শিশু গৃহকর্মী নির্যাতনের মামলায় পলাতক জাতীয় দলের ক্রিকেটার শাহাদাত হোসেনের স্ত্রীর জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে আদালত।
পাশাপাশি পুলিশ জেসমিন আক্তার নিত্যকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে চাইলেও তাতে সাড়া দেননি ঢাকার মহানগর হাকিম ইউনূস খান।
আসামি নিত্যকে আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তিন কার্যদিবস কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন তিনি।
রোববার ভোররাতে নিত্যকে মালিবাগের একটি বাসা থেকে গ্রেপ্তারের পর শাহাদাতের স্ত্রী নিত্যকে সোমবার বিকালে আদালতে নিয়ে যায় পুলিশ।
আসামিকে পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর থানার ওসি শফিকুর রহমান।
আবেদনে বলা হয়েছিল, শাহাদাতকে গ্রেপ্তার এবং গৃহকর্মী নির্যাতনের বিষয়ে আরও জানার জন্য তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।
অন্যদিকে আসামির পক্ষে জামিন আবেদনের শুনানি করেন আইনজীবী কাজী নজিবুল্যা হিরু।
শুনানির এ পর্যায়ে তিনি নিত্যের নয় মাসের শিশুকন্যাকে দেখিয়ে বলেন, “এই যে শিশু নির্যাতন হয়েছে এটি আমরাও ঘৃণা করি, কিন্তু দুগ্ধপোষ্য এই শিশুকে মায়ের বুকের দুধ থেকে বঞ্চিত করা কোনো মানবিকতার মধ্যে পড়বে না।
“মামলার ভিক্টিম ওই ১১ বছরের গৃহপরিচারিকা আদালতে হাকিমের কাছে এর আগে জবানবন্দি দিয়েছেন। মামলার সমস্ত তথ্যই প্রকাশিত হয়েছে। আলাদা করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের কোনো তথ্যই আর অবশিষ্ট নেই। এই মামলায় এখনই অভিযোগপত্র দাখিল করতে পারে, তদন্তের আর বাকি কিছুই নেই। আমি বলছি, আগামীকালই শাহাদাতকে আমরা সারেন্ডার করিয়ে দেব।”
শিশু নির্যাতনের মামলার আসামি নিত্যকে রিমান্ডে নেওয়ার সমর্থনে বাদী পক্ষে বক্তব্য রাখেন ‘বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির’ আইনজীবী ফাহমিদা আক্তার রিংকি।
এছাড়া নির্যাতনের শিকার ওই গৃহকর্মীর পক্ষে শুনানিতে বক্তব্য রাখেন আরেকটি মানবাধিকার সংস্থার আ্ইনজীবী সৈয়দ নাজমুল হুদা।
গত ৬ সেপ্টেম্বর গৃহকর্মী হারিয়ে গেছে জানিয়ে শাহাদাত থানায় সাধারণ ডায়েরি করার কয়েক ঘণ্টা পর ওই শিশুকে পাওয়া যায়। নির্যাতনের এ মামলায় শাহাদাতও আসামি। তাকে এখনো খুঁজছে পুলিশ।
পুলিশের ভাষ্য, পল্লবীর সাংবাদিক কলোনি থেকে ১১ বছর বয়সী ওই শিশুকে পেয়ে তাকে থানায় নিয়ে যান খন্দকার মোজাম্মেলক হক নামের এক সাংবাদিক।
পরে শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে পাঠানো হয়। পরে সাংবাদিকদের কাছে শাহাদাতের বাসায় নির্যাতিত হওয়ার বিবরণ দেয় শিশুটি।
সাংবাদিক মোজাম্মেল এ ঘটনায় শাহাদাত ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করলে নিরুদ্দেশ হন জাতীয় দলের এই ক্রিকেটার ও তার স্ত্রী।
আগামী ১২ অক্টোবর এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।
নির্যাতনের যে বর্ণনা হ্যাপি আদালতের জবানবন্দিতে দিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, শাহাদাত রুটি বানানোর বেলন দিয়ে তাকে পিটিয়ে পরে আবার আঘাতের স্থানে বরফ লাগাতেন।
চোখের উপর অংশে বেশ কয়েকবার বেলন দিয়ে পেটানো হয়েছে বলেও আদালতকে জানিয়েছে মেয়েটি।
গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনায় শাহাদতকে জাতীয় দল থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড।