সড়ক দুর্ঘটনা: ২২৪ জন নিহত ও ৮৬৬ জন আহত

0
149

এবারের ঈদুল আজহায় দেশের সড়ক-মহাসড়কে ২০৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২২৪ জন নিহত ও ৮৬৬ জন আহত হয়েছেন। অপরদিকে সড়ক, রেল ও নৌ-পথে সম্মিলিতভাবে ২৪৪টি দুর্ঘটনায় ২৫৩ জন নিহত ও ৯০৮ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেন। প্রতিবেদনে বলা হয় , মোট সড়ক দুর্ঘটনার মধ্যে ৬৭টি ঘটেছে মোটরসাইকেলের সঙ্গে অন্যান্য যানবাহনের সংঘর্ষের কারণে। যা মোট দুর্ঘটনার ৩৩ শতাংশ। অর্ধেকের বেশি পথচারী গাড়িচাপার শিকার হয়েছেন। পথচারীকে গাড়িচাপা দেয়ার ঘটনা ঘটেছে ৫২ দশমিক ২১ শতাংশ। আগামী ঈদে মোটরসাইকেল ও পথচারী গাড়িচাপার ঘটনা এড়ানো সম্ভব হলে সড়ক দুর্ঘটনার ৮৫ শতাংশ কমে আসবে বলে যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদনে ওঠে এসেছে । প্রতিবেদনটি ৬ই আগস্ট থেকে ১৭ই আগস্ট পর্যন্ত সময়ের তথ্য নেয়া হয়েছে। যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের সদস্যরা ৪১টি জাতীয় ও আঞ্চলিক দৈনিক, ১১টি অনলাইন গণমাধ্যমে প্রকাশিত দুর্ঘটনার সংবাদ পর্যবেক্ষণ করে ঈদযাত্রা প্রতিবেদন তৈরি করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ২০৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৭ জন চালক, ৩ জন শ্রমিক, ৭০ জন নারী, ২২ শিশু, ৪২ জন শিক্ষার্থী, ৩ জন সাংবাদিক, ২ জন চিকিৎসক, ৮ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ৩ জন রাজনৈতিক নেতা এবং ৯০০ যাত্রী ও পথচারী ক্ষতিগ্রস্ত হন।
দুর্ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সংঘটিত দুর্ঘটনার ২১ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৫২ দশমিক ২১ শতাংশ পথচারীকে গাড়িচাপা দেয়া, ১৭ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে এবং ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ অন্যান্য অজ্ঞাত কারণে দুর্ঘটনায় পড়েছে। ২৭ দশমিক ৪ শতাংশ বাস, ২৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ-লরি-কাভার্ড ভ্যান, ৭ দশমিক ৮২ শতাংশ মাইক্রোবাস, ১৩ দশমিক ৫২ শতাংশ অটোরিকশা, ৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ নছিমন-করিমন, ৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা-ইজিবাইক এসব দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল।
সংবাদ সম্মেলনে মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সংগঠনটির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেল প্রতিবছরের মতো এবারও এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবছর ঈদকেন্দ্রিক সড়ক দুর্ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় সংগঠনটি ঈদযাত্রায় সড়ক, রেল ও নৌ-পথে দুর্ঘটনা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রী হয়রানির বিষয়টি ২০১৬ সাল থেকে পর্যবেক্ষণ করে আসছে। বিগত ঈদের চেয়ে এবার রাস্তাঘাটের পরিস্থিতি তুলনামূলক ভাল ছিল, নৌ-পথে বেশকিছু নতুন লঞ্চ যুক্ত হয়েছে। রেলপথেও বেশ কয়েক জোড়া নতুন বগি সংযুক্ত হলেও এবারের ঈদে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে নৈরাজ্য, যানজটের ভোগান্তি, রেলপথে সিডিউল বিপর্যয় ও টিকিট কালোবাজারি, ফেরি পারাপারে ভোগান্তিসহ নানা কারণে যাত্রী হয়রানি বেড়েছে। তিনি বলেন, যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চালানো, ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও পণ্যবাহী যানবাহনে যাত্রী বহন, পণ্যবাহী যানবাহন বন্ধের নিষেধাজ্ঞা অমান্য, অদক্ষ চালক ও হেলপার দ্বারা যানবাহন চালানো, বিরামহীন ও বিশ্রামহীন যানবাহন চালানো, মহাসড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, নসিমন-করিমন ও মোটরসাইকেল অবাধে চলাচল, সড়ক মহাসড়কে ফুটপাথ না থাকা, ঈদফেরত যাতায়াতে মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকা বা মনিটরিং শিথিলতা, মোটরসাইকেলে দূরপথে ঈদযাত্রা দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। মোজাম্মেল হক দুর্ঘটনারোধে বেশকিছু সুপারিশও তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের উপদেষ্টা বিআরটিএর সাবেক চেয়ারম্যান আইয়ুবুর রহমান, সহ-সভাপতি তাওহিদুল হক লিটন, যাত্রী অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক কেফায়েত শাকিল ও কনসাস কনজুমার্স সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক পলাশ মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।