শেখ হাসিনার উপর হামলার ব্যর্থ চেষ্টার খবর ভিত্তিহীন: পিএমও

0
69

বিদেশি সংবাদ মাধ্যমকে উদ্ধৃত করে বাংলাদেশের সংবাদপত্রে খবরটি প্রকাশের পর রোববার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো বিরল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপর গত ২৪ অগাস্ট তারিখে হামলার খবরটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বিভ্রান্তিমূলক এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। তার প্রেসসচিবের পক্ষে উপ প্রেসসচিব আশরাফুল আলম খোকন এই বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমে পাঠিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এই বিজ্ঞপ্তি আসার আগে সচিবালয়ে আইন শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভাপতি আমির হোসেন আমুও সাংবাদিকদের বলেছিলেন, এই খবরের সত্যতা নেই।

তবে সকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহণমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বান্দরবানে সাংবাদিকদের বলেন, “রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর আকাশ ছোঁয়া জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে দেশি-বিদেশি একটি মতলবী মহল তাকে হত্যার চক্রান্ত করছে।”

প্রকাশিত ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, চার সপ্তাহ আগে ২৪ অগাস্ট ইন্দিরা গান্ধীর মতো দেহরক্ষীদের দ্বারা শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র হয়েছিল; ওই পরিকল্পনায় জেএমবি জঙ্গিদের দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বাইরে ধারাবাহিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটানোর চক্রান্তও হয়েছিল। বাংলাদেশ ও ভারতের জঙ্গি-সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকর্তারা তা ভেস্তে দেন।

২৪ অগাস্ট শেখ হাসিনা তার কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে সিলেটে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত কর্মকর্তাদের স্বজদের হাতে আর্থিক অনুদানের চেক তুলে দেন। কার্যালয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি অনুষ্ঠানেও ছিলেন তিনি

একই দিন তিনি গুলশানে রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিল্লুর রহমানের বাড়িতে গ্রেনেড হামলায় নিহত আইভি রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীর মিলাদে যোগ দিয়েছিলেন।

শেখ হাসিনাকে হত্যার ‘ব্যর্থ চেষ্টার’ খবর ভারতের গণমাধ্যমে আসার পর আলোচনার মধ্যে বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের ভাষ্য এল।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৩ সেপ্টেম্বর একটি বিদেশি টিভি চ্যানেল ও একটি আন্তর্জাতিক অনলাইন পত্রিকায় সূত্র ব্যবহার করে বাংলাদেশের কয়েকটি সংবাদ মাধ্যম প্রধানমন্ত্রীর উপর প্রাণনাশী হামলার ব্যর্থ চেষ্টার খবর প্রকাশ করে।

“মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপর ২৪ অগাস্ট তারিখে ব্যর্থ হামলার সাথে একটি বিশেষ বাহিনীর কতিপয় সদস্যকে সংশ্লিষ্ট করে বাংলাদেশের কয়েকটি টিভি চ্যানেলে খবর প্রচারসহ আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

“মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপর গত ২৪ অগাস্ট তারিখে হামলার খবরটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বিভ্রান্তিমূলক এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”

শেখ হাসিনাকে হত্যার ব্যর্থ চেষ্টার খবরটি প্রথম ছেপেছিল মিয়ানমারের ইন্টারনেট সংবাদপত্র ‘মিজিমা নিউজ’; যে দেশটিতে গণমাধ্যমের উপর সামরিক বাহিনীর কড়া নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। এরপর আরও কয়েকটি অখ্যাত ইন্টারনেট সংবাদপত্রেও খবরটি আসে।

তারপর ভারতের টেলিভিশন স্টেশন ‘নিউজ এইটিন’ এটিকে এক্সক্লুসিভ খবর হিসেবে প্রচার করে; তাদের জিজ্ঞাসায় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সরাসরি কোনো মন্তব্য না করে বলেন যে বিষয়টি তদন্ত করে দেখছেন তারা। এতে বিভ্রান্তি তৈরি হয়; ‘নিউজ এইটিন’ এর সংবাদ পাঠিকা বলেন যে বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী ঘটনাটি নিশ্চিত করেছেন।

নিউজ এইটিনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত খবর, যা তাদের টেলিভিশনে প্রচারিত হয়েছিল নিউজ এইটিনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত খবর, যা তাদের টেলিভিশনে প্রচারিত হয়েছিল
বিদেশি সংবাদ মাধ্যমকে উদ্ধৃত করে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরীর মালিকানাধীন টেলিভিশন স্টেশন ‘ডিবিসি’সসহ কয়েকটি টেলিভিশন খবরটি প্রচার করে; পরে তা তুলে নেওয়া হলেও তার কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।

কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশন স্টেশন তাদের নিয়মিত আলোচনা অনুষ্ঠানেও খবরটি আলোচনায় তোলে।

খবরটি প্রকাশ করে সরকারি সংবাদ সংস্থা বাসসও। বাংলাদেশের কয়েকটি সংবাদপত্রও খবরটি ছাপিয়েছিল, তার মধ্যে শেখ হাসিনা সরকারের মন্ত্রী জেপি নেতা আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর মালিকানাধীন ইত্তেফাকও রয়েছে।

বিভ্রান্তিকর সংবাদটি প্রকাশ করেছিল বাসসও, পরে তা সরিয়ে নেওয়া হয় বিভ্রান্তিকর সংবাদটি প্রকাশ করেছিল বাসসও, পরে তা সরিয়ে নেওয়া হয়
এই ধরনের সংবাদকে দেশের নিরাপত্তার ‘সার্বিক স্বার্থ পরিপন্থি’ উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “এরূপ বিভ্রান্তিমূলক সংবাদ প্রচার করা যে কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তি ও সচেতন গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে মোটেও কাম্য নয়।”

এই ধরনের ‘বিভ্রান্তিকর’ সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে সবাইকে সতর্কতা অবলম্বন করতে অনুরোধ জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।