হুমায়ুন আহমেদ তাঁর কর্মে হাসি আনন্দে জীবনকে খুজে পাওয়ার সঞ্জিবনি ছড়িয়ে গেছে আমাদের মাঝে।

0
283

আজ হুমায়ুন আহমেদ এর ১ম প্রয়ান দিবসে শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করছি তাঁকে

মির্জা ইমতিয়াজ শাওন,নিউজচিটাগাং২৪.কম।।বৃহস্পতিবার(১৯.৭.১২) রাত ১১টা ২৫ এর দিকে জানলাম প্রিয় হুমায়ূন আহমেদ আর নেই। আমার আশে পাশের আপন মানুষহুমায়ুন আহমেদ১ গুলোর উপর এক ভয়াবহ শোকের ছায়া বিরাজ করছে (আমার বাবা-মা সাহিত্যের অধ্যাপনা তথা শিক্ষকতায় নিয়োজিত) সে সুবাদে তাদের সাহিত্য সংস্কৃতির জ্ঞানের আলোকে নিজেদের মতো করে বার বার আপসোস করে তাঁর নানা কৃত্তির কথা বললেন। আর ফালগুনী তো শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়লো। সে ভাবতেই পারছিলোনা তার প্রিয় লেখক হুমায়ুন আহমেদ নেই। সে বলছিল এখন কিভাবে হুমায়ুন আহমেদের বই পড়বো। প্রকাশের প্রথম দিনই কিনবো। হিমু, মিসির আলী চরিত্র গুলোর কি আর কোন ঘটনা আমাদের সামনে ভেসে উঠবে না! এক পর্যায়ে তার চোখ বেয়ে পানি গড়াতে লাগলো। বহু কষ্টে তাকে সান্তনা দিলাম।
হুমায়ুন আহমেদকে হারিয়ে আমার মাঝে যে শূন্যতার অনুভূতি হলো তা কিভাবে প্রকাশ করবো এমন ভাষা খুজে পাচ্ছিনা। হুমায়ুন আহমেদকে একবার বইমেলায় সামনে থেকে দেখার সুযোগ হলেও ভিড় ঠেলে কাছে এগুতে পারিনি। তাঁর প্রিয় সমুদ্র বিলাসে (সেন্টস মার্টিন দ্বীপে অবস্থিত) বসে আড্ডার ছলে জোছনা দেখেছি আর তাঁর অদৃশ্য উপস্থিতি টের পেয়েছি।

হুমায়ুন আহমেদ এর সাহিত্য, নাটক, চলচিত্র নিয়ে আমি আলোচনা করার যোগ্যতা এখনো অর্জন করিনি। এটা স্বীকার করে তাঁর একজন পাঠক দর্শক হিসেবে দু চারটি লাইন লিখার সাহস করছি। তিনি তাঁর লিখায় দৈনন্দিন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুলো ফুটিয়ে তুলেছেন স্পষ্ট রূপে তাঁর ক্যানভাস জুড়ে যে ছবি তিনি আঁকতেন তা সবার কাছে ফুটে উঠতো মুহুর্তেই। তিনি এক জাদুকরি শিল্পী সত্ত্বার অধিকারি। তিনি সহজ সরল মাটির ভাষায় সবার হৃদয় জয় করেছেন নিপূনতায়। আর তাঁর চলচিত্রের মাধ্যমে আমার সিনেমা হলে যাওয়া শুরু তাঁর প্রতিটি চলচিত্র আমি হলে বসে দেখেছি অপলক বিমুগ্ধতায়, স্বাধীনতা সংগ্রামের পটভূমিকায় নির্মিত চলচিত্রের বিষয়গুলো আমার হৃদয় তটে নির্মান করে গেছে এক আজিবনের সংগ্রামী ভাসকর্য। তার নাটকগুলো আমাকে বেশ চাঙ্গা করে দিতো। সমাজের নানা ব্যর্থতা, কুসংস্কার, পংকিলতা, হানাহানি, অভাব অভিযোগ যখন আমায় বিরক্ত করে দিতো তখন টিভি সেটের সামনে তাঁর নাটক গুলো রসবোধে, বাস্তবতায়, হাসি আনন্দে যুগিয়েছে এগিয়ে চলার আর জীবনকে খুজে পাওয়ার অন্য সঞ্জিবনী।

ভালো থেকো তুমি। শ্রাবন মেঘের দিনে, চাঁদনী পসর রাতে, ভাটি বাংলার হাওড়- বাওড় নদী- সমুদ্র বিলাসে, লিলুয়া বাতাসে, বইমেলার প্রতিটি ক্ষণে, এক কথায় সারা বছরজুড়ে তোমায় খুব মিস করব।(২১.৭.১২ তারিথে লিখা)

হুমায়ূন আহমেদ জন্ম ১৩ নভেম্বর ১৯৪৮ইং ।বিংশ শতাব্দীর বাঙ্গালি জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে হুমায়ুন আহমেদঅন্যতম। বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী শ্রেষ্ঠ জনপ্রিয় লেখক হিসেবে তাকে বিবেচনা করা হয়। তিনি একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিকার। বলা হয়, বাংলা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের তিনি পথিকৃৎ। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসাবেও তিনি সমাদৃত। ২০১১ পর্যন্ত তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা দুই শতাধিক। বাংলা কথাসাহিত্যে তিনি সংলাপপ্রধান নতুন শৈলীর জনক। অতুলনীয় জনপ্রিয়তা সত্বেও তিনি অন্তরাল জীবন-যাপন করেন এবং লেখলেখি ও চিত্রনির্মাণের কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখেন। তাঁর বেশ কিছু গ্রন্থ পৃথিবীর নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে, বেশ কিছু গ্রন্থ স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভুক্ত। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী তাকে আটক করে এবং নির্যাতনের পর হত্যার জন্য গুলি চালায়। তিনি অলৌকিকভাবে বেঁচে যান। ২০১১-এর সেপ্টেম্বর মাসে তাঁর দেহে আন্ত্রীয় ক্যান্সার ধরা পড়ে। তবে টিউমার বাইরে ছড়িয়ে না-পড়ায় সহজে তাঁর চিকিৎসা প্রাথমিকভাবে সম্ভব হলেও অল্প সময়ের মাঝেই তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক হিসাবে দীর্ঘকাল কর্মরত ছিলেন।হুমায়ূন আহমেদ ২০১২ খ্রিস্টাব্দের শুরুতে জাতিসংঘে বাংলাদেশ দূতাবাসে সিনিয়র স্পেশাল অ্যাডভাইজারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯ জুলাই ২০১২ এই নন্দিত লেখক ক্যান্সার নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের বুলভিল হাসপাতালে মৃত্যু বরণ করেন।