শিশুদের বিষয়ে রোজার বিধান

0
200

 

সিয়াম বা রোজা পালনে এক অদ্ভুৎ অনুভূতি অর্জন করে রোজাদারগণ। সাথে সাথে রোজা যাদের উপর ফরজ নয়- তেমন শিশুরাও অভিভাবকদের সাথে রোজা পালনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। বিষয়টি নিয়ে শরিয়তের বিধি-বিধান জানা প্রয়োজন মনে করে এখানে আমরা কিছু মাসআলা উল্লেখ করলাম।

প্রশ্ন : ভাল-মন্দ পার্থক্য করতে পারে এমন বাচ্চাদের রোজা রাখার নির্দেশ দেয়া হবে কি?

উত্তর : ছেলে হোক বা মেয়ে হোক ছোট্টমনিরা যখন সাত বছর অথবা তদোর্ধ বয়সে উপনীত হবে, তখন তাদেরকে অভ্যাস গড়ার জন্য রোজা পালনের নির্দেশ দেয়া হবে। এটা অভিভাবকদের দায়িত্ব, যেমন তাদের দায়িত্ব নামাজের নির্দেশ দেয়া। যখন তারা সাবালক হবে তখন তাদের ওপর রোজা ফরজ হবে।

সূত্র : শায়েখ আব্দুল্লাহ বিন বাজ রহ. (তুহফাতুল ইখওয়ান : পৃ. নাম্বার : ১৬০)

প্রশ্ন : পনের বছরের কম বয়সের বাচ্চাদের রোজা পালনের নির্দেশ দেয়া হবে কি? যেমন নামাজের ব্যাপারে তাদের নির্দেশ দেয়া হয়।

উত্তর : হ্যা, তারা যদি রোজা রাখার সামর্থ রাখে, তবে তাদেরকে রোজা রাখার নির্দেশ দেয়া হবে। সাহাবায়ে কেরাম রাদিআল্লাহ আনহুম নিজ সন্তানদের ব্যাপারে এরূপ করতেন। ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, অভ্যাস গড়া, এবাদতের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করা এবং ইসলামি বিধি নিষেধগুলো আত্মস্থ করার নিমিত্তে অভিভাবকদের উচিত বাচ্চাদের রোজা রাখার নির্দেশ দেয়া। তাদের পক্ষে যদি রোজা রাখা কষ্টকর বা ক্ষতিকর মনে হয়, তাহলে তাদেরকে রোজা রাখতে বাধ্য করবে না। আমি এখানে কতক অভিভাবককে একটি ব্যাপারে সতর্ক করা প্রয়োজন মনে করছি, যারা সাহাবায়ে কেরামের আমলের বিপরীতে নিজ বাচ্চাদের দয়া ও স্নেহ বশত রোজা রাখতে বারণ করেন। বাস্তবতা হল, বাচ্চাদের সঙ্গে দয়া ও রহমতের সম্পর্ক হচ্ছে, তাদেরকে ইসলামি বিধি-বিধান পালনের নির্দেশ দেয়া, এর জন্য তাদের অভ্যাস গড়ে তোলা এবং এর প্রতি তাদের অন্তরে মহব্বতের সৃষ্টি করা। কারণ এটাই হচ্ছে বাচ্চাদের মূল আদর্শ শিক্ষা দেয়া এবং তাদের ব্যাপারে কল্যাণ কামনার স্বরূপ। রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “ব্যক্তি তার পরিবারের ওপর দায়িত্বশীল এবং তাকে এ দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।” সুতরাং অভিভাবকদের উচিত ইসলামি শরিয়ত মোতাবেক বাচ্চাদের গড়ে তোলা এবং ইসলাম যেসব বিষয় তাদের ওপর আরোপ করেছে, সেগুলো তাদের দ্বারা সম্পাদন করা।

সূত্র : শায়খ সালেহ আল-উসাইমিন (কিতাবুদ্দাওয়াহ ১/১৪৫:১৪৬)

প্রশ্ন : নাবালেক বাচ্চার সিয়ামের হুকুম কি?

উত্তর : বাচ্চাদের ওপর সিয়াম ফরজ নয়। তবে অভিভাবকদের কর্তব্য অভ্যাস গড়ার জন্য তাদেরকে সিয়ামে উদ্বুদ্ধ করা। এটিই নবীর সুন্নত, যা পালন করলে সওয়াব পাওয়া যাবে, ছেড়ে দিলে গোনাহ হবে না।

সূত্র : শায়খ সালেহ আল-উসাইমিন (ফিকহুল এবাদাত : পৃ. ১৮৬)

প্রশ্ন : আমার ছোট্ট বাচ্চা রোজা পালনের জন্য খুব জেদ ধরে অথচ তার বয়স কম, স্বাস্থ্যও খারাপ, রোজা তার জন্য ক্ষতিকর, এমতাবস্থায় রোজা না রাখার জন্য আমি তার ওপর কঠোরতা করতে পারি?

উত্তর : যেহেতু সে ছোট্ট-নাবালেক তার ওপর রোজা ফরজ নয়। যদি সে বিনা কষ্টে রোজা রাখতে সক্ষম হয়, তাহলে তাকে রোজা রাখার সুযোগ দেয়া উচিৎ। সাহাবায়ে কেরাম নিজ বাচ্চাদের রোজা পালন করাতেন। ছোট্ট বাচ্চারা ক্ষুধার জন্য কাঁদলে, খেলনা দিয়ে তাদের ভুলিয়ে দিতেন। হ্যাঁ, যদি সুনির্দিষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, রোজা তার জন্য ক্ষতিকর, তবে তাকে রোজা না রাখার জন্য বলা হবে। আল্লাহতাআলা পবিত্র কুরআনে বাচ্চাদের ওপর তাদের নিজ সম্পদের ভার ছেড়ে দিতে নিষেধ করেছেন, পাছে তারা নষ্ট করে ফেলবে; শরীরের বিষয়টা তার চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ, তাই শরীরের ভাল-মন্দের বিচারও তাদের ওপর সোপর্দ করা যাবে না। তবে, বাচ্চাদের তালিম-তরবিয়ত ও শিক্ষা-দীক্ষার ব্যাপারে কঠোরতা কিছুতেই কাম্য নয়।

সূত্র : শায়খ আব্দুল্লাহ বন জাবরিন ফতোয়াসসিয়াম : ৩৪