সমুদ্র সাক্ষরতা অভিযান (পাঠ ৩)- এসো নীল জলের গল্প শুনি

0
71

২১ সেপ্টেম্বর “ব্লু-গ্রিন ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ”, একটি সমুদ্র সাক্ষরজাতি গঠনে চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহরে অবস্থিত “গরীবে নেওয়াজ উচ্চ বিদ্যালয়” প্রাঙ্গণে “নীল জলের গল্প শুনি” শিরোনামে “সমুদ্র সাক্ষরতা স্কুল ক্যাম্পেইন” অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এই অনুষ্ঠানের আকর্ষনীয় বিষয় ছিল সমুদ্র ও সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য পরিচিতি এবং পোস্টার প্রদর্শনী। প্রায় ২৫০ জন শিক্ষার্থী (৮ম-৯ম শ্রেণী) এই আয়োজনে অংশগ্রহণ করে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন মোঃ দিলদার খান দিলু। এছাড়া সভাপতিত্ব করেন আয়োজিত স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম। এছাড়া প্রধান বক্তা হিসেবে ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও ব্লু গ্রিন ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ড. মোহাম্মদ মোসলেম উদ্দিন। অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্র বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থীরা সমুদ্র পরিচিতি, সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য ও প্লাস্টিক দূষণ বিষয়ে সচেতনতামূলক পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশন করেন। সুস্থ ও টেকসই অর্থনীতি নির্ভর বাংলাদেশ গড়তে সমুদ্র সাক্ষরতার কোন বিকল্প নেই।“বঙ্গোপসাগরের উন্নয়ন মানেই, সত্যিকার বাংলাদেশের উন্নয়ন”। নতুন প্রজন্ম বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা যদি অনুধাবন করতে পারে বঙ্গোপসাগরের উন্নয়নই বাংলাদেশের উন্নয়ন,তবেই তারা সমুদ্র বিজ্ঞানে আগ্রহী হবে এবং টেকসই সমুদ্র অর্থনীতি বা “ব্লু-ইকোনমি” বাস্তবায়নে ও দেশ গঠনে ভূমিকা রাখবে। তাই বাংলাদেশের প্রতিটি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে এই “সমুদ্র শিক্ষা” প্রসারে “সমুদ্র অলিম্পিয়াড” প্রকল্প আয়োজন করতে হবে। বাংলাদেশ একটি উপকূলবর্তী দেশ। এ দেশের রয়েছে ১১৮,৮১৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে সুবিশাল বঙ্গোপসাগর যা দেশের মূলভূখন্ডের আয়তনের কাছাকাছি। সম্ভাবনাময়, সমৃদ্ধ ও বিপুল সম্পদের আধার যে বঙ্গোপসাগর সেটাই কিন্তু সবচেয়ে অজানা ও অবহেলিত অঞ্চল। আমাদের বঙ্গোপসাগর সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য, অবারিত সম্পদ ও শক্তির উৎস। বঙ্গোপসাগরের বিস্তীর্ণ উপকূল ও গভীর সমুদ্র বাংলাদেশের জন্য কতটা সম্ভাবনাময় তা সর্বসাধারণ এখনো উপলব্ধি করতে পারেনি। আবার সমুদ্রের অর্থনৈতিক উপযোগ গ্রহণ করতে গিয়ে প্রায়ই টেকসই উন্নয়ন ও পরিবেশ উপেক্ষিত হয়। এর মূলে রয়েছে সমুদ্র সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা, অসচেতনতা আর সমুদ্র কেন্দ্রিক উন্নয়ন পরিকল্লনার অভাব। এই ব্যর্থতা বা অভাব কাটিয়ে তোলার জন্য আমাদের সকল স্তরের মানুষকে পরিবেশ ও সমুদ্র সচেতন হতে হবে। একটি “সমুদ্র সাক্ষর” জাতি গঠনে তাই স্কুল প্রকল্পের কোন বিকল্প নেই। এই স্কুল-কলেজের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝে ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাময় “বঙ্গোপসাগর”-এর গুরুত্ব ও এর প্রতি দায়িত্ব সম্পর্কে তুলে ধরতে হবে। তাদের হাতেই বাংলাদেশের সোনালী সকাল। তারাই নতুন বাংলাদেশের কর্ণধার। তাই আগামী প্রজন্মকে সমুদ্র সচেতন করতে “ব্লু-গ্রিন ফাউওন্ডেশন বাংলাদেশ” ভবিষ্যতে আরও স্কুল প্রোগ্রামের মাধ্যমে স্কুল থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মাঝে এই সমুদ্র সাক্ষরতা ছড়িয়ে দিতে নিরলসভাবে কাজ করবে। “সুস্থ’ সমুদ্র মানেই সুস্থ’ পৃথিবী”। নগরের শত যান্ত্রিক ব্যস্ততা-ক্লান্তি দূর করতে, একটু বিনোদন ও স্বস্তির জন্য সকলে ছুটে যায় সমুদ্র সৈকতে। এ যেন বিশাল সমুদ্র বিলাস। স্নিগ্ধ সমুদ্রের আবহাওয়ায় মন আনন্দে প্লাবিত হয়। নয়নাভিরাম সূর্যোদয় ও সুর্যাস্তের দৃশ্যে আমাদের চোখ জুড়িয়ে আসে। কিন্তু এই সমুদ্র সৈকত আজ প্লাস্টিক বোতল, পলিথিন সহ বিভিন্ন আবর্জনায় ভরে আছে। এর জন্য এখনই জনসচেতনতা সৃষ্টি ও যথাযথ কতৃপক্ষের কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।