শীতে ত্বকের যত্ন

0
236

এখন শীত মৌসুম। শুষ্ক হয়ে উঠেছে আবহাওয়া। একই সঙ্গে শুষ্ক হয়ে উঠছে মানুষের ত্বক। শুষ্কতার পরিমাণ বেড়ে গেলে তা ত্বকে সৃষ্টি করে নানা সমস্যা। ঘটে শরীরের সৌন্দর্যহানিও। কে না চায় চেহারাটা সুন্দর থাকুক? সুন্দর চেহারার জন্য স্বভাবতই প্রথমে পরিচর্যা নিতে হয় ত্বকের। ত্বকের প্রধান শত্রু শীত। তাই এ সময় ত্বকের বেশি পরিচর্যার প্রয়োজন পড়ে। শুধু শীত কেন, সারা বছরই শরীরের বা ত্বকের যত্ন নেয়া উচিত।

শীতের দিনে গোসল:

শীতে শুষ্ক আবহাওয়ার জন্য ত্বক স্বাভাবিক আদ্রতা দ্রুত হারিয়ে ফেলে। তাই শীতকালে গোসলে যত কম সাবান ব্যবহার করা যায়, তত ভালো। গরম পানিও বেশি ব্যবহার না করাই ভালো। কারণ এগুলো ত্বকের শুষ্কতা আরও বাড়িয়ে দেয়। গোসলের পর ত্বকে ভেজা ভাব থাকতেই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। মনে রাখতে হবে, ত্বক একেবারে শুকিয়ে নিয়ে তারপর ময়েশ্চারাইজার মাখলে কাজ হয় না। হাতে, পায়ে, মুখে এবং পুরো শরীরে ময়েশ্চারাইজার মাখুন। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় ময়েশ্চারাইজার মেখে ঘুমাতে যেতে পারেন। এতে ত্বকের খসখসে ভাব কমে আসবে।

শীতের রোদ মিষ্টি আমেজ সৃষ্টি করলেও ত্বকের জন্য তা ক্ষতিকর। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ত্বকের ক্ষতি করে। ত্বকের ক্যানসার ঘটা বিচিত্র কিছু নয়। তাই ত্বককে রক্ষা করতে হলে সানপ্রোটেকটিভ ফ্যাক্টর বা এসপিএফ-সমৃদ্ধ ক্রিম মেখে বের হওয়াই ভালো। বিভিন্ন মাত্রার এসপিএফ-সমৃদ্ধ ক্রিম বা লোশন রয়েছে। তবে গবেষকদের মতে, এসপিএফ-১৫ সমৃদ্ধ ক্রিম ত্বকের জন্য নিরাপদ।

চুলের যত্নে লেবু:

লেবু মানব শরীরের জন্য প্রচণ্ড উপকারী। শীতের সময় চুলে খুশকির উপদ্রব বেড়ে যায়। এ সময় মাথার ত্বকে ছোট ছোট ফুসকুড়ি ওঠে ও খুশকির সমস্যা দেখা যায়। লেবুর রস এ সমস্যার সমাধান করে। লেবুর রসের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান খুশকি থেকে মাথার ত্বককে দূরে রাখে। আপনি ঘরে বসেই প্রাকৃতিকভাবে লেবুর রসের মাধ্যমে মাথার ত্বককে সুস্থ রাখতে পারেন।

হাতের তালু ও পায়ের যত্ন:

শীতে অনেকেরই পায়ের গোড়ালি ফেটে যায়। সারাদিন রোদ ও ধুলো-ময়লায় হাত ও পায়ের অবস্থা বেশ খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু রাতে মাত্র ২০ মিনিট সময় ব্যয় করে হাত ও পায়ে ফিরিয়ে আনতে পারেন হারিয়ে যাওয়া কোমলতা। পায়ের যত্নে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ল্যাক্টিক অ্যাসিড-সমৃদ্ধ ক্রিম ব্যবহার করে মোজা পরে নিলে পায়ের কোমলতা ফিরে আসে।

মুখের যত্ন:

মুখের যত্নে ভালো ময়েশ্চারাইজারযুক্ত ক্রিম ব্যবহার করতে হবে। যাদের মুখে ব্রণের সমস্যা আছে, তারা ক্রিমের সঙ্গে একটু পানি মিশিয়ে নিতে পারেন। শীত আসছে বলে ভাববেন না যে, সানস্ক্রিন ব্যবহার করার প্রয়োজনীতা কমে গেছে। শীতকালেও বাইরে বের হওয়ার ৩০ মিনিট আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।

ঠোঁটের যত্ন:

শরীরের ত্বকের শুষ্কতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ঠোঁটের শুষ্কতাও এ সময় মারাত্মকভাবে বেড়ে যায়। অনেকে এ সময় জিভ দিয়ে বারবার ঠোঁট ভেজাতে থাকেন, যা ঠোঁটের কোমল ত্বকের জন্য আরও ক্ষতি ডেকে আনে। সবচেয়ে ভালো হয়, ঠোঁটে বারবার ভেসলিন মাখলে। যদি ভেসলিন শুকিয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়, তা হলে গাঢ় করে ভেসলিন মাখতে হবে। ঠোঁটের উপরিভাগের পাতলা শুষ্ক ত্বক কখনো টেনে তুলে আনার চেষ্টা করবেন না, তাতে ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যাবে। ঠোঁট কোমল রাখতে লিপবাম ব্যবহার করুন।

প্রচুর পানি পান:

শুধু বাইরের দিক থেকে রুক্ষতা প্রতিরোধ করাই নয়; নিজেকে ভেতর থেকে সজীব ও সতেজ রাখার জন্য প্রচুর পানি পান দরকার। এমনিতে বেশি পানি পানের উপকারিতার কোনো বিকল্প নেই। শীতে তা ত্বক তো বটেই, সারা শরীরে সুস্থতার জন্যও কাজ দেবে।

খাদ্য তালিকা:

শরীর বা ত্বক যাই বলি না কেন, সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গই সুস্থ ও সজীব রাখার মূলে খাদ্য। বিভিন্ন ফলমূল ও সবজি ত্বকের সুরক্ষা নিশ্চিত করে থাকে। গাজর, শিম, লেবু, টমেটো, পালং শাক প্রভৃতি সবজি খেলে ত্বক যৌবন দীপ্ত থাকে। অনেকে ত্বক সুন্দর রাখার জন্য ত্বকে বিভিন্ন সবজি ও ফলের রস মেখে থাকেন। কিন্তু বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত, ত্বকে এ ধরনের সবজি বা ফলের রস মাখলে সত্যিকার অর্থে কোনো কাজ হয় না; উপরন্তু ত্বকে লেবুর রস মেখে বাইরে বেরোলে ত্বকের রঙ আরও কালো হয়। ত্বকের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রচুর সবজি ও ফলমূল খেতে হবে। সেই সঙ্গে পান করতে হবে প্রচুর পরিমাণ পানি। আর হ্যাঁ, ধূমপান একেবারেই নয়। গবেষকরা বলেন, ধূমপান ত্বককে বৃদ্ধ করে ফেলে। সুতরাং ধূমপানমুক্ত থাকি, শরীর বা ত্বককে সুস্থ রাখি।