সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও উন্নয়নের স্বার্থে আজ সোমবার থেকে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় সব ধরনের মাছ ধরা ৬৫ দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। আগামী ২৩ জুলাই পর্যন্ত বহাল থাকবে এই নিষেধাজ্ঞা।
এই নিষেধাজ্ঞাকালে মৎস্য আহরণকারী যান্ত্রিক-অযান্ত্রিক কোনো ধরনের নৌযান বঙ্গোপসাগরে যেতে পারবে না।
এদিকে সরকারী এ সিদ্ধান্তের পর চট্টগ্রামসহ সারাদেশে মৎস্যজীবিদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামে মৎস্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বিক্ষোভ করেছেন কয়েকশ মৎম্যজীবি।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রজনন মৌসুমে ডিমওয়ালা মাছ ও কঠিন আবরণযুক্ত জলজ প্রাণী বসবাসের নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং মাছের মজুদ সংরক্ষণ সুষ্ঠু ও সহনশীল আহরণ নিশ্চিত করার স্বার্থে ২০১৫ সাল থেকে প্রতিবছর এই সময়ে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এবার গত ১০ মে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মৎস্য-২ (আইন) অধিশাখা মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে।
এ বিষয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক সৈয়দা শিরিন সুলতানা খাতুন বলেন, এই নিষেধাজ্ঞাকালে মৎস্য আহরণকারী যান্ত্রিক-অযান্ত্রিক কোনো ধরনের নৌযান বঙ্গোপসাগরে যেতে পারবে না।
এদিকে একটানা ৬৫ দিন সাগরে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে কয়েক দিন ধরেই দেশের উপকূলীয় এলাকায় জেলেদের মধ্যে অসেন্তাষ দেখা দেয়। জেলেরা এই সময়ে উপার্জনহীন হয়ে পড়ার শঙ্কা তুলে ধরে সরকারের কাছে বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করে। একটানা ৬৫ দিন সাগরে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে কয়েক দিন ধরেই দেশের উপকূলীয় এলাকায় জেলেদের মধ্যে অসেন্তাষ দেখা দেয়।
উপকূলীয় অঞ্চলের মৎসজীবীরা জানান, তারা মহাজন ও আড়তদারের কাছ থেকে দাদন নিয়েছেন। এনজিও থেকে ঋণ এবং চড়া সুদেও টাকা এনেছেন অনেকে। এই নিষেধাজ্ঞার কারণে সমুদ্রে মাছ ধরতে না পারলে তাদের পক্ষে ঋণ শোধ করা কঠিন হয়ে পড়বে। হয়তো জাল-ট্রলার বিক্রি করে এসব দেনা শোধ করতে হবে।
উত্তর চট্টলা উপকূলীয় মৎস্যজীবী জলদাস সমবায় কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি লিটন দাস বলেন, আজ ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই ৬৫ দিন সমুদ্রে সব ধরণের মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। কিন্তু জেলে পেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চট্টগ্রামের প্রায় ৫০ হাজার পরিবারের জন্য বিকল্প কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি।
তিনি বলেন, আমরা মাছ ধরে দৈনিক যা আয় করি, তা দিয়েই সংসার চালাই। প্রায় আড়াই মাস যদি মাছ ধরা বন্ধ রাখতে হয়, তাহলে এতোগুলো পরিবার চলবে কীভাবে? আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ জানাই, মাছ আহরণে সরকারি নিষেধাজ্ঞা পুনরায় বিবেচনা করুন। জেলেদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা নিন। অর্থাভাবে কোনো জেলে খারাপ কাজে জড়িয়ে গেলে এর দায়ভার কে নেবে?