সৌন্দর্যের শুভলং ঝরনা

0
149

শুভলং ঝরনারাঙামাটি থেকে জলপথে সোজা মাইল আটেক গেলে সৌন্দর্যের ঝরনা শুভলং। রাঙামাটির প্রায় তিন দিকেই কাপ্তাই হ্রদ। এই জলপথ দিয়ে বরকল যাওয়ার আগে দুই পাহাড়ের মাঝে সরু পথটি হচ্ছে শুভলং। উত্তর-দক্ষিণের দিকে বিস্তৃত পাহাড় এখানে ভাগ করে কর্ণফুলী নদী ছিল আগে। শুভলং-এর পুবদিকে হেমন্ত বসন্ত পাহাড়।

কর্ণফুলীর দুই পাড়ের পাহাড় থেকে নেমে এসেছে আটটির মতো ছোট-বড় ঝরনা। বর্ষাকালে এর প্রকৃত রূপ দেখা যায়, শীতকালে পাহাড় বেয়ে কাঁচের জানালা দিয়ে বৃষ্টি নেমে পড়ার মতো শীর্ণ হয়ে যায়।

প্রধান ধারাটি কর্ণফুলীর ডানদিকে, অত্যন্ত কুড়িতলা সমান উঁচু পাহাড় থেকে ঝরনাধারা নামছে পাথুরে খাড়া পাহাড়ের গা বেয়ে। উপরে দুই তৃতীয়াংশ বিপজ্জনক খাড়া, হীরক দ্যুতি ছাড়িয়ে নামছে স্বচ্ছ জল বিস্ফোরিত হয়ে, বল্লম ছুড়ে, আনন্দধারা নিয়ে। তারপর উদ্গত পেটের মতো পাহাড়, চকচকে যেন গর্ভবতী, আরো নিচে পাথরের গোড়ায় কিছু অংশ উঁচু নিচু সমতল। এখানে ঝরনার স্রোতের উপর ছোট্ট সেতু করা হয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য। এখান থেকে পাহাড়ের খোপের শুভলং ঝরনা একত্রে সম্পূর্ণ দেখা যায়। সেতুর তিরিশ ফুট নীচে দিয়ে ঝরনা থেকে উৎপন্ন ছড়া বয়ে গিয়ে কর্ণফুলী বা কাপ্তাই হ্রদে মিশছে।

হ্রদে আছে নানা জাতের গাঙচিল, বড় ও ছোট পানকৌড়ি আর বড় বড় কালচে ভোদর। শীতের আগে আসে প্রচুর পরিযায়ী জলজ পাখি। তখন সৌন্দর্যের ঝিলিমিলি খেলে যায়। ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি নৌকার শব্দে বা তাড়ায় অদূরে আবার ঝাঁপিয়ে নামে। আবার উড়াল, আবার ঝাঁপ। কচুরিপানার উপর তালছোচ খাবার খুঁজছে। এই বিপজ্জনক মাত্রায় বেড়ে যাওয়া কচুরিপানাকে কাজে লাগাতে হবে। কাপ্তাইতে গিয়ে এরা বিপদ সৃষ্টি করছে।

হ্রদের কূলে পাহাড়ের গাছাপালার ফাকে পর্যটনের কুড়েঘর। রাঙামাটির অদূরে ‘পেদা তিং তিং’ রেস্তোরাঁ বা হোটেল। এখানে শুধু সপরিবারে থাকা যায়। পেদা তিং তিং অর্থ পেট টইটম্বুর। মনি স্বপন দেওয়ানের হোটেল আছে শুভলং-এ ঢোকার আগে পাহাড়ের উপর। ওখানে পার্বত্য চট্টগ্রামের নিজস্ব রান্না আছে। সাবেরাং দিয়ে ভর্তা বা মাংস, বাঁশের চোঙায় ভর্তা টাকি মাছ, বাঁশের কোড়ের অপূর্ব রান্না। কলাপাতায় মোড়া বদাখোলা, তেল-মসলা ছাড়া শাক ও তরকারী রান্না। নাপ্পি দিয়ে ভর্তা ও তরকারী আছে। হরিণের শুকনো মাংস রান্না খেয়েছেন? মোষের শুকনো চামড়ার বিশেষ রান্না? শিমুল ফুল রান্না? পাকা বেগুনের সুস্বাদু তরকারি? তেল-ঝাল ছাড়া উচ্ছে শাক, মূলার কচি ফুল ও বীজ আস্ত মূলা সেদ্ধ, শামুক ও কাকড়া লেলম পাতা সেদ্ধ, মারফা (এক রকম শশা), জুমের মিষ্টি ভুট্টা সেদ্ধ, বাঁশের চোঙায় রান্না ঘন লাল ও ঘন কালো বিনি চালের ভাত? অথবা ভাপে রান্না (যাকে স্মোকড রান্না বলে) বিনিভাত? বাঁশের চোঙায় পাতা মোষের দই? বিনি চালের মিষ্টি জগরা? ঝাঁঝালো একরকম পাতার শাক? ওদের রান্নায় তেল ও মশলা নেই। চিংড়ি শুটকির অপূর্ব ব্যবহার ওরা জনে। অনেক রকম কচু ও আলু আছে ওদের। বাহারী এত শাক সবজি আছে যে, সেই স্বাদের বর্ণনা আমি এখানে দিতে পারব না।

