সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে বাংলাদেশ

0
43

তাপমাত্রার পরিবর্তন এবং বৃষ্টিপাতের তারতম্যের কারণে আগামী কয়েক দশকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে আসার ঝুঁকির মুখে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় অর্ধেক অঞ্চল। আর মাথাপিছু জিডিপি-র দিক থেকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে বাংলাদেশ। বিশ্ব ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে একথা বলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিশ্ব ব্যাংকের প্রকাশিত এ প্রতিবেদনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা এলাকাগুলোকে ‘হটস্পটস’ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ সমস্ত এলাকায় গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং বৃষ্টিপাতের তারতম্যের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য কয়েক দশকের মধ্যে অর্থনৈতিক ক্ষতি হতে পারে সবচেয়ে বেশি।নেমে যেতে পারে জীবনযাত্রার মানও।

সম্ভাব্য এ হটস্পটগুলোর অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ দু’ভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিভিন্ন দেশ সম্মিলিত উদ্যোগ নিলে কোন এলাকাগুলো হটস্পট হতে পারে আর কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হলে কোন এলাকাগুলো হটস্পট হতে পারে তা দেখা হয়েছে।

ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের অর্থনৈতিক প্রভাব ২০৫০ সালের মধ্যে কতটা পড়বে আর তা কোনো অঞ্চলে কতটা ভয়াবহ হয়ে উঠবে তা নিয়েই মূলত সমীক্ষা চালিয়েছে বিশ্ব ব্যাঙ্ক।

আনুমানিক ৮০ কোটির বেশি মানুষ বর্তমানে মাঝারি থেকে ভয়াবহ ধরনের হটস্পটগুলোতে বাস করছে।

জলবায়ু যেভাবে বদলাচ্ছে তা রোধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হলে ২০৫০ সালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ভারতের একটি বিস্তীর্ণ এলাকা। বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাপমাত্রা বৃদ্ধি আর মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ধরন বদলের কারণে ভারতের গড় জাতীয় আয় (জিডিপি) পড়ে যাবে ২দশমিক ৮ শতাংশ। জীবনযাত্রা মান পড়ে যাবে প্রতি দুই ভারতীয়র একজনের।

বিশ্ব ব্যাংকের এক অর্থনীতিবিদ বলেছেন, জলবায়ু হটস্পটের সঙ্গে পানি সংকট এলাকাগুলোর এক ধরনের যোগসূত্র আছে বলেই তিনি মনে করেন।

আর এ কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবে ৬০ কোটি ভারতীয় চরম পানি সংকটে পড়ারও আশঙ্কা আছে।

দক্ষিণ এশিয়দের মধ্যে মারাত্মক হটস্পটগুলোতে বাস করা বাংলাদেশিরা আবহাওয়ার গড় পরিবর্তনের কারণে মাথাপিছু জিডিপি’র দিক থেকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে বলে বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ২০৫০ সালের মধ্যে তাদের আয় কমবে ১৪ দশমিক ৪ শতাংশ। সেই তুলনায় শ্রীলঙ্কানদের আয় কমবে ১০ দশমিক ০ শতাংশ এবং ভারতীয়দের কমবে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ।

প্রতিবেদনের প্রধান প্রবক্তা মানি বলেন, ‘মানুষ কোথায় বাস করছে এবং তার কর্মকান্ডের ওপর ভিত্তি করেই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব তাদের ওপর পড়বে।’

তিনি বলেন, অর্থনৈতিক ক্ষতির আশঙ্কা উপকূলীয় ও পার্বত্য এলাকাগুলোর চেয়ে অনেক বেশি দেশের অভ্যন্তরীন এলাকাগুলোতে। আর যে সব এলাকা কৃষিনির্ভর সে সব এলাকাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এলাকাভেদে যেভাবে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ আর ধরণ বদলাচ্ছে তাতে চাষবাসে আর তেমন ফসল ফলবে না আগামী দশকগুলোতে। কৃষিনির্ভর অর্থনীতির দেশগুলোতে ফসল উৎপাদন এতটাই নিম্নমুখী হবে যে অর্থনীতি আর গতিশীল থাকতে পারবে না।