হেফাজতে মৃত্যু, পুলিশ সোর্স আটক

0
91

0_ctgনগরীর পাঁচলাইশ থানা পুলিশের হেফাজতে মো.রোকনুজ্জামান (৪০) নামে নারী নির্যাতন মামলার আসামীর মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের সোর্স জামালকে আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারের পর রোকনুজ্জামানকে মারধরের অভিযোগ আছে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে সোর্স জামালকে আটক করে পাঁচলাইশ থানায় নেয়া হয়।

পাঁচলাইশ থানার ওসি আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, সোর্স জামালকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। মারধরের প্রমাণ পেলে তার বিরুদ্ধে মামলা হবে।

তবে রোকনুজ্জামানকে গ্রেপ্তারকারী এস আই আমির হোসেনের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে তিনি জানান।

এদিকে রোকনুজ্জামানের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনিসুল ইসলাম। তিনি বলেন, সুরতহাল করে লাশের শরীরে আঘাতের কোন চিহ্ন পাইনি। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ রোকনুজ্জামানের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

রোকনুজ্জামানের চাচাত ভাই হারুনুর রশিদ দাবি করেছেন, গ্রেপ্তার করার জন্য রোকনুজ্জামানের বাসায় প্রবেশ করে পুলিশ তার বুকে লাথি মেরেছে। এতে তিনি গুরুতর আঘাত পেয়েছেন।

রোকনুজ্জামানকে গ্রেপ্তারের সময় পুলিশের সঙ্গে বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে গ্রেপ্তার হন প্রতিবেশি ও বীমা কর্মকর্তা আজিজুল হক। তিনি জানান, রোকনুজ্জামানকে গ্রেপ্তারের পর সোর্স জামাল তাকে মারধর করেছে।

বুধবার গভীর রাত দেড়টার দিকে নগরীর বাকলিয়া থানার সৈয়দ শাহ রোডে এ ঘটনা ঘটেছে।

পুলিশ বলছে, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এবং শরীরে সুগারের পরিমাণ অস্বাভাবিক কমে মৃত্যু হয়েছে রোকনুজ্জামানের। তবে এলাকাবাসীর দাবি, পুলিশের নির্যাতনে তার মৃত্যু হয়েছে।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (উত্তর) মো.শহীদুল্লাহ বলেন, ঘটনা শুনে রাত ৩টায় আমি হাসপাতালে গিয়েছিলাম। আমি শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন দেখতে পাইনি। মুখে ফেনা দেখতে পেয়েছি। পরিবার কিংবা এলাকার কেউ আমার কাছে নির্যাতনের কোন অভিযোগ করেনি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, নগরীর বাকলিয়ার একটি আবাসিক এলাকার বাসিন্দা সাবেক বীমা কর্মকর্তা ও বর্তমানে ফ্ল্যাট বিক্রির মধ্যস্থতাকারী রোকনুজ্জামানের বিরুদ্ধে গত ৫ জুন সাজেদা বেগম নামে এক গার্মেণ্টস কর্মী পাঁচলাইশ থানায় একটি ধর্ষণের মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় তাকে গ্রেপ্তারের জন্য বুধবার গভীর রাতে তার বাসায় যান তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পাঁচলাইশ থানার এস আই আমির হোসেন।

পুলিশ বাসায় ঢুকে তাকে গ্রেপ্তার করতে চাইলে রোকনুজ্জামানের স্ত্রীসহ বাসার লোকজন কাঁদতে থাকেন। রোকনুজ্জামানও পুলিশের সঙ্গে যেতে অস্বীকৃতি জানান। এ নিয়ে কথাবার্তার এক পর্যায়ে রোকনুজ্জামান প্যান্ট পরে আসার কথা বলে একটি কক্ষে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন।

এর মধ্যে এলাকার লোকজন বাসার সামনে জড়ো হন। ওই এলাকার বাসিন্দা বীমা কোম্পানির আরেক কর্মকর্তা পুলিশের কাছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেখতে চান। এসময় আমির হোসেন তাকে বলেন, রোকনুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলার আসামী হিসেবে তাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

এস আই আমির হোসেনের সঙ্গে এসময় বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হন বীমা কোম্পানির ওই কর্মকর্তাসহ কয়েকজন। পুলিশ বীমা কোম্পানির ওই কর্মকর্তাকে গাড়িতে তুলে নেন। এর মধ্যে রোকনুজ্জামান বাসা থেকে বের হয়ে আসেন। তাকে পুলিশ গাড়িতে তোলার সময় তিনি ‘আমার খুব খারাপ লাগছে, আমাকে চিনি দাও’ এ ধরনের কথাবার্তা বলে চিৎকার করতে থাকেন। বাসার লোকজন তাকে দ্রুত চিনি দেয়।

পুলিশ গাড়িতে তোলার পর রোকনুজ্জামান গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং শরীর এলিয়ে দেয়। পুলিশ দ্রুত তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো.শহীদুল্লাহ বলেন, চিকিৎসক মৃত্যুর কোন কারণ আমাদের জানাননি। তবে লাশ দেখে যতটুকু মনে হয়েছে, হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাস্থলে তাকে নির্যাতন করার কোন সুযোগ নেই।