সিদ্ধ ডিম কাঁচা বানিয়ে ‘নোবেল’

0
106

এই উদ্ভাবন মানব কল্যাণে বহুল ব্যবহৃত বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবনগুলোর মতো নাও মনে হতে পারে। কিন্তু এতেই একজন মানুষকে রাতারাতি সারাবিশ্বে পরিচিত মুখ করে তুলেছে।

সিদ্ধ ডিম কাঁচা বানিয়ে ‘নোবেল’অস্ট্রেলিয়ার এডিলেডে অবস্থিত ফ্লিন্ডার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের অধ্যাপক কোলিন র‌্যাস্টন এমন এক যন্ত্র উদ্ভাবন করেছেন যা সিদ্ধ ডিমকে আবার পূর্বের অবস্থায় নিয়ে যেতে পারে। আর তার এই চমকপ্রদ উদ্ভাবন তাকে এনে দিয়েছে সুইডিস নোবেলের প্যারোডি খ্যাত অস্ট্রেলিয়ান নোবেল পুরস্কার।

এ ব্যাপাওরে র‌্যাস্টন বলেন, ‘আমি যখন আমার উদ্ভাবিত যন্ত্রের মধ্যে মুরগীর এক সিদ্ধ ডিম ঢুকিয়ে দিলাম আর সেটা কিছুক্ষণ পর আবার পূর্বের অবস্থায় অর্থাৎ কাঁচা ডিমে রূপান্তরিত হয়ে বের হয়ে এলো। তখন বুঝতে পারলাম এটাই আমার ‘ইউরেকা’। সত্যিই কি আমি এটি পেরেছি?’

র‌্যাস্টন তার যন্ত্রের নাম দিয়েছেন ‘ভরটেক্স ফ্লুইডিক ডিভাইস’ বা সংক্ষেপে ‘ভিএফডি’। যেটা মূলত ডিমের ভেতরের আমিষের আনবিক বন্ধনকে আলগা করে দেয়। ফলে ডিমের সাদা অংশটুকু আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরে যায় অর্থাৎ থকথকে প্রবাহী পদার্থে পরিণত হয়।

র‌্যাস্টনের এই যন্ত্রটি ক্যানসার চিকিৎসায় কার্যকরী কেমোথেরাপিতে ব্যবহৃত ওষুধ উৎপাদনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। র‌্যাস্টন বলেন, ‘প্রত্যেক আবিষ্কারকই চান তার আবিষ্কার তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখুক।’

এই যন্ত্রটি যান্ত্রিক শক্তি প্রয়োগে ডিমের ওপর তাপশক্তির প্রভাবে বিদ্যমান পরিবর্তনকে পূর্বের অবস্থায় নিয়ে যায়। একটি ডিমকে যখন সিদ্ধ করা হয় তখন সেটির ভেতরের আমিষ অণু একে অপরের সাথে শক্ত করে লেগে যায় এবং এটিই ডিমকে একটি শক্ত, রাবারের মতো আকৃতি দেয়।

র‌্যাস্টনের যন্ত্রে এমন এক বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে যা প্রবল বেগে ঘোরালে আমিষ অণুলো আগের অবস্থায় ফিরে আসে। এই যন্ত্রে কোনো তাপশক্তির প্রয়োগ নেই। একটি বিশেষ রাসায়নিক আর যান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই সিদ্ধ ডিমকে কাঁচা ডিমে রূপান্তরিত করা হয়।

সারা বিশ্বে প্রতিবছর ওষুধ শিল্পের উৎপাদনের ১৬০ বিলিয়ন ডলারের সিংহভাগই খরচ হয় আমিষ প্রক্রিয়াজাত করতে। এই যন্ত্র সেই অবস্থার আমূল পরিবর্তনে সক্ষম। এই যন্ত্রটি জ্বালানি এবং খাদ্য শিল্পেও সমানভাবে ভূমিকা রাখতে পারবে বলে র‌্যাস্টনের বিশ্বাস। তাই এই যন্ত্রটিকে তিনি অর্থের মাপকাঠিতে ফেলতে মোটেও আগ্রহী নন। তিনি বলেন, ‘এই যন্ত্রের মূল্যকে অর্থে বিচার করা সত্যি কঠিন।’

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে প্রায় ১১শ দর্শকের উপস্থিতিতে র‌্যাস্টনের হাতে বিকল্প নোবেল তুলে দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন ফ্লিন্ডার্স বিশ্ববিদ্যালয় আর ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা যারা যৌথভাবে এই প্রকল্পে কাজ করেছিলেন। সবাই একটি বিষয়ে একমত হন- আর তা হলো ওষুধ শিল্পে এই যন্ত্রের কার্যকরী ব্যবহার। যা এ শিল্পের খরচ অকল্পনীয় রকম কমিয়ে আনতে সক্ষম হবে।