লেয়ার ও বয়লার মুরগির বিকল্প টার্কি

0
147

লেয়ার ও বয়লার মুরগি পালনের বিকল্প হিসেবে টার্কি মুরগি পালন করে লাভবান হচ্ছেন স্থানীয় খামারিরা। যেখানে লেয়ার বা বয়লার মুরগিকে ফিড খাওয়ানোর ক্ষেত্রে একজন পোল্ট্রি খামারিকে হিমশিম খেতে হয়। সেখানে ফিডের পরিবর্তে সবুজ ঘাস শাকসবজি, লতাপাতা হচ্ছে টার্কির জন্য উত্তম খাবার।বিবার্তার জয়পুরহাট প্রতিনিধি এসব তথ্য জানান।

 

জানা গেছে, জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার পশ্চিম ধুরইল গ্রামে ১০টি পরিবারে এখন পালিত হচ্ছে টার্কি। এ গ্রামের টার্কির খামার দেখে উৎসাহিত হচ্ছেন প্রতিবেশীরা। পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের প্রাণিসম্পদ ইউনিটের আর্থিক সহযোগিতায় স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জাকস ফাউন্ডেশনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এ টার্কি পালন ও সমপ্রসারণের কাজ চলছে।

খুলনা এলাকা থেকে টার্কির বাচ্চা সংগ্রহ করে তা মাচা ও লিটার পদ্ধতিতে সমপ্রসারণের কাজ হাতে নিয়েছে জাকস ফাউন্ডেশন। এরই ধারাবাহিকতায় জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার ধুরইল গ্রামের দশ খামারিকে বিনামূল্যে ২০টি করে টার্কির বাচ্চা সরবরাহ করা হয়। গত ছয় মাস প্রতিপালনের পর এক একটি টার্কির ওজন হয়েছে ৬/৭ কেজি। এক বছর লালনপালন করলে এক একটি টার্কি মুরগির ওজন হবে ১২ থেকে ১৪ কেজি বলে জানান টার্কি চাষি সিরাজুল ইসলাম। এর উচ্চতাও সাধারণত তিন থেকে সাড়ে তিন ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। বছরে ডিম পারে ১৮০টির মতো। টার্কি দেখতেও বেশ চমৎকার। মোরগ টার্কিগুলো স্বভাবগতভাবে যখন ময়ুরের মতো পেখম তোলে তখন দৃষ্টি কাড়ে সকলের। লেয়ার ও ব্রয়লার মুরগির তুলনায় টার্কির রোগবালাই নেই বললেই চলে এবং লালন-পালনের খরচ অনেক কম বলে জানালেন খামারিরা।

 

টার্কি মুরগির খাবার খরচও কম। তাদের প্রিয় খাবারের মধ্যে রয়েছে নেপিয়ার ঘাস, কলমি শাক, বাঁধাকপিসহ সকল ধরনের সবুজ শাকসবজি ও লতাপাতা। সারাদিনে তাদের দেয়া হয় সামান্য পরিমাণ পোল্ট্রি ফিড। না দিলেও তেমন কোন ক্ষতি নেই।

 

টার্কি খামারি সিরাজুল ইসলাম, এনামুল হক ও আইয়ুব আলীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাধারণ মুরগির তুলনায় টার্কি মুরগি দ্রুত বাড়ে। তুলনামূলক ৫০টি বয়লার মুরগির খাবার ফিড দিয়ে এক হাজার টার্কি পালন করা সম্ভব বলে জানান খামারিরা। ফলে স্বল্প সময় ও কম খরচে মাংস ও ডিম উৎপাদন করে খামরিরা লাভবান হচ্ছেন। তাছাড়া মোরগ টার্কিগুলো ময়ুরের মতো পেখম তুলে ভাব প্রদর্শন করে যা অনেকের দৃষ্টি কাড়ে। অনেক দূর থেকে লোকজন দেখতে এসে অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করছেন টার্কি খামার গড়ে তোলার জন্য।

 

জাকস ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক (কৃষি) ওবায়দুল ইসলাম জানান, ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ টার্কির মাংসে কোলস্টেরলের পরিমাণ কম তবে গরুর মাংসের চেয়ে এতে বেশি প্রোটিন পাওয়া যায়। প্রতি কেজি টার্কির মাংস ৫০০ টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে বর্তমান বাজারে। দেশের অভিজাত রেস্টুরেন্টেও এর ব্যাপক চাহিদা থাকায় এটি সমপ্রসারণের কাজ চলছে।

 

পাঁচবিবি উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মামুনুর রশিদ বলেন, টার্কি সমপ্রসারণে সার্বিক সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে আসছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ। তিনি আরও বলেন, টার্কি মুরগি লালনপলন সহজ, লাভজনক এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ। ইতিমধ্যে ৫০০ টাকা কেজি দরে টার্কি মুরগি বেচাকেনা শুরু হয়েছে। টার্কি মুরগির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় টার্কি চাষ সমপ্রসারণে ১০টি টার্কির ডিম প্রদর্শনী খামার গড়ে তোলা হয়েছে। পাশাপাশি চার হাজার ডিম ফোটানোর ক্ষমতাসম্পন্ন একটি হ্যাচারি স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান জাকসের নির্বাহী পরিচালক নুরুল আমীন।