শুরু হলো রহমত, বরকতময় পবিত্র রমজান

0
103

পবিত্র রমজানশুরু হলো রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের মাস পবিত্র রমজান। রোজাকে আরবি ভাষায় সিয়াম বা সাওম, আর ফার্সিতে রোজা বলা  হয়। সাওম অর্থ বিরত থাকা। আর শরীয়তের পরিভাষায় ফরজ রোজা রাখার নিয়তে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত জিহ্বা অর্থাৎ কোনো কিছু পানাহার এবং স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকার নাম সাওম বা রোজা। মহান আল্লাহ্‌পাক রাব্বুল আলামীন মুমিন বান্দাদিগকে তাঁর কাছে টেনে নেয়ার জন্য এই পবিত্র মাসের রোজাকে তিন ভাগে বিভক্ত করেছেন। প্রথম দশদিন রহমতের, দ্বিতীয় দশদিন মাগফিরাতের এবং তৃতীয় দশদিন দোজখ থেকে মুক্তির জন্য। আল্লাহ পাকের নির্দেশে আকাশের মেঘমালা বছরের প্রথমে যে বারিধারা বর্ষণ করে থাকে, তাতে মৃত জমিন যেমন সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামল হয়ে পৃথিবীকে নবশক্তিতে বলিয়ান করে থাকে। অনুরূপভাবে মাহে রমজানের রোজা মুমিন বান্দাদের আত্মাকে নবশক্তিতে বলিয়ান করে। ইসলামের প্রথম স্তম্ভ নামাজ যেমন মুমিনদেরকে শিক্ষা দেয় শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তী হওয়ার তেমনি মাহে রমজানের রোজা শিক্ষা দেয়, তাক্‌ওয়া, সহিষ্ণুতা ও সংযম।
পবিত্র রমজান2রমজান মাসে মানুষের দিল নরম থাকে। দ্বীনের কথা শোনা ও মানার প্রবণতা অন্য সময়ের চেয়ে বেশি থাকে। এবং বেশকিছু বিষয় প্রতিদিন জানানোর প্রয়োজনও থাকে। তাই মানুষের ফায়দা ও প্রয়োজনীয়তার দিকে লক্ষ্য থেকে রমজানের  যেকোনো একটি সময়ে কিছু নসিহত শোনানোর ইন্তেজাম রাখা যায়। মহল্লার মুসল্লিদের সুবিধা বিবেচনা করে যেকোনো ভাবে দ্বীনের কথা শোনা যায়। আমরা এই রমজানের প্রথম সেহরি গতরাতে গ্রহণ করেছি। সেহরি আমরা গ্রহণ করবো কী নিয়তে- সাধারণত আমাদের মনে এই চিন্তা থাকবে যে সেহরি না খেলে সারাদিন রোজায় কষ্ট পেতে হবে। কাজেই ক্ষুধার কষ্ট থেকে বাঁচার জন্য সেহরি খেতে হয়। এই চিন্তায় সেহরি খেলে সেহরির সহিহ নিয়ত হবে না। এই চিন্তায় সেহরি খেলে ক্ষুধার কষ্ট থেকে বাঁচা যাক আর না যাক সেহরির সওয়াব ও বরকত থেকে আমরা বঞ্চিত হয়ে যাবো। সেহরি খাওয়া সুন্নত। এই নিয়তে সেহরি খেতে হবে। তাহলে না খাওয়ার কষ্ট থেকে বাঁচা গেল, সুন্নত আদায় করার সওয়াবও পাওয়া যাবে। সেহরি খাওয়ার পেছনে একটা নিয়ত থাকবে। এই সুন্নত আদায় করার নিয়ত। আরেকটা নিয়ত থাকবে যা এক হাদিসে বলা হয়েছে ‘তোমরা সেহরি খাও, সেহরির মধ্যে বরকত রয়েছে’ এই হাদিসের আলোকে সেহরির সময় আমাদের আরেকটা নিয়ত থাকবে। তা হলো, বরকত অর্জন করার নিয়ত। আরেক হাদিসে বলা হয়েছে, যারা সেহরি খায় আল্লাহ তাদেরকে রহমত দান করেন। ফেরেশতা তাদের জন্য রহমতের দোয়া করেন। এই হাদিসের আলোকে সেহরি খাওয়ার বেলায় আল্লাহর রহমত এবং ফেরেশতাদের দোয়া অর্জন করার নিয়ত থাকবে। মোট কথা, সুন্নত আদায় করার নিয়ত। বরকত অর্জন করার নিয়ত এবং রহমত অর্জন করার নিয়ত। এই থাকবে সেহরির নিয়ত। সেহরি পেট পুরে না হোক, একটু পানি হলেও আমরা খাবো। শুধু এই সুন্নত বরকত এবং রহমতের নিয়তে। সেহরি যথাসম্ভব রাতের শেষের দিকে খাওয়া উত্তম। যদি আগেভাগে খাওয়া হয়ে যায় তারপরেও শেষ মূহূর্ত পর্যন্ত চা-পানি পান ইত্যাদিতে লিপ্ত থাকলেও শেষ মুহূর্তে সেহরি খাওয়ার ফজিলত অর্জন হবে। নিয়ত করা হয়ে গেলে আর সেহরি খাওয়া যায় না। অনেকে এরকম একটা ভুল ধারণার শিকার। নিয়ত করার পরেও সময় থাকলে খাওয়া বা পান করা যায়। আজকে এই রমজানের প্রথম ইফতারও আমরা করবো সুন্নত আদায় করার নিয়তে। এবং বরকত ও রহমত হাসিল করার জন্য। ইফতারের ক্ষেত্রে উত্তম হলো খুরমা বা খুরমা জাতীয় জিনিস দিয়ে ইফতার শুরু করা। না থাকলে কোনো মিষ্টি দিয়ে ইফতার শুরু করা। তাও না থাকলে পানি দিয়ে শুরু করা উত্তম। অনেকের একটা ভুল ধারণা রয়ে গেছে লবণ দিয়ে ইফতার শুরু করতে হয়। খাওয়ার ক্ষেত্রে অনেকে এরকম মনে করে থাকেন লবণ দিয়ে খানা শুরু করতে হয়। এটা ভুল ধারণা। ইফতারের সময় শুরুর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা উত্তম। সেহরি শেষ ভাগে করা উত্তম। ইফতারের সময় শুরুর সঙ্গেই ইফতার করা উত্তম। ইফতারের সময় দোয়া কবুল হয়। দোয়া ইফতারি শুরু করার আগেও হতে পারে, ইফতার শেষে হতে পারে। প্রথম রমজান হচ্ছে রহমতের প্রথম দিন। তাই রহমত কাদের উপরে নাজিল আল্লাহ পাক কোরআনে বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই একাগ্র মনে যারা আল্লাহর এবাদত করে অর্থাৎ মুসলিম যারা তাদের উপরেই রহমত নাজিল হয়।’ এই রহমতের ১০ দিনের প্রথম দিন থেকেই রহমত পাওয়ার যোগ্যতা হাসিল করতে হবে। তাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত-এবাদতের মাধ্যমে রমজান মাস অতিবাহিত করা।