সীমান্তে এখনো মিয়ানমার সেনাবাহিনীর টহল

0
65

কায়সার হামিদ মানিক, উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি:
মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার হয়ে জীবন বাঁচাতে পালিয়ে এসে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের শূন্য রেখায় আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা সেখান থেকে স্থানান্তরে অনীহা দেখাচ্ছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পার্বত্য জেলাসহ সীমান্তের জিরো পয়েন্টে অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের পর্যায়ক্রমে কুতুপালং ও বালুখালী ক্যাম্পে স্থানান্তর করা হবে- যার পরিপ্রেক্ষিতে এরই মধ্যে বান্দরবান জেলা প্রশাসন ঘুমধুম বাগানপাড়া ও নাইক্ষ্যংছড়ির জিরো পয়েন্ট থেকে তুমব্র“ পশ্চিমকূলে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের কুতুপালং এবং বালুখালীতে স্থানান্তর করেছে। সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বেশিরভাগ রোহিঙ্গাই বাংলাদেশে এসেছে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্ত হয়ে। এরপর তাদের আশ্রয় হয়েছে উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী, বালুখালী, জামতলী, মইনার ঘোনা, তাজনিমার খোলা, শফিউল্লাহ কাটা, মধুরছড়া, লম্বাশিয়া ক্যাম্পে। তবে বান্দরবানের তুমব্র“ ও চাকঢালা সীমান্ত দিয়েও অনেকে এসেছেন। নাইক্ষ্যংছড়িতে থাকা রোহিঙ্গাদের উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে স্থানান্তর করা হয়েছে। কিন্তু তুমব্র“ কোনারপাড়া শূন্য রেখায় অবস্থানকারী রোহিঙ্গা কুতুপালং ও বালুখালী ক্যাম্পে যেতে অনীহা দেখাচ্ছে। রোহিঙ্গারা বলছেন, এখানে আসার পর অনেকেই নানা রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। দীর্ঘ যাত্রার শারীরিক-মানসিক চাপ তারা এখন কাটিয়ে উঠলেও অন্যত্র বসবাসের স্থান নিশ্চিত না হওয়ার আগ পর্যন্ত এখানে থাকতে চান তারা। জেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, ২৫ আগস্টের পরে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্র“ পশ্চিমকূলে আশ্রয় নিয়েছিল প্রায় ২০ হাজার রোহিঙ্গা। তবে এরই মধ্যে তুমব্রু পশ্চিমকূলে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জেলা প্রশাসন উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালীতে ও চাকঢালায় আশ্রিত রোহিঙ্গাদের কুতুপালং ক্যাম্পে স্থানান্তর করা হয়েছে। এ ছাড়াও তুমব্র“ কোনারপাড়ায় আশ্রিত রোহিঙ্গাদের কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গা উখিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে চলে গেলেও এখনও শূন্য রেখায় ৬ হাজারের অধিক রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। সীমান্তের শূন্য রেখায় আশ্রিত রোহিঙ্গা মিয়ানমারের তুমব্র“ রাইট এলাকার মাস্টার দিল মোহাম্মদ জানান, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের শূন্য রেখায় অবস্থানরত রোহিঙ্গারা এখানকার পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে গেছে। কুতুপালং বা বালুখালীতে নিয়ে গেলে আবার তাদের নতুন করে পরিবেশের সঙ্গে খাপ খেয়ে বসবাস শুরু করতে হবে। রোহিঙ্গারা জানান, আমরা কুতুপালং বা অন্য ক্যাম্পে যেতে চাই না। মিয়ানমারে এখনও অনেক রোহিঙ্গা আছে, তারাও এখানে এসে আশ্রয় নেবে। নতুন যারা আসবে, সরকার তাদের কুতুপালং বা বালুখালীতে নিয়ে গেলেই ভালো হবে।’ আরেক রোহিঙ্গা আহমদ কবির বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে আসতে আসতে সবাই অসুস্থ হয়ে পড়েছি। আমার স্ত্রী-ছেলে-মেয়ে সবাই অসুস্থ। এ অবস্থায় তাদের কুতুপালং বা বালুখালীতে নিয়ে যাওয়াটাই কঠিন হবে। তিনি আরও বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে আসার পর আমরা অনেক কষ্ট করে ঘরগুলো তৈরি করেছি। এখন এগুলো ফেলে যেতেও তো খারাপ লাগবে।’ স্থানীয়দের অভিযোগ, সীমান্তের শূন্য রেখায় অবস্থানরত রোহিঙ্গারা দিন দিন আতংকিত হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন মিয়ানমার সেনা বিজিবি ও নাটালা বাহিনীর সদস্যরা কাটা তারের বেড়া ঘেষে এবং তাদেরকে অন্যত্রে চলে যাওয়ার কথা বলছে। সীমান্তের তুমব্র“ এলাকার ছৈয়দ আহমদ জানান, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের তুমব্র“ কোনারপাড়া শূন্য রেখায় রোহিঙ্গারা ৬ মাস ধরে অবস্থান করছে। বান্দরবান জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক বলেন, ‘বর্তমানে যেসব রোহিঙ্গা শূন্য রেখায় অবস্থান করছে তাদের ব্যাপারে সরকার সিদ্ধান্ত দেবে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সেনা টহল বাংকার খনন এগুলো তাদের অভ্যন্তরীন ব্যাপার। কক্সবাজার ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্ণেল মঞ্জুরুল হাসান খান বলেন, তুমব্র“ সীমান্তের পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। তবুও বিজিবি সদস্যদেরকে সতর্ক থাকার কথা বলা হয়েছে।