সীতাকুণ্ডে জেলে পাড়ায় পুলিশের হামলার ঘটনায় দুই এসআই প্রত্যাহার

0
143

সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধিঃ

সীতাকুণ্ডে জেলে পাড়ায় পুলিশ ও জেলেদের সংঘর্ষের ঘটনায় নিরপরাদ ব্যক্তিকে পুলিশ কর্তৃক হয়রানী না করার অঙ্গীকার করে এলাকায় ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এদিকে ওই ঘটনায় আটক হওয়া ১১ ব্যক্তিকে জেলা পুলিশ সুপারের তত্ববধায়নে জামিনে মুক্তি দেয়া হয়েছে।

এছাড়া এ ঘটনায় প্রত্যাহার করা হয়েছে সীতাকুণ্ড মডেল থানার দুই সহকারী উপ-পরিদর্শক এএসআই সাইফুল ও এবাদুলকে।  তবে পুলিশ বলছে তাদের প্রশাসনিক কারণে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় কুমিরা ইউনিয়নের জেলে পাড়ায় হিন্দু ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও জেলে সম্প্রদায়কে নিয়ে ত্রিপক্ষীয় শান্তিপূর্ণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।  এতে উপজেলা পূজা কমিটির সভাপতি বিমল কান্তি নাথের সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন দাশের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন,উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিল্টন রায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সীতাকুণ্ড সার্কেল) শম্পা রানী শাহা, মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ দেলওয়ার হোসেন,কুমিরা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ মোরশেদ হোসেন চৌধুরী,চট্টগ্রাম জেলা পূজা কমিটির সভাপতি শ্যামল কান্তি নাথ, উপজেলা সেক্রেটারী স্বপন বনিক, জেলেদের পক্ষে খোকন দাশ বক্তব্য রাখেন।

ত্রিপক্ষীয় সভায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিল্টন রায় জেলে সম্প্রদায়ের পুরুষদেরকে ঘরে ফিরে এসে শান্তি ভাবে বসবাস করার জন্য আহ্বান জানান। পাশাপাশি এ ঘটনায় যে সমস্ত পুলিশ দায়ী তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিবে আশা করি।

অতিঃপুলিশ সুপার শম্পা রানা শাহা বলেন, কোন পুলিশ যদি অন্যায় ভাবে কাউকে হয়রানি করে, তাহলে তাকে জানানোর জন্য বলেন।

ওসি দেলওয়ার হোসেন বলেন,সনাতন ধর্মালম্বীদেরকে পুঁজি করে এক শ্রেণীর লোক তাদেরকে ব্যবহার করে। তবে আমরা নিরপরাদ কাউকে আটক বা হয়রানি করবো না।

সভায় জেলেদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করে বলা,পুলিশের সোর্স শাহাবউদ্দীন, শাহাজান, ইব্রাহিম, বশর ভূল তথ্য দিয়ে গত ২০ মে অনাক্ষাকিত ঘটনা ঘটায়। আর এ ঘটনার জন্য কয়েকজন পুলিশসহ সোর্সরা দায়ী।  জলদাশ পাড়ায় অনাক্ষাকিত ঘটনায় যারা আসামী হয় তাদেরকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার জন্য হিন্দু ঐক্য পরিষদের দাবী জানান।

সমোঝতা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে খোকন জলদাস ‘শান্তি বৈঠকে’ সোমবার রাতে সংঘটিত ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, পুলিশের সাথে থাকা বহিরাগত সন্ত্রাসীরা হামলা ও ভাংচুরসহ তান্ডব চালায়। তাদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি জেলেপল্লীর নারীরাও। অনেক জেলে নারী শ্লীলতাহানীর শিকার হয়েছে। বহিরাগতরা জেলে পাড়ায় ব্যাপক তান্ডব চালালেও পুলিশ নিরাপরাধ জেলেদের আসামী করে মামলা করেছে।

সীতাকুণ্ড মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. দেলওয়ার হোসেন বলেন, পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় ৬শ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলার এজাহারে অভিযুক্ত কোন ব্যক্তি জড়িত না থাকে তাদের চার্জসিট থেকে বাদ দেওয়া হবে।

কুমিরা জেলে পাড়ার সর্দার বাচা দাস বলেন, রুবেল জলদাস ইয়াবা ব্যবসার সাথে কখনো জড়িত ছিলো না। তার বিরুদ্ধে থানায় জিডিও নেই। অথচ পুলিশ তাকে ইয়াবা ব্যবসায়ী সাজানোর চেষ্টা চালায়। আটক করে নিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় লোকজন প্রতিরোধ করে। এতে জেলে সম্প্রদায়ের লোকদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। রাতে পুলিশ ও বহিরাগত কিছু সন্ত্রাসী জেলেপাড়ার তান্ডব চালায় দোকান ও বসতঘর ভাংচুর করে বলে দাবী করেন তিনি।

উল্লেখ যে গত সোমবার রাত আনুমানিক ১১টার দিকে সীতাকুণ্ডের কুমিরা ইউনিয়নের বড় কুমিরা ঘাটঘর জেলেপাড়ায় আসামী ধরাকে কেন্দ্র করে পুলিশের সাথে জেলে সম্প্রদায়ের ব্যাপক সংঘর্ষ  হয়।  পুলিশের বেধড়ক লাঠিপেটা ও গুলিতে অন্তত ৩৫ জন আহত হয়। এ ঘটনায় পুলিশ ৬৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ৬শত জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে পুলিশ।