সাতটি ছোট ছোট ঝরনা প্রায় অদৃশ্য হয়ে আছে গাছপালার ফাঁকে হ্রদের কূলে। দুই পাহাড়ের গা বেয়ে ওরা নামছে গুন গুন করে কখনও বা উচ্চস্বরে নিজেদের ঘোষণা করছে। এর পানি সুপেয়, নিশ্চিন্তে খেয়ে আপনি খিদে বাড়িয়ে তুলতে পারেন, দীর্ঘজীবন পেতে পারেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম হলো বাংলাদেশের ভূস্বর্গ। তাই সময় পেলে ঘুরে আসুন। জেনে নিন নিজের দেশকে।

যেভাবে যেতে হবে

রাঙামাটি শহর থেকে ইঞ্জিন বোটে শুভলং যেতে সময় লাগে প্রায় দুই ঘন্টা। রিজার্ভ বাজার, তবলছড়ি বাজার এবং পর্যটন কমপ্লেক্স থেকে ইঞ্জিন বোট ভাড়া পাওয়া যায়। যাওয়া আসার ভাড়া ৭০০- ১৫০০ টাকা। যেতে পারবেন ১০ থেকে ২০ জন। সম্প্রতি চালু হয়েছে এই পথে আধুনিক জলযান কেয়ারী কর্ণফুলী। এছাড়া রিজার্ভ বাজার থেকে সকাল থেকে দুপুরের পর পর্যন্ত লোকাল লঞ্চ ছাড়ে বিভিন্ন গন্তব্যে। সকালে উঠলে ফিরতি পথেও পেয়ে যাবেন কোনো লঞ্চ। ঘুরে আসতে পারেন সেসব কোনো লঞ্চেও। শুভলং যতো না সুন্দর, তার চেয়ে আরো সুন্দর এর যাওয়ার পথটি। দুপাশে উঁচু পাহাড় তার মাঝ থেকে নিরবধি বয়ে চলা কাপ্তাই লেক।

কোথায় থাকবেন

থাকার জন্য রাঙ্গামাটিতে সরকারী বেসরকারী অনেকগুলো হোটেল ও গেষ্ট হাউজ রয়েছে। তাছাড়া আরো কিছু বোডিং পাওয়া যায় থাকার জন্য। বোডিংগুলোতে খরচ কিছুটা কম তবেথাকার জন্য খুব একটা সুবিধার নয়। নিন্মে কয়েকটি হোটেল এর বর্ননা দেয়া হলোঃ

(১) পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্স

১২ টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুম রয়েছ। প্রেতিটির ভাড়াঃ ১৭২৫ টাকা
৭টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রনহীন রুম রয়েছে প্রতিটির ভাড়াঃ ৮০৫ টাকা
যোগযোগ
ফোনঃ ০৩৫১-৬৩১২৬ (অফিস)

(২) হোটেল সুফিয়া

২৭ টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুম রয়েছ। প্রেতিটির ভাড়াঃ ৯০০ টাকা (একক), ১২৫০ (দ্বৈত)
৩৫টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রনহীন রুম রয়েছে প্রতিটির ভাড়াঃ ৬০০ টাকা
যোগাযোগ
০৩৫১-৬২১৪৫, ৬১১৭৪, ০১৫৫৩৪০৯১৪৯

(৩) হোটেল গ্রীন ক্যাসেল

৭ টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুম রয়েছ। প্রেতিটির ভাড়াঃ ১১৫০ হতে ১৬০০ টাকা পর্যন্ত
১৬টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রনহীন রুম রয়েছে প্রতিটির ভাড়াঃ ৭৫০ হতে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত
যোগাযোগঃ
০৩৫১-৭১২১৪, ৬১২০০, ০১৭২৬-৫১১৫৩২, ০১৮১৫-৪৫৯১৪৬

এছাড়াও রয়েছে আরো বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হোটেল যেমন * হোটেল জজ * হোটেল আল মোবা * হোটেল মাউন্টেন ভিউ * হোটেল ডিগনিটি * হোটেল সাফিয়া * হোটেল ড্রিমল্যান্ড ইত্যাদি