শীত বাড়ছে সাথে গরম কাপড়ের চাহিদা-দামও

0
83

শীতের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে গরম কাপড়ের ব্যবসাও জমে উঠছে।
ভোরের হাওয়ায় শীতল পরশ লেগেছে চট্টগ্রামে; রাতে শিশির আর মোড়ে মোড়ে কুয়াশায় আচ্ছন্ন পুরো শহর। রাস্তার পাশে ধোঁয়া ওঠা ভাপা পিঠা আর শীতের পোশাক-সম্ভার জানান দিচ্ছে প্রকৃতিতে শীতের আগমন। কার্তিক মাসে শীতের প্রকোপ না থাকলেও আগাম প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। চট্টগ্রামের ফুটপাত থেকে শুরু করে অভিজাত বিপনিবিতানগুলো থরে থরে সাজানো হচ্ছে শীতের পোশাকে। ব্যবসায়ীরা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন কাপড় সরিয়ে তুলছেন গরম কাপড়। শনিবার নগরীর জহুর হকার্স মার্কেট, ষোলশহর দুই নম্বর গেট, বাণিজ্যিক এলাকা আগ্রাবাদ, জিইসি মোড়, চকবাজার, নিউমার্কেট, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, আন্দরকিল্লাহ, রিয়াজউদ্দিন বাজারসহ বিভিন্ন মার্কেট ও ফুটপাতে ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, এখনও পুরোপুরি শীত না পড়লেও অনেকে আগেভাগে শীতের পোশাক কিনতে মার্কেটে ভিড় করছেন। তাই আগের কাপড় সরিয়ে দোকানে শীতের পোশাক তোলা হচ্ছে। তবে দিনের বেলা বসতে পারছে না বলে দুশ্চিন্তায় হকাররা। বাংলাদেশ পুরনো কাপড় ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোঃ আবুল কালাম বলেন, শীতে গরিব মানুষের একমাত্র আশ্রয় আমরাই। কারণ, একজন হতদরিদ্র মানুষ আমাদের কাছ থেকে মাত্র ২০ টাকায় শীতের কাপড় কিনতে পারেন। অথচ, এখন আমাদের ব্যবসা করার জায়গা নেই। শেষ ভরসা হিসেবে ফুটপাত যাদের কাপড় কেনার জায়গা, তারাও সংকটে পড়েছেন। তিনি বলেন, শীতকালে যদি হকারদের ফুটপাতে বসতে দিত, তাহলে গরিব ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের জন্য ভালো হতো। আমাদের ব্যবসায়ীরা দিনের বেলায়ও বিক্রি করতে আগ্রহী। জহুর হকার্স মার্কেটের শীতবস্ত্র বিক্রেতা নুরে মিজান বলেন, শীতের পোশাক ও আনুষঙ্গিক সবকিছু বিক্রি শুরু হয়ে গেছে। তবে এখনও কিছুটা মন্দাভাব চলছে। ঠা-ার প্রকোপ বাড়লে চাঙ্গা হবে ব্যবসা।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মোঃ মাসুদ রানা অফিস শেষে গরম কাপড় নিতে এসেছেন এ মার্কেটে। তিনি বলেন, শীতের আগে কিছুটা কম দামে কেনাকাটা করা যায় বলেই আগেভাগেই আসা। বাহারি শীত পোশাকে সেজে উঠছে দোকানগুলো। তুলনামূলক দাম বেশি হওয়ার কারণে পছন্দমতো শীতের কাপড় কিনতে পারছেন না। মার্কেটে ঘুরে দেখা গেছে, ছোট-বড় সব বয়সের জন্যই আছে বিভিন্ন রঙ আর সাইজের জ্যাকেট, সোয়েটার ও ট্রাউজারসহ বিভিন্ন শীতবস্ত্র। এ মার্কেটে বিভিন্ন এলাকা থেকে শীতের পোশাক কিনতে আসতে শুরু করেছে পাইকাররা। পাইকারি পোশাকের বাজারের মধ্যে অন্যতম জহুর হর্কাস মার্কেট। শীতকে সামনে রেখে এরই মধ্যে খুচরা ব্যবসায়ীরাও ভিড় জমাচ্ছেন এসব মার্কেটে। শীতের সঙ্গে সঙ্গে দামটাও বাড়তে পারেÑ এমন আশঙ্কায় এর মাঝেই কেউ কেউ আগেভাগেই সেরে ফেলছেন কেনাকাটা।
