হদিস মিলছে না বাংলাদেশের অমূল্য হীরা ‘দরিয়া-ই-নূরের’

0
108

সময়: হদিস মিলছে না বিশ্বের অন্যতম মূল্যবান হীরা কোহিনূরের সিস্টার ডায়মন্ড দরিয়া-ই-নূরের। ১৬৫ বছর আগে ঢাকার নবাবদের কেনা এই হীরকখণ্ড ভূমি মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে বর্তমানে সোনালী ব্যাংকের ভল্টে রয়েছে এমন দাবি কর্তৃপক্ষের।

যদিও এ দাবির পক্ষে সুস্পষ্ট কোনো তথ্য নেই ভূমি মন্ত্রণালয়ে। এমনকি অমূল্য এই হীরকটির হেফাজতের দায়িত্বে থাকা সোনালী ব্যাংকে গিয়েও পাওয়া যায়নি কোনো জবাব। এ অবস্থায় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, তবে কি চুরি হয়ে গেছে রাষ্ট্রের অমূল্য এই সম্পদ।

ডিম্বাকৃতির দশটি হীরকখণ্ড। যার মধ্যমণি অপেক্ষাকৃত বড় একটি হীরা। হলুদ আভা ছড়ানো মাঝের এই হীরকখণ্ডটিই হলো দরিয়া-ই-নূর বা আলোর সাগর। টেবিল আকৃতির এই হীরের ওজন ১৪ থেকে ২৬ ক্যারেট হলেও টাকার অঙ্কে অমূল্য এই রত্ন।

ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের কোল্লুর খনিতে আবিষ্কারের পর বারবার ঠিকানা বদলেছে দরিয়া-ই-নূর। দুর্লভ ও আকর্ষণীয় এই হীরে বহুকাল মারাঠা অধিকারে থাকার পর মোঘল ও পারস্য সম্রাটদের হাত ঘুরে আসে শিখ মহারাজা রণজিৎ সিংহের কাছে। ১৮৫০ সালে পাঞ্জাব দখলের পর রণজিৎ সিংহের উত্তরসূরিদের কাছ থেকে এটি করায়ত্ত করে ইংরেজরা।

১৮৫২ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে ৭৫ হাজার টাকায় এটি কিনে নেন ঢাকার নবাব খাজা আলীমুল্লাহ। আর্থিক দুরবস্থা দেখা দিলে ১৯০৮ সালে নবাব সলিমুল্লাহ সকল সম্পত্তি বন্দক রাখেন ইংরেজদের কাছে। এভাবেই দরিয়া-ই-নূর হাতছাড়া হয় নবাবদের। পরে বিভিন্ন শাসনামলে বিভিন্ন ব্যাংক ঘুরে দরিয়া-ই-নূরের ঠাঁই হয় সোনালী ব্যাংকের ভল্টে।

শত বছরেরও অধিক সময় ধরে লোকচক্ষুর আড়ালে থাকা হীরকখণ্ডটির বর্তমান অবস্থান জানতে ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি একাধিকবার তাগিদ দিলেও কোনো উদ্যোগ নেয়নি মন্ত্রণালয়।

সময় সংবাদের পক্ষ থেকে দিনের পর দিন সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে পাওয়া যায়নি কোনো সহযোগিতা। এমনকি এ সম্পর্কিত সাক্ষাৎকার চেয়ে প্রশ্ন জমা দিলেও মেলেনি উত্তর। হীরেটির অবস্থান নিয়ে যখন এতো ধূম্রজাল, ঠিক তখন খোদ ব্যাংক কর্মকর্তার আশঙ্কা, খোয়া গেছে দরিয়া-ই-নূর।

সোনালী ব্যাংকের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার এম এ নজিবুল হক বলেন, আমি বাইরে থেকে শুনতে পেয়েছি, হীরাটির হদিস সোনালী ব্যাংকে নাই।’

নবাবদের বংশধর খাজা মো. হালিম বলেন, ‘আমাদের মনে সন্দেহ, জনগণের মনেও সন্দেহ আদৌ এটা আছে কি না।’

আইন অনুসারে হীরকখণ্ডটির বর্তমান মালিকানার দাবি করেছে জাতীয় জাদুঘর।

জাতীয় জাদুঘর মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী বলেন, ‘এই হীরকখণ্ডটির বয়স একশত বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। আমরা ইচ্ছা করলে আইন প্রয়োগ করে এটি আমাদের দখলে নিতে পারি।’

ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ বলেন, ‘এটা সোনালী ব্যাংকেই আছে। দেখার জন্য আমরা ব্যক্তিগত কোন কৌতূহল নেই। দরিয়া-ই-নূর এর যদি কোন পরিবর্তন ঘটে যায় এইসব দেখাদেখির ভেতর দিয়ে তাহরে এই দায়বদ্ধতা কে নেবে?’

নবাবমহল আহসান মঞ্জিলে প্রদর্শিত হাতে আঁকা দরিয়া-ই-নূরের ছবি দেখতে আসা দর্শনার্থীদের দাবি, আসল হীরকখণ্ডটির প্রদর্শনী হোক জাদুঘরে।

নবাবদের স্মৃতিচিহ্ন এই আহসান মঞ্জিল ১৯৭৪ সালে নিলামে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। সেসময় বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে কার্যত ধ্বংসের হাত থকে রক্ষা পায় ঐতিহাসিক এই স্থাপনাটি। একই ভাবে নবাবদের ব্যবহৃত অমূল্য রত্নপাথর দরিয়া-ই-নূর ঘিরে চলমান সকল জটিলতা নিরসনে উদ্যোগ নিতে হবে সরকারের সংশ্লিষ্ট পক্ষকেই। এমনটাই মনে করেন গবেষকরা।