হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ৩১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

0
206

রাষ্ট্র অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক চেহারা হারিয়েছে সংখ্যালঘুদের অবস্থান সংকুচিত হচ্ছে- আবুল মোমেন


বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ৩১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ২০ মে জে এম সেন হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উদ্বোধনের ভাষণে একুশে পদক প্রাপ্ত কবি-সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেছেন ’৭১র মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এ ধরণের সংগঠন দাঁড় করানোর কথা ভাবা যায়নি। কিন্তু বাংলাদেশের ’৭৫ পরবর্তী রাজনৈতিক বাস্তবতা এ সংগঠনের জন্ম দিয়েছে। তিনি বলেন, আজও পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন ঘটেনি। পাঠ্যপুস্তকে সাম্প্রদায়িকতা যেভাবে অনুপ্রবিষ্ট হয়েছে বর্তমান সরকারের আমলে তা’ পাকিস্তান আমলেও হয়নি। রাষ্ট্র অসাম্প্রদায়িক চেতনা হারিয়েছে। গণতান্ত্রিক চেহারা হারিয়েছে। সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর অবস্থান ক্রমশ:ই সংকুচিত হয়ে পড়ছে। তিনি বলেন, আকাশ সংস্কৃতি, মুক্ত বাজার অর্থনীতির কারণে ব্যক্তিজীবনের পরিবর্তন ঘটলেও সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক চেহারা ক্রমশ:ই বাড়ছে। যা বৈশ^য়িক লাভ-লাভের সাথে জড়িত। ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা এখনো সুদূর পরাহত। এমনি এক পরিস্থিতিতে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ বিগত তিন দশকেরও দীর্ঘকাল ধরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সাম্য, সমতা ও মানবিক মর্যাদা সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্যে লড়াই করে চলেছে। ধর্মীয় বৈষম্য ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে এ’ লড়াইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে নিতে হবে। চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব চত্বরে বিকেল ৪টায় বেলুন উড়িয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্বোধন করা হয়। এরপর এক বর্ণাঢ্য র‌্যালী নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে তা’ জে এম সেন হলে এসে শেষ হয়। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্রফেসর ড. অনুপম সেন অসুস্থতার কারণে অনুপস্থিত থাকার কারণে তাঁর শুভেচ্ছা বক্তব্য পাঠ করে শোনানো হয়। প্রধান বক্তা ঐক্য পরিষদ কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেন, যে চেতনায় মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সর্বক্ষেত্রে সংখ্যাগুরুর সমান সুযোগ, সম্মান ও অধিকারের জন্য লড়াই করে সেই চেতনাকেই বাস্তবায়ন করতে চাই। ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গীবাদ, মৌলবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজনৈতিক বৈষম্য থেকে মুক্তির জন্য লড়াই করছি আমরা। সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পন আইন, সংখ্যালঘু বান্ধব আইন প্রণয়ন করে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স এর বাস্তবায়ন চাই। আনোয়ারার পন্ডিত নিরঞ্জন চক্রবর্তী’র বসতগৃহ জায়গা-জমি সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যুদের কাছ থেকে ফিরিয়ে দেয়ায় মাননীয় ভূমিমন্ত্রী জনাব সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ-কে ইতিবাচক ভূমিকার জন্য অভিনন্দন জানান এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত। প্রেসিডিয়াম বিশেষ অতিথি ড. জিনবোধি ভিক্ষু বলেন, স্বার্থ ও অধিকার সুনিশ্চিত করণে সংখ্যালঘুদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সাম্প্রদায়িক, অত্যাচার, নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ দেয়াল গড়ে এগিয়ে যেতে হবে। সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় করার জন্যও সরকারের প্রতি তিনি জোর দাবী জানান। বাংলাদেশ খ্রিস্টান এসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও বলেন, ’৭২এর সংবিধান পুন:প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত ঐক্য পরিষদের সংগ্রাম চলবে। বিশেষ অতিথি সাংবাদিক রিয়াজ হায়দার চৌধুরী ঐক্য পরিষদের মানবাধিকার লড়াইকে গণতন্ত্রের সংগ্রাম হিসেবে উল্লেখ্য করে বলেন, ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই মানবাধিকার আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে হবে। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ-চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি প্রকৌশলী পরিমল কান্তি চৌধুরী’র সভাপতিত্বে এবং অধ্যাপক নারায়ণ কান্তি চৌধুরী সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত ৩১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন মহানগর সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নিতাই প্রসাদ ঘোষ, ঐক্য পরিষদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য অধ্যাপক বিকিরণ প্রসাদ বড়–য়া, দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক তাপস হোড়, কেন্দ্রীয় নেতা শুকদেব নাথ তপন, এডভোকেট প্রদীপ চৌধুরী, ডা: গোবিন্দ প্রসাদ মহাজন, কাউন্সিলর নীলু নাগ, আনোয়ারা ইউপি চেয়ারম্যান অসীম দেব, এডভোকেট পরিমল চন্দ্র বসাক, ডা: অঞ্জন কুমার দাশ, জন অর্পন সমাদ্দার, অজিত কুমার শীল, এডভোকেট আশুতোষ দত্ত, মতিলাল দেওয়ানজী, বাবুল দত্ত, দীপংকর চৌধুরী কাজল, ডা: তপন কান্তি দাশ, যামিনী দে, বিজয় কৃষ্ণ দাশ, এডভোকেট রুবেল পাল, সুমন কান্তি দে, বিশ^জিৎ পালিত, বিকাশ মজুমদার, অনুপ রক্ষিত, রুমা কান্ত সিংহ, সুকান্ত দত্ত, রতন আচার্য্য, ডা: রতন নাথ, রিমন মুহুরী, সিজার বড়–য়া, জহরলাল চক্রবর্তী, মানিক চন্দ্র বৈদ্য, মৃদুল চৌধুরী, রিপন সিংহ, অশোক চক্রবর্তী, মুনমুন দত্ত, সুবল দাশ, অমল শিকদার প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। আলোচনানুষ্ঠান শেষে ৩১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ৩১ পাউন্ড ওজনের কেক কাটা হয় এবং প্রবীর পালের উপস্থাপনায় এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পরে প্রীতিভোজের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।