সিএনজিচালিত পাওয়ার পাম্প

0
322

সিএনজিচালিত পাওয়ার পাম্পশরীয়তপুরের কৃষক পিতার ছেলে মোঃ শওকত হোসেন। আর্থিক অনটনের কারণে দশম শ্রেণীর পর তার আর পড়াশোনা করা সম্ভব হয়নি। জীবিকা নির্বাহের জন্য তাকে চলে আসতে হলো ঢাকায়। একটি গ্যারেজে কাজ করে শওকত পুরোদস্তুর মোটর মেকানিক। তার ভাবনাজুড়ে শুধুই কৃষি আর কৃষি। কৃষকের আর কৃষির জন্য কিছু করা যায় কিনা তাই রাত দিন সে ভাবত। তারপর তার ভাবনার সঙ্গে মিলে গেলেন আরেক সৃজনশীল ভাবুক মোঃ কামাল আহমেদ রতন। রতন মুন্সীগঞ্জের ছেলে। শুরু হলো দুই ভাবুকের কৃষি ভাবনা।

তারা ভাবতে লাগলেন তাদের অবস্থান থেকে কৃষকের জন্য কিছু করা যায় কিনা। তাদের ভাবনাকে কাজে লাগাতে মোটর মেকানিক হিসেবে অর্জিত জ্ঞানকে কাজে লাগানোর কথাও ভাবছিল। কৃষকের জন্য কোনটা জরুরিÑ এমন বিষয় ভাবতে ভাবতে তারা খুঁজে পেল নতুন ধারণা। কৃষকের সেচ খরচ কমাতে হবে। তাহলে কী করা যায়? ডিজেলের বিকল্প ব্যবস্থার কথা ভাবতে হবে। শুরু হলো স্বপ্নের পথযাত্রা। ডিজেলচালিত সেচ পাম্প কিনে গ্যারেজেই চলছে তাদের গবেষণা ও রূপান্তর কাজ। এভাবে এক বছর অবিরাম চেষ্টার পর স্বপ্ন এলো সত্যি হয়ে। ডিজেলচালিত পাম্পকে শওকত আর রতন মিলে সিএনজিচালিত পাম্পে রূপান্তর করলেন। তাদের উদ্ভাবিত নতুন প্রযুক্তিতে গ্যাসচালিত পাওয়ার পাম্পে জ্বালানি খরচ এক চতুর্থাংশ কমে আসবে। সঙ্গে সাশ্রয় হবে বিদেশি মুদ্রা। উদ্ভাবিত গ্যাসচালিত পাওয়ার পাম্প চালাতে এখন আর ডিজেল বা বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে না।

তরুণ উদ্ভাবকদের পদ্ধতিতে একটি ডিজেলচালিত পাওয়ার পাম্পকে সিএনজিতে রূপান্তর করতে খরচ হবে ২ হাজার টাকা। ২০০৭ সালের জুলাই মাসে মিরপুরের টোলারবাগের একটি পুকুরে তাদের উদ্ভাবিত গ্যাসচালিত পাওয়ার পাম্প দিয়ে আগ্রহী এলাকাবাসী ও সাংবাদিকদের পানি উঠিয়ে দেখানো হয়। উদ্ভাবকদের তথ্য মতে, প্রতি বছর শুধু কৃষিতে সেচের জন্য বাংলাদেশ ৪০ লাখ ব্যারেলের বেশি ডিজেল আমদানি করে। যার স্থানীয় মূল্যমান কয়েক হাজার কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে গ্যাসচালিত পাওয়ার পাম্প ব্যবহার করলে খরচ অনেক কমে যাবে। দেশীয় প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রাও সাশ্রয় হবে। কৃষি ও কৃষকের জন্য সাশ্রয়ী প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেই ক্ষান্ত হয়নি তাদের অগ্রযাত্রা। কৃষকের দোরগোড়ায় তাদের উদ্ভাবনকে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে তারা প্রতিষ্ঠা করেছে ‘গ্রামবাংলা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণা প্রকল্প’ নামক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তারা এ প্রযুক্তি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে তৈরির জন্য সরকারি-বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সহায়তা কামনা করেন। এ প্রযুক্তি কৃষির পাশাপাশি জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন, ধান মাড়াই এমনকি শ্যালো নৌকায়ও ব্যবহার করা সম্ভব।