স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মদানের স্বীকৃতি পাননি এখলাছুর রহমান

0
93
ফাইল ছবি

বোয়ালখালী প্রতিনিধি:

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি
৭১’র ৪ আগস্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা এখলাছুর রহমান। এ দেশীয় দোসর রাজাকার আলবদর বাহিনী ধরে এনে পাক বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন এ মুক্তিযোদ্ধাকে। রাজাকার বাহিনীর উপর গ্রেনেড ছুড়ে মারায় ছিল তাঁর অপরাধ। সেদিন গ্রেনেড ছুড়ে কয়েকজন রাজাকারকে আহত করতে পেরেছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের ৪৫বছর পরও মেলেনি এ বীরের স্বীকৃতি। মন্ত্রণালয়ের ইস্যুকৃত সনদে তাঁর নাম লেখা হয়েছে মরহুম এখলাছুর রহমান। তবে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সনদ পাননি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ এখলাছুর রহমানের পরিবার। শহীদ এ মুক্তিযোদ্ধার কবরস্থানে নেই কোন স্মৃতিচিহ্ন। ভুলে যেতে বসেছে আগামী প্রজন্মও।

শহীদ মুক্তিযোদ্ধা এখলাছুর রহমানের সহযোদ্ধা ও পরিবারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৭০ সালে এখলাছুর রহমান তখন দুরন্ত কিশোর। কধুরখীল উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণির ছাত্র। তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত ছিলেন। ১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলনে তিনি সাহসী ভূমিকা পালন করেন। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে কিশোর এখলাছের দায়িত্ব ছিল সংবাদবাহকের। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরোচিত নির্যাতন, নিপীড়ন, ধর্ষণ, হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ দারুনভাবে পীড়া দেয় কিশোর এখলাছকে। শত্রু হননের অদম্য স্পৃহা সৃষ্টি হয় তাঁর মধ্যে। ৭১ সালের আগষ্ট মাসের প্রথম সপ্তাহের সোমবার দুপুরে তিনি ছুটে যান ছাত্রইউনিয়নের মহিলাকর্মী মায়া চৌধুরীর কাছে। তাঁর কাছে থাকত দলের অস্ত্র-শস্ত্র। তাঁর কাছে থেকে তিনটি হাত গ্রেনেড সংগ্রহ করেন এখলাছ। উপজেলার কধুরখীল খোকার দোকান এলাকায় চায়ের দোকানে বসেচিলেন এখলাছ। সে সময় রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা কধুরখীল দূর্গাবাড়ীর কাছে পৌঁছলেই এখলাছ তাদের লক্ষ্য করে ছুঁড়ে মারে হাত গ্রেনেড। ১ম টার্গেড লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে রাস্তার পাশে খাদে বিষ্ফোরিত হয়। এরপর হাতে থাকা বাকি দুটি গ্রেনেড ছুড়লে আহত হয় দু’রাজাকার সদস্য। ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে রাজাকাররা। এখলাছ পালিয়ে যেতে পুকুরে ঝাঁপিয়ে পড়েন। রাজাকাররা তাঁকে ধরে বিবস্ত্র করে বেঁধে ফেলে। রাজাকাররা লুঙ্গি দিয়ে পেঁচিয়ে রিক্সাযোগে উপজেলা সদরে আসার পথে লাফ দিয়ে পালানোর চেষ্ঠা করে এখলাছ। সেদিন আর শেষ রক্ষা হয়নি। উপজেলার সদরের রাজাকার ক্যাম্পে অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে নিমর্মভাবে হত্যা করে। পরে ১০ আগষ্ট তাঁর লাশ পায় স্বজনরা। এরপর উপজেলার আকুবদ-ী গ্রামের বৈলতলী মাজার শরীফ সংলগ্ন কবরস্থানে তাঁকে দাফন করেন।
দেশ স্বাধীনের পর তাঁর বিদ্যাপীঠ কধুরখীল উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক মিলনায়তনকে তাঁর নামানুসারে করা হয় ‘শহীদ এখলাছ মিলনায়তন’। হাজিরহাট ইকবাল পার্কের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় শহীদ এখলাছ পার্ক। পরবর্তীতে উদ্যোগ না থাকায় তাও হারিয়ে যায় কালের বির্বতনে।
এ শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের আক্ষেপ, স্বাধীনতা ৪৫ বছরেও শহীদ এখলাছের কোন খোঁজ-খবর নেননি কেউ। এখন পর্যন্ত তাঁর পরিবার স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মদানের স্বীকৃতি স্বরূপ কোন সনদই পাননি। একটি সনদের জন্য তাঁরা বিভিন্ন সময়ে প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে ঘুরতে সম্প্রতি পরপারে চলে গেলেন এ বীর শহীদের মা মছুদা খাতুন। দেখে যেতে পারেনি স্বাধীনতা যুদ্ধে অকুতোভয় বীর সন্তানের স্বীকৃতি।
মুক্তিবার্তা (লাল বই) নম্বর -০২০২০৩০২০৯ এবং মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে শহীদ এখলাছুর রহমান লেখা আছে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় এর স্বারক নং-মুবিম/সা/চট্টগ্রাম/প্র;১৮/২০০২/৪৫৬৮ এ তাঁর নাম লেখা হয়েছে মরহুম এখলাছুর রহমান। শহীদ মুক্তিযোদ্ধাকে মরহুম লিখে ইস্যুকৃত সাময়িক সনদপত্র তাঁদের পরিবারে কোন কাজে আসছে না। পরবর্তীতে নাম সংশোধনের জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব(প্র-৩) এর দৃষ্টি আকর্ষণ করে ইস্যুকৃত সাটিফিকেটে শহীদের স্থানে মরহুম লিপিবদ্ধ হওয়ায় সংশোধনের আবেদন’ শিরোনামে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম স্বারকনং ০০.৫১১.০২৭.০০.১৩.০০২০১০-৭১৮ মূলে ২১/১২/২০১০ইং তারিখে একটি পত্র লেখেন।
বিস্ময়কর হলেও সত্য যে, স্বাধীনতার ৪৫ বছর পার হলেও একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার জাতীয় স্বীকৃতির জন্য দিনের পর দিন, বছরের পর বছর, প্রতীক্ষার প্রহর গুনতে হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের ইস্যুকৃত সাময়িক সনদপত্র সংশোধনের জন্য এ শহীদ পরিবারের আকুতি কবে শুনবে।