সাগর পাড়ের ভাঙন রোধে নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন

0
142
সাগর পাড়ের ভাঙন রোধে নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ। ‘টেট্রাপড’ নামের নতুন এ বস্তু (কাঠামো) অতীতের অন্যসব পদ্ধতির চেয়ে কম খরচে সাগরের পাড় রক্ষা করবে। দেখতে অনেকটা কাঁকড়ার মতো এ কাঠামোটির প্রাথমিক ধারণা নেয়া হয়েছে কানাডা থেকে। পরে দেশীয় বাস্তবতার নিরিখে এটি তৈরি করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। ইতিমধ্যে এটি ব্যবহারের পর সাফল্য মিলেছে। বলা হচ্ছে, স্বল্প খরচের এ প্রযুক্তিতে একবার সাগর রক্ষা বাঁধ স্থাপিত হলে তা শত বছর ধরে টিকে থাকবে।

 

সাগর পাড়ের ভাঙন রোধে নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবনকক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ ও দেখভালের দায়িত্ব পালন করছে সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্ক অর্গানাইজেশন (এসডব্লিও)। সংস্থাটির প্রকৌশলীরা জানান, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের পাড় ঘেঁষা ৮২ কিলোমিটারের মেরিন ড্রাইভ সড়কটি নির্মাণ করতে গিয়ে গত ২৭ বছর ধরে বার বার প্রতিবন্ধকতায় পড়তে হয়েছে। সমুদ্রের ঢেউয়ের তোড়ে বার বার বিলীন হয়ে গেছে এই সড়ক। জিও ব্যাগ, ব্লকসহ নানা পদ্ধতিতে বাঁধ দেয়ার পরও সড়ক নির্মাণ কাজ এগুনো যাচ্ছিলো না। গত বর্ষায়ও দুই কিলোমিটার সড়ক সাগরে ভেসে গেছে। শেষ পর্যন্ত কানাডা, জাপানসহ সমুদ্র উপকূলবর্তী দেশগুলো থেকে ধারণা নিয়ে সেনাবাহিনীর প্রকৌশলীরা চলতি বছর চতুর্কোণাকৃতির এক বস্তু উদ্ভাবন করেন। যার নাম টেট্রাপড। পরে কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভে এটি ব্যবহারে সাফল্য মেলে।

 

এসডব্লিও’র পরিচালক ব্রিগেডিয়ার মো. আবদুল ওহাব জানান, গত বর্ষায় মেরিন ড্রাইভের যে অংশ সাগরে বিলীন হয় সদ্য শেষ হওয়া বর্ষাকে টার্গেট করে সেখানে ৩০০ মিটার এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে টেট্রাপড দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। লোহা, সিমেন্ট, রড দিয়ে তৈরি চতুর্কোণাকৃতির বস্তু দিয়ে নির্মিত বাঁধটি নির্মাণের পর প্রথম বারেই সফলতা মিলেছে। যেখানে বাঁধ দেয়া হয়েছে সেখানে ১ মিটার বাঁধও নড়চড় হয়নি। এ পদ্ধতির বাঁধ শতবর্ষ টিকবে বলে আশা করছেন তিনি।

 

টেট্রাপড প্রকল্পের প্রকল্প কর্মকর্তা মেজর রেজওয়ানুর রহমান টেট্রাপডের গঠন সম্পর্কে ধারণা দিয়ে জানান, খুবই সাধারণ উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয়েছে টেট্রাপড। উচ্চতায় ৫ ফুট ২ ইঞ্চি। উপরের পা ৩৩ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের। নিচের দিকে তিন পায়ের দৈর্ঘ্য ৩৯ ইঞ্চি। পানিতে স্থাপনের পর সবমিলিয়ে উচ্চতা দাঁড়ায় চার ফুট। যেখানে ঢেউয়ের শক্তি (ওয়েব এ্যাকশন) সবচেয়ে বেশি সেখানে ৪:৩:২:১ বিন্যাসে টেট্রাপড বসিয়ে বাঁধ বানানো হয়। সবার নিচের স্তরে থাকে চারটি, তার ওপরে তিনটি, এভাবে ক্রমান্বয়ে কমে যায়।

 

প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, টেট্রাপড সবচেয়ে ব্যয় সাশ্রয়ী বাঁধ। জিও ব্যাগ দিয়ে ১০০ মিটার বাঁধ নির্মাণে ২০ লাখ টাকা খরচ হয়। এ বাঁধ সর্বোচ্চ এক বর্ষা টিকানো কঠিন। কিন্তু টেট্রাপড দিয়ে বাঁধ দিলে সেটা সর্বনিম্ন ১০ বছর থেকে সর্বোচ্চ শতবছর পর্যন্তও টিকতে পারে। প্রকল্প অপর কর্মকর্তা মেজর নাহিদুল ইসলাম জানান, টেট্রাপডের গঠনগত কারণে এই বস্তু ঢেউয়ের শক্তিকে (ওয়েব অ্যাকশন) শোষণ করে নিতে সক্ষম। সাগরের ঢেউকে দুর্বল করে দিয়ে শুধু পানি তীরে প্রবেশ করতে দেয়।