে থাকা ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে। সেদিন মেসির একটি গোল লাইন পেরিয়ে যাওয়ার পরও দেওয়া হয়নি। কিন্তু শেষ মুহূর্তে মেসির বাড়ানো বল থেকেই দলকে সমতায় ফেরান জরদি আলবা।

এপ্রিলের শুরুর দিকে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে পার্থক্য গড়ে দেন মেসিই। বার্সার ১-০ গোলে জয়ে মেসি একমাত্র গোলটা করেন অসাধারণ এক ফ্রি-কিকে। এই মৌসুমে লা লিগায় মেসি ফ্রি-কিকে যে ছয়টি গোল করেছেন, সেটি ছিল তার একটি। ‘মেসি যদি আমাদের দলের হয়ে খেলত, আমরাই জিততাম’- ম্যাচ শেষে বলেছিলেন অ্যাটলেটিকোর কোচ দিয়েগো সিমিওনে।

সেভিয়ার মাঠে বার্সার অপরাজিত যাত্রা তো প্রায় থেমেই যাচ্ছিল। ম্যাচের ৮৭ মিনিট পর্যন্তও ২-০ গোলে পিছিয়ে ছিল বার্সা। বদলি হিসেবে নেমে বার্সাকে বাঁচান মেসিই। অথচ সেই ম্যাচের আগেও হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট থেকে পুরোপুরি সেরে ওঠেননি মেসি। যে চোটের কারণে আন্তর্জাতিক বিরতিতে আর্জেন্টিনার দুটি প্রীতি ম্যাচে খেলতে পারেননি। ৮৮ মিনিটে সুয়ারেজের গোলের পর ৮৯ মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে থেকে বুলেট গতির শটে গোল করে বার্সাকে ২-২ গোলের ড্র এনে দেন মেসি।

বার্সেলোনা পুরো মৌসুমে অপরাজিত থাকতে পারবে কি না, সেটা সময়ই বলে দেবে। তবে এখন পর্যন্ত যা অর্জন হয়েছে, এর মূল কারিগর মেসিই। আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড আগের মৌসুমে এবারের চেয়েও বেশি গোল করেছিলেন। কিন্তু এই মৌসুমের মতো মাঠে এত প্রভাব আগে কখনো বিস্তার করেননি!

লা লিগা নয়, এটা যেন মেসি লিগা!