জহুর হকার্সের সোয়েটার ও জ্যাকেট শীতবস্ত্র বিক্রেতা রতন মিয়া বলেন, দোকানগুলোতে প্রতিদিনই উঠছে শীতের কাপড়। পাওয়া যাচ্ছে কম্বল, উলের তৈরি সোয়েটার, ব্লেজার, টুপি, কাপড়ের জুতো, কেডস, জ্যাকেট, ট্রাউজার, গরম কাপড়ের তৈরি প্যান্ট, চাদরসহ নানা আইটেমের গরম কাপড়। তিনি বলেন, বিক্রি পুরোপুরি এখনও শুরু হয়নি। তবে ক্রেতারা আসছেন। শীত তো এখনও পুরোপুরি পড়ছে না। সে হিসাবে বিক্রি খারাপ না। শীত বাড়লে বিক্রি বাড়বে। আগ্রাবাদ মোড়ে ভ্যান গাড়িতে শীতের পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসেছেন কামরুল ইসলাম রুবেল। তিনি বলেন, এতদিন অন্য কাপড় বিক্রি করতাম। এখন শীতের কাপড় বিক্রি করছি। ভ্যান গাড়িগুলোতে শীতের পোশাকের মধ্যে রয়েছে সোয়েটার, চাদর, জ্যাকেটসহ নানা ধরনের পোশাক। ছোটদের সোয়েটার ৪০ থেকে ২০০ টাকা, চাদর ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা, জ্যাকেট ৬০০ থেকে হাজার টাকার মধ্যে। তবে শীতের কাপড় হকার্সে কিছুটা দাম কম থাকলেও শপিং সেন্টারগুলোতে দাম একটু বেশি। শপিংমলগুলোতে ছেলেদের ব্লেজার রয়েছে ২ থেকে ৫ হাজার টাকার মধ্যে। জ্যাকেট রয়েছে ২ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকার মধ্যে। শপিংমলের বিক্রেতা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তাদের দোকানে ছেলেদের সোয়েটার বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের সোয়েটারের মূল্য বেশি। মেয়েদের সোয়েটার বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকায়।
এক শিক্ষার্থী সহপাঠীদের সঙ্গে এসেছেন ওভারকোট কেনার জন্য। তিনি বলেন, হকার্স ও নিউমার্কেট ঘুরে দেখছি। পছন্দ হলেও বাজেটের স্বল্পতার কারণে কেনা হচ্ছে না। বিপণিবিতান ঘুরে দেখা গেছে, মেয়েদের ওভারকোট বিক্রি হচ্ছে ১ থেকে ৩ হাজার টাকায়, মিনি ওভারকোট ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা ও চাদর ৫০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। বাচ্চাদের পোশাকে রয়েছে বৈচিত্র্য। বাচ্চাদের বেশির ভাগ পোশাকই ভারত ও চীন থেকে আমদানি করা। ক্রেতাদের কাছে বিদেশি পোশাকের কদর বেশি হওয়ায় তারা তা আমদানি করেছেন। হকার্সসহ বিভিন্ন শপিং কমপেক্সে বাচ্চাদের বিভিন্ন ধরনের জ্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১ হাজার টাকায়। এছাড়াও সিঙ্গেল কম্বল ১৫০ থেকে ২০০ টাকা, ডাবল কম্বল ৪ হাজার থেকে শুরু করে বিভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে। উলের টুপি ১০০ টাকায়, কানঢাকা টুপি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা, হাত মোজা ৫০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।