লিচু গাছেই শোভা পাচ্ছে থোকা থোকা মুকুল

0
111

লিচু গাছেই শোভা পাচ্ছে থোকা থোকা মুকুলউত্তরের শহর দিনাজপুর লিচুর জেলা হিসেবে সারা দেশে পরিচিত। জেলার ১৩টি উপজেলাতেই লিচু চাষ বাড়ছে। প্রতি বছরের মতো এবারও দিনাজপুরে মধুমাসের ফল লিচুর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। প্রতিটি লিচু গাছেই শোভা পাচ্ছে থোকা থোকা মুকুল। দিনাজপুর হর্টিকালচার বিভাগের উপপরিচালক মোকলেসুর রহমান জানান, প্রতি বছর দিনাজপুরের লিচু দেশের বিভিন্ন জেলাসহ তৃণমূল পর্যায়ে সরবরাহ হয়ে থাকে। তিনি বলেন, লিচু লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছর লিচু চাষ বেড়েই চলছে। অনুকূল আবহাওয়া ও কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবারও জেলায় রেকর্ড পরিমাণ বাম্পার লিচুর ফলন হবে। এ পর্যন্ত বিভিন্ন লিচু বাগানে ও বসতবাড়িতে লিচু গাছের মুকুল থেকে লিচুর গুটি ভালো রয়েছে। ভালো ফলনের আশায় লিচু চাষিরা পুরো দমে পরিচর্যা চালিয়ে যাচ্ছেন। চাষিদের সহযোগিতা করতে কৃষি অধিদফতর এবং হর্টিকালচার বিভাগ তাদের অব্যাহত পরামর্শ ও সহযোগিতা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক আনোয়ারুল আলম জানান, ২০০৯ সালে জেলায় লিচু চাষের জমির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৫০০ হেক্টর। ২০১০ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৭৮০ হেক্টরে, ২০১১ সালে ১ হাজার ৯৫৬, ২০১২ সালে ২ হাজার ৫০০ এবং ২০১৩ সালে ২ হাজার ৭০০ হেক্টরে। চলতি বছর ২০১৪ সালে লিচু চাষের জন্য জমির পরিমাণ প্রায় ৩ হাজার ২০০ হেক্টরে দাঁড়িয়েছে। এ বছর দিনাজপুরে ৩ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। দিনাজপুরের সুস্বাদু লিচুর মধ্যে চায়না থ্রি, চায়না ফোর, বেদেনা, বোম্বাই ও মাদ্রাজি উল্লেখযোগ্য। আবহাওয়া অনুকূলে থাকার কারণে এবার বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সদর উপজেলার আউলিয়াপুর, মাসিমপুর, পুলহাট, সিকদারগঞ্জ, মহব্বতপুর, উলিপুর, খানপুর এলাকায় ঐতিহ্যবাহী বেদানার লিচু চাষ উল্লেখযোগ্য। এ এলাকার মাটির কারণেই উৎপাদিত বেদানা লিচু সুস্বাদু এবং উন্নত মানের হয়ে থাকে। অন্য এলাকার বেদানা লিচুর চেয়ে এসব এলাকার বেদানা লিচু সবার কাছে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। হাইব্রিড জাতের লিচু চায়না টু, চায়না থ্রি, চায়না ফোর সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম, বিরল, বোচাগঞ্জ, বীরগঞ্জ, চিরিরবন্দর, পার্বতীপুর, ফুলবাড়ীসহ ১৩টি উপজেলাতেই ব্যাপক হারে বাগান গড়ে উঠেছে। দিনাজপুর সদর উপজেলার উলিপুর গ্রামের আদর্শ লিচু চাষি রমজান আলী জানান, লিচুর ফুল আসা শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে পরিচর্যা শুরু করতে হয়। সে অনুযায়ী লিচু গাছে নিয়মিত স্প্রে ও সেচ দেয়া শুরু হয়েছে। লিচু গাছগুলোতে ফুল আসার সঙ্গে সঙ্গে রাজশাহী, রংপুর, চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার লিচু ব্যবসায়ীরা আসতে শুরু করেছেন। তারা আগাম লিচু বাগান কিনে নিচ্ছেন। রমজান আলীর তিন একর জমিতে দুটি লিচু বাগান রয়েছে। ২৯৫টি লিচু গাছের মধ্যে ৮২টি রয়েছে বেদানা লিচুর গাছ এবং দেশি ও হাইব্রিড জাতের চায়না থ্রির গাছ রয়েছে ২১৩টি। এ দুটি বাগান তিনি এক বছরের জন্য সাড়ে পাঁচ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন।

বিরল উপজেলার মাধববাটী গ্রামের লিচু বাগানের মালিক রামকৃষ্ণ রায় জানান, এবার যে পরিমাণ ফুল আসতে শুরু করেছে, তাতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বাম্পার লিচুর ফলন হবে। তার দেড় একর জমিতে চায়না থ্রি লিচু বাগান রয়েছে। বাগানে গাছ রয়েছে ১৫২টি। এ বছর কিশোরগঞ্জ জেলার ব্যবসায়ী ফজল হক ২ লাখ টাকায় তার বাগান কিনে নিয়েছেন। দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা সাফয়েত হোসেন জানান, লিচু চাষে ব্যঘাত না ঘটে, সেজন্য কৃষি কর্মকর্তারা চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছেন।