স্বপ্নের সঙ্গে সাহস থাকলে যে পৃথিবীও জয় করা সম্ভব-জেসিকা ওয়াটসন

0
99

স্বপ্নের সঙ্গে সাহস থাকলে যে পৃথিবীও জয় করা সম্ভবস্বপ্নের সঙ্গে সাহস থাকলে যে পৃথিবীও জয় করা সম্ভব তা আরেকবার প্রমাণ করল অস্ট্রেলিয়ান কিশোরী জেসিকা ওয়াটসন। মাত্র ১৬ বছর বয়সী জেসিকা নৌপথে পুরো দুনিয়া ঘুরে বিশ্বে এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। অনুকরণীয় সাহসী এ কিশোরীর বিজয়ের গল্প শোনা যাক তাহলে-

মাঝ সমুদ্রে পাহাড়সম উঁচু ভয়াল ঢেউ। অন্ধকার রাতে কূল-কিনারাহীন সমুদ্রের ভেতর দুলছে ছোট্ট এক নৌকা! পুঁচকে এক কিশোরী দিনের পর দিন সে নৌকার ভেতর বসে অপেক্ষা করে আছে নতুন এক ভোরের। আলো ঝলমলে কোনো এক সকালে পৃথিবীর সব মানুষ ঘুম ভেঙে ১৬ বছর বয়সী এ ছোট্ট মেয়েটির নাম জানবে। হাত তালি দিয়ে অভিবাদন জানাবে সবচেয়ে কম বয়সী কিশোরী হিসেবে নৌপথে গোটা পৃথিবী প্রদক্ষিণের জন্য।
ভয়কে জয় করে ১৬ বছর বয়সী এক কিশোরীর অসাধ্য সাধনের এ গল্পটাই আজ জানাব তোমাদের। মেয়েটির নাম জেসিকা ওয়াটসন। ১৯৯৩ সালের ১৮ মে অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডে জন্ম নেয় এ মেয়ে। জেসিকা ২০০৯ সালের ১৮ অক্টোবর সিডনি থেকে নৌপথে যাত্রা শুরু করে। প্রশান্ত মহাসাগর, আটলান্টিক মহাসাগর, ভারত মহাসাগর দিয়ে ২০১০ সালের ১৫ মে ২৩ হাজার নটিকেল মাইল অতিক্রম করে সিডনিতে পেঁৗছায় জেসিকা। কারও কোনো সহযোগিতা ছাড়া টানা ৮ মাস একা, নিঃসঙ্গ ভ্রমণ শেষে যখন সে নিজভূমিতে ফিরে আসে, তখন চারপাশে মুহুর্মুহু করতালি, প্রশংসা আর ভালোবাসা ছড়ানো গোটা সিডনির আকাশ। কিন্তু জেসিকার কথাবার্তা শুনে সবাই তো অবাক! নিজেকে খুব সামান্য একজন দাবি করে জেসিকা সবার উদ্দেশে বলে ওঠে, আমি আর পাঁচটা কিশোরীর মতোই খুব সাধারণ একজন, কেবল আমার স্বপ্নটা ছিল নতুন কিছু করার। দেশের জন্য কিছু করার। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী কেভিন রুড তো নাছোড় বান্দা! সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জেসিকাকে ‘অস্ট্রেলিয়ার হিরো’ বলে সম্বোধন তো করলেনই, পাশাপাশি সে যে গোটা অস্ট্রেলিয়ার গর্ব, সে কথাও অকপটে বললেন হাজার মানুষের সামনে। এ কীর্তি গড়েই জেসিকা ২০১০ সালেই জেতেন ‘স্পিরিটস অব স্পোর্ট’ অ্যাওয়ার্ড। একই বছর ‘ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি’ জেসিকাকে ‘অ্যাডভেনচারারস অব দ্য ইয়ার’ পদক দেয়। এরপর ২০১১ সালে অস্ট্রেলিয়া সরকার থেকে ‘ইয়ং অস্ট্রেলিয়ান অব দ্য ইয়ার’ উপাধি পায় এ কিশোরী।

জেসিকা গোলাপি রঙের ‘ইলাস পিংক লেডি’ নামের ছোট্ট যে নৌকাটি করে সারা দুনিয়া প্রদক্ষিণ করেছে, সেটা ছিল মাত্র ৩৪ ফুট লম্বা। আর গোটা নৌকাতে কিন্তু যাত্রী ওই একজনই। স্বপ্নে ভরপুর ১৬ বছর বয়সী কিশোরী জেসিকা ওয়াটসন! ভ্রমণে বের হওয়ার আগে টুনা মাছ, প্রিয় চকোলেট বার, আপেল, পর্যাপ্ত মাংস, প্রেশার কুকার, থালাবাসন ধোয়ার সাবান থেকে শুরু করে অবসরে পড়ার বই সঙ্গে নিয়ে নেয় জেসিকা।

নিউজিল্যান্ডের রজার ও জুলি ওয়াটসন দম্পতির ঘর আলো করে জন্ম নেয় এ কিশোরী। টানা পাঁচ বছর বাবা-মা আর দুই ভাই-বোন নিয়ে সমুদ্রের ভেতর এক ছোট্ট নৌকায় বসবাস করতে করতেই সমুদ্রের প্রতি ভালোবাসা জন্মে যায় এ কিশোরীর। রাতের বেলা মা আদরের মেয়েটিকে ঘুম পাড়ানির জন্য বিখ্যাত লেখক জেসি মার্টিনের লেখা ‘লায়নহার্ট : এ জার্নি অব দ্য হিউম্যান স্প্রিট’ নামের এক বই পড়ে শোনাতেন। আর এ বইয়ের গল্প শুনে শুনেই ১২ বছর বয়সী মেয়েটি নৌপথে সারা পৃথিবীকে ঘুরে দেখার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। এরপর নৌকায় করে সমুদ্র ভ্রমণের ওপর নানা ধরনের সার্টিফিকেট কোর্স, প্রশিক্ষণ, পড়াশোনা, কর্মশালা ও লাইসেন্স সংগ্রহের পাশাপাশি প্রায় ১২ হাজার মাইল দূরত্ব উপকূলীয় ও সমুদ্রপথে নৌকা ভ্রমণের অভিজ্ঞতা অর্জন করে।

টানা ২০০ দিন সমুদ্রের বিস্তীর্ণ জলরাশির মধ্যে একা একা কাটিয়েছে জেসিকা। প্রবল নিঃসঙ্গতা, প্রতিকূল আবহাওয়া, আর সমুদ্রের ১২ ফুট পর্যন্ত উঁচু ঢেউয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করে একটু একটু করে পাড়ি দিয়েছে বড় বড় মহাসাগর। জেসিকার নৌপথে বিশ্বজয়ের এ ঘটনা নিয়ে সমালোচনাও কম হয়নি। কেউ তার বয়সের দিকে আঙুল তুলেছেন, কেউ জেসিকার অতিক্রান্ত দূরত্ব রেকর্ড করার জন্য যথেষ্ট নয় বলেও জানিয়েছেন। কিন্তু এগুলোর পরোয়া করে না এ কিশোরী। স্বপ্নকে সত্যি করার জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়াটাই সবচেয়ে বড় কথা!

আগামীকাল ১৮ মে দুর্দান্ত এ কিশোরীর জন্মদিন।

শুভ জন্মদিন, সমুদ্রকন্যা!

তথ্য সূত্র : গার্ডিয়ান, দ্য টেলিগ্রাফ