লিখিত জবাব দিতে হবে অনিয়মে জড়িত ৪৬ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে

0
70

 
শিক্ষার্থী ভর্তিতে অতিরিক্ত ও ইচ্ছে মতো বেতন-ফি আদায় করাসহ সরকারি নীতিমালা লঙ্ঘন ও বিভিন্ন অনিয়মে জড়িত নগরীর ৪৬টি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। এরই মধ্যে নীতিমালা লঙ্ঘন ও অনিয়মের বিষয়ে চিহ্নিত এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে লিখিত ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। আর আগামীকাল (বুধবার) বেলা সাড়ে তিনটায় এই ৪৬ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক ডেকেছে জেলা প্রশাসন। নীতিমালা লঙ্ঘন ও অনিয়মের বিষয়ে বৈঠকে এসব প্রতিষ্ঠানকে লিখিত জবাব দিতে হবে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. হাবিবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ডাকা ওই বৈঠকে জেলা প্রশাসক মো. সামসুল আরেফিনের সভাপতিত্ব করার কথা রয়েছে বলেও জানান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক। এছাড়া মাউশি’র আঞ্চলিক উপ-পরিচালক, শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তা ও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাও বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন বলে জানান তিনি।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়- শিক্ষার্থী ভর্তি, বেতন-ফি আদায় ও ছাড়পত্র প্রদানে সরকারি নীতিমালা লঙ্ঘনসহ বিভিন্ন অনিয়মে জড়িত ৪৬ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকায় নগরীর পাঁচলাইশ ও ডবলমুরিং শিক্ষা থানার ১১টি, পাহাড়তলী থানায় ৬টি, কোতোয়ালি থানায় ৮টি, চান্দগাঁও থানায় ১০টি এবং বায়েজিদ, বন্দর ও পতেঙ্গা শিক্ষা থানায় ১১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

তালিকায় থাকা ৪৬ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: পাঁচলাইশ ও ডবলমুরিং শিক্ষা থানার তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- হাতে খড়ি স্কুল এন্ড কলেজ, আগ্রাবাদ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সিলভার বেলস গার্লস হাই স্কুল, বাংলাদেশ এলিমেন্টরি স্কুল, অংকুর সোসাইটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সারাদিনের স্কুল এন্ড কলেজ, আগ্রাবাদ সরকারি কলোনী উচ্চ বিদ্যালয়, টিকেট প্রিন্টিং প্রেস কলোনী উচ্চ বিদ্যালয়, ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, রেডিয়েন্ট স্কুল এন্ড কলেজ এবং চিটাগং পুলিশ ইনস্টিটিউশন। পাহাড়তলী থানাধীন ৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে- পাহাড়তলী গার্লস হাই স্কুল, হালিশহর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, হাউজিং এন্ড সেটেলমেন্ট পাবলিক স্কুল, শহীদ লে. জি এম মুশফিক বীর উত্তম উচ্চ বিদ্যালয় ও ইস্পাহানি আদর্শ হাই স্কুল। কোতোয়ালি থানাধীন ৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে- সাউথ এশিয়ান স্কুল, চট্টগ্রাম ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজ (চকবাজার), বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা স্কুল এন্ড কলেজ, রেলওয়ে পাবলিক হাই স্কুল, চিটাগাং আইডিয়াল হাই স্কুল (জামালখান), কাজেম আলী স্কুল এন্ড কলেজ, চিটাগাং গ্রামার স্কুল ও ন্যাশনাল ইংলিশ স্কুল। চান্দগাঁও থানার ১০টি প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- মির্জা আহমেদ ইস্পাহানি স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়, সিডিএ গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ, মেরন সান স্কুল এন্ড কলেজ, সিডিএ পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, মেরিট বাংলাদেশ স্কুল এন্ড কলেজ, চট্টগ্রাম রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ, চিটাগাং ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, কর্ণফুলী পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, ওয়াইডব্লিউ সিএ প্রাইমারি স্কুল এবং ন্যাশনাল পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ। এছাড়া বায়েজিদ, বন্দর ও পতেঙ্গা (তিন থানা) থানাধীন মোট ১১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে- চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ, চিটাগাং ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল, সারমন স্কুল এন্ড কলেজ, বেপজা স্কুল এন্ড কলেজ, বিএএফ শাহীন কলেজ, চট্টগ্রাম এয়ারপোর্ট উচ্চ বিদ্যালয়, নিমতলা উচ্চ বিদ্যালয়, হালিশহর মেহের আফজল উচ্চ বিদ্যালয়, টিএসপি কমপ্লেক্স মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বাংলাদেশ নৌবাহিনী স্কুল এন্ড কলেজ এবং ইস্টার্ণ রিফাইনারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়।

এদিকে, বুধবারের বৈঠকের পর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ সম্বলিত এসব প্রতিষ্ঠানের তালিকা পাঠানো হবে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। এছাড়া প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাউশি (মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা) ও চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডেও এ তালিকা পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. হাবিবুর রহমান।

প্রসঙ্গত, ভর্তি, ছাড়পত্র ও বেতন-ফি’র ক্ষেত্রে ইচ্ছেমতো আদায়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে মহানগরীর বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তদারকিতে ৫টি টিম গঠন করে জেলা প্রশাসন। একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে প্রতিটি টিমে ছয়জন করে সদস্য রাখা হয়। টিমগুলো গত ১৯ জানুয়ারি থেকে ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত নগরীর ৫টি শিক্ষা থানার (কোতোয়ালী, পাঁচলাইশ, চান্দগাঁও, পাহাড়তলী ও বায়েজিদ-বন্দর-পতেঙ্গা) শতাধিক বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভর্তি ও বেতন-ফি আদায়সহ সংশ্লিষ্ট সব তথ্য সংগ্রহ করে। তথ্য সংগ্রহ শেষে টিমগুলো ৩০ জানুয়ারি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (শিক্ষা ও আইসিটি) কাছে তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। আর প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে ওই দিন (৩০ জানুয়ারি) বিকেলেই বৈঠকে বসে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক মো. সামসুল আরেফিনের সভাপতিত্বে বৈঠকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. হাবিবুর রহমান ও তদারকি টিমে নেতৃত্ব দেয়া ৫ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত ছিলেন। জেলা প্রশাসনের এই পাঁচ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হলেন- তাহমিলুর রহমান মুক্ত, শারমিন আক্তার, সাব্বির রহমান সানি, তৌহিদুল ইসলাম ও শেখ নুরুল আলম।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়- নীতিমালা লঙ্ঘনসহ বিভিন্ন অনিয়মের সাথে জড়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহনের সুপারিশ করে প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা দুদক সহ সংশ্লিষ্ট সব দফতরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বৈঠকে। তবে এর আগে চিহ্নিত প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে এ বিষয়ে লিখিত ব্যাখ্যা চাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় জেলা প্রশাসন। এর প্রেক্ষিতে আগামীকাল এই বৈঠক ডাকা হয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

দুদক ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি মাউশি (মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা) এবং চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে এ তালিকা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয় জানিয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. সামসুল আরেফিন বলেন, শিক্ষার্থী ভর্তিতে নীতিমালা লঙ্ঘন করলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের এমপিও বাতিলসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা নীতিমালায় বলা আছে। আমাদের পক্ষ থেকে যতটুকু ব্যবস্থা নেয়া যায় আমরা সেটুকু ব্যবস্থা নিবো। বাকিটা সংশ্লিষ্ট দফতর নিবে। বুধবারের বৈঠকের পর তালিকাগুলো সংশ্লিষ্ট সব দফতরে পাঠিয়ে দেয়া হবে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।