১২ দিনের সফরে ঢাকা ছেড়েছেন প্রধানমন্ত্রী

0
64

গ্লোবাল ফান্ড সম্মেলন ও জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভায় যোগ দিতে কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে ১২ দিনের সরকারি সফরে ঢাকা ছেড়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

যাত্রাপথে লন্ডনে একদিন অবস্থানের পর প্রথমে তিনি কানাডার মন্ট্রিলে ‘ফিফথ রিপ্লেসমেন্ট কনফারেন্স অব দ্য গ্লোবাল ফান্ড (জিএফ)’-এ যোগ দেবেন। সেখান থেকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭১তম অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্ক যাবেন তিনি।

তার সফরের সাফল‌্য কামনায় দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়ে শেখ হাসিনা মঙ্গলবার ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, “আমি সকলের দোয়া চাই। যেন যে দায়িত্ব ভোটের মাধ্যমে জনগণ আমাকে দিয়েছে.. যেখানে যাই, যে কাজই করি, বাংলাদেশের মানুষের মানসম্মান যেন সুউচ্চে রাখতে পারি।”

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইটে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে রওনা হন প্রধানমন্ত্রী।

বিমানবন্দরে তাকে বিদায় জানাতে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রিসভার সদস‌্য এবং সামরিক ও বেসামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, তথ‌্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সংসদের প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজ, মুখ‌্য সচিব আবুল কালাম আজাদ বিমানবন্দরে ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে, লন্ডনে সারারাত যাত্রাবিরতির পর ১৫ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সময় দুপুরে এয়ার কানাডার একটি ফ্লাইটে মন্ট্রিল রওনা হবেন শেখ হাসিনা।

এইডস, যক্ষ্ণা ও ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের লক্ষ্যে করণীয় নিয়ে ১৬ ও ১৭ সেপ্টেম্বর মন্ট্রিলে ‘জিএফ’ সম্মেলন হচ্ছে।

শেখ হাসিনা ১৬ সেপ্টেম্বর মন্ট্রিলের হায়াত রিজেন্সিতে এই সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পর বিকালে তিনি একই হোটেলে অন্যান্য রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সঙ্গে সম্মেলনের মিনিস্ট্রিয়াল প্লেজিং মোমেন্ট ও আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনায় অংশ নেবেন। পরে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর দেওয়া নৈশভোজে অংশ নেবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

দ্বিতীয় দিনে শেখ হাসিনা কানাডার প্রধানমন্ত্রী ও গ্লোবাল ফান্ডের নির্বাহী পরিচালক মার্ক ডাইবালের সঙ্গে সম্মেলনে যোগ দেবেন। এছাড়া ‘রিমোভিং বেরিয়ার্স টু হেলথ থ্রো এম্পাওয়ারিং উইমেন অ্যান্ড গার্লস অ্যান্ড রিচিং দ্য মোস্ট মার্জিনালাইজড’ এবং ‘এনগেজিং অ্যান্ড মোবিলাইজিং ইয়ুথ টু মিট দ্য সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় অংশ নেবেন তিনি।

এরপর কানাডার গভর্নর জেনারেল ডেভিড জনস্টনের যৌথ আয়োজনের মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে শেখ হাসিনার।

সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে যোগ দেওয়ার পর শেখ হাসিনা কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। এছাড়া অন্যান্য রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সঙ্গে গ্লোবাল ফান্ড ও গ্লোবাল সিটিজেন আয়োজিত কনসার্টে অংশ নেবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

কানাডা সফর শেষে শেখ হাসিনার ১৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে এয়ার কানাডার একটি ফ্লাইটে নিউ ইয়র্ক পৌঁছাবেন। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাবেন।

জাতিসংঘের অধিবেশনে শেখ হাসিনা (ফাইল ছবি) জাতিসংঘের অধিবেশনে শেখ হাসিনা (ফাইল ছবি)
বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানানোর পর প্রধানমন্ত্রীকে একটি মোটর শোভাযাত্রার মাধ্যমে নিউ ইয়র্কের পার্ক এভিনিউয়ের হোটেল ওয়ার্ল্ডোফ অ্যাস্টোরিয়ায় নিয়ে যাওয়া হবে। নিউ ইয়র্ক সফরে তিনি এ হোটেলেই থাকবেন।

শেখ হাসিনা ১৯ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সদরদপ্তরে উদ্বাস্তু ও অভিবাসনের ওপর সাধারণ পরিষদের উচ্চ পযার্য়ের প্ল্যানারি বৈঠকে ভাষণ দেবেন। এরপর তিনি মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সাং সু চির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন।

ওই দিন বিকালে জাতিসংঘে শেখ হাসিনা ‘গ্লোবাল কমপেক্ট ফর সেফ’, ‘রেগুলার অ্যান্ড অর্ডালি মাইগ্রেশন: টুওয়ার্ডস রিয়ালাইজিং দ্য ২০৩০ এজেন্ডা ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড অ্যাচিভিং ফুল রেসপেক্ট ফর দ্য হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড মাইগ্র্যান্টস’ শীর্ষক গোলটেবিলে কো-চেয়ারের দায়িত্ব পালন করবেন।

প্রধানমন্ত্রী ২০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭১তম অধিবেশনের সাধারণ আলোচনার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। পরে তিনি হোটেল ম্যারিয়ট ইস্টসাইডে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে আয়োজিত কাউন্টার টেররিজমের উপর এশিয়ান লিডার্স ফোরামের বৈঠকে যোগ দেবেন।

পরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আয়োজিত উদ্বাস্তু বিষয়ক একটি বৈঠক এবং এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

২২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সুইজারল্যান্ডের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। ওই দিনই সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী আয়োজিত গ্লোবাল ডিল ইনিশিয়েটিভের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা শেখ হাসিনার।

ওই দিন বিকালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭১তম অধিবেশনের সাধারণ আলোচনায় বক্তব্য রাখবেন শেখ হাসিনা। রাত নিউ ইয়র্কে হোটেল গ্র্যান্ড হায়াতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এবং ২২ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখবেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেওয়ার সময় বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও কমনওয়েলথ মহাসচিব, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের নির্বাহী চেয়ারম্যান এবং বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

শেখ হাসিনা ২২ সেপ্টেম্বর সড়কপথে ভার্জিনিয়ার উদ্দেশে নিউ ইয়র্ক ত্যাগ করবেন এবং ২৫ সেপ্টেম্বর এমিরেটস এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে দেশের উদ্দেশে ওয়াশিংটন ডিসি ত্যাগ করবেন।

সফর শেষে ২৬ সেপ্টেম্বর বিকালে শেখ হাসিনা ঢাকায় ফিরবেন।