মায়ের পরিকল্পনায় ছেলে হলো খুনি

0
72

খুনি মানগরীর বন্দর থানার দক্ষিণ-মধ্যম হালিশহর এলাকার মো.ইলিয়াসের ছেলে সামির ওরফে সামি, ১১ বছরের নিষ্পাপ এক শিশু। জগৎ সংসারে দেনাপাওনা, ক্ষুদ্র সংকীর্ণতা আর স্বার্থের হিসাব ভালভাবে বোঝা হয়ে উঠেনি তার। কিন্তু স্বার্থের বলি হয়ে নির্মম মৃত্যুর শিকার হয়ে তাকে চলে যেতে হয়েছে পরপারে। সৎ মা সামিকে খুন করতে নিজের কিশোর ছেলেকে দিয়ে গঠন করে চার সদস্যের ‘কিলিং স্কোয়াড’।

কিশোর বয়সী চার সদস্য সিনেমার স্টাইলে সামিকে খুনের পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নেয়। একদিন সাগর পাড়ে নিয়ে গিয়ে গলা চেপে ধরে পেটে ঢুকিয়ে দেয় ছোরা। মৃত্যু নিশ্চিত করে একজন সৎ মাকে ফোনে করে জানায়, সামিকে শেষ করে দিয়েছি।

হৃদয়বিদারক এ ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে শিউরে উঠেছেন পুলিশ সদস্যরাও। নগরীর বন্দর থানা পুলিশ টানা তিনদিন অভিযান চালিয়ে স‍ামির সৎ মা এবং কিলিং স্কোয়াডের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছেন।

ঘটনাটা এতই মর্মান্তিক যে চোখের পানি ধরে রাখা যায়না। আর কিশোর ছেলেগুলোকে যে তাকে মারার কাজে ব্যবহার করা হয়েছে, তাদের কর্মকান্ড দেখে মনে হবে তারা প্রশিক্ষিত কোন জঙ্গি সংগঠনের সদস্য। সামিকে মারার জন্য তারা চারজন মিলে চারটি পাহাড় রেকি করে। কিন্তু পাহাড়ে নিতে না পেরে সামিকে নিয়ে যায় সাগর পাড়ে। সেখানে সলিউশন নামে এক ধরনের গাম খাইয়ে তাকে নেশাগ্রস্ত করে। এরপর তাকে হত্যা করে লাশ ফেলে আসা হয়।

গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচজন হল, বন্দর থানার দক্ষিণ মধ্যম হালিশহরের উমরশাহ পাড়ার মো.ইলিয়াসের ছেলে বেবি আক্তার (৩৮), বেবি’র ছেলে ইমতিয়াজ হোসেন (১৬) ও তার তিন ঘনিষ্ঠ বন্ধু একই এলাকার মেহেদি হাসান আকন (১৬), মেহেদি হাসান খাঁন (১৫) ও খালেদ মাহমুদ সুজন (১৬)।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এক মাস আগে জায়গা-জমি নিয়ে বেবি’র সঙ্গে তার সৎ ছেলে পারভেজের ঝগড়া হয়। প্রতিশোধ নিতে বেবি পারভেজের ছোট ভাই সামিকে খুন করার পরিকল্পনা নেয়। বিষয়টি ইমতিয়াজ ও তার তিন বন্ধুকে জানায় বেবি। খুনের বিষয়ে পরিকল্পনা আঁটতে বলে বেবি তাদের ৫ হাজার টাকা দেয়। খুনের পর আরও ২০ হাজার টাকা দেবে বলে বেবি জানায়।

এরপর খালেদ মাহমুদ সুজন সামি’র সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলে। তাকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যাওয়া শুরু করে। অন্যদিকে ইমতিয়াজ ও মেহেদি হাসান খাঁন নগরীর নিউমার্কেট এলাকা থেকে আট’শ টাকায় চাকু, হাতমোজা, ম্যাপ ও লাল স্টেপের একটি গামছা কিনে।

৫ অক্টোবর সুজন সামিকে নিয়ে সাগর পাড়ে বেড়াতে যায়। বন্দর থানার ধুমপাড়া বেড়িবাঁধ এলাকায় বসে তাকে গাম খাইয়ে নেশাগ্রস্ত করে দেয়। ইমতিয়াজ ও মেহেদি হাসান খাঁন আগে থেকেই এলাকায় পাহাড়ায় ছিল। আকন যায় ঘটনাস্থলে।

বিকেল ৪টার দিকে মেহেদি হাসান খাঁনও ঘটনাস্থলে যায়। ৫টার দিকে সুজন নেশাগ্রস্ত সামি’র গলা এবং মেহেদি হাসান খাঁন পা চেপে ধরে। সামি আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছিল, এসময় আকন পেটে ছোরা ঢুকিয়ে দেয়। মৃত্যু নিশ্চিত করে আকন বেবি আক্তারকে ফোন দেয়, ‘সামিকে শেষ করে দিয়েছি। আমাদের ২০ হাজার টাকা দেন। ’

এদিকে সামিকে দু’দিন ধরে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে তার বাবা ৭ অক্টোবর বন্দর থানায় জিডি করেন। ওইদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে ধুমপাড়া বেড়িবাঁধ এলাকায় একটি গর্তের ভেতরে থেকে সামি’র গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

বন্দর থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) মো.কামরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, সামিকে খুন করার পর চার কিশোর বেবি আক্তারের কাছে গিয়ে প্রতিশ্রুত টাকা দাবি করে। এসময় বেবি আক্তার বলে, তোদের লাশ গুম করার কথা বলেছিলাম। লাশ পাওয়া না গেলে টাকা দেব বলেছিলাম। লাশ যখন পাওয়া গেছে, তোরা কোন টাকা পাবিনা।

তবে পরে বেবি আক্তার নিজের ছেলে ও তার তিন বন্ধুকে টাকা দিতে বাধ্য হয় বলে জানান এস আই কামরুজ্জামান।

পুলিশ পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের সঙ্গে নগর ২১ হাজার টাকা এবং হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছোরাও উদ্ধার করেছে।

এ ঘটনায় বন্দর থানায় মামলা দায়ের হয়েছে বলেও জানান এস আই কামরুজ্জামান।