২০৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বাকলিয়া এক্সেস সড়ক

0
164

চট্টগ্রামবাসী,বিশেষ করে বাকলিয়াবাসীর জন্য আরও একটি সুখবর। আজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় ২০৬ কোটি টাকা ব্যয়ে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৬০ ফুট চওড়া বাকলিয়া এক্সেস সড়ক প্রকল্প অনুমোদিত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রামের কোন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য টাকার কোন সমস্যা হবেনা।প্রয়োজন সঠিকভাবে প্রকল্প প্রনয়ন ও উপস্থাপন।
বাকলিয়া এক্সেস সড়ক2

বাকলিয়া এক্সেস সড়ক
২০ বছর আগে ঠিক করা জায়গা দিয়ে অবশেষে বাস্তবায়ন হচ্ছে রোডটির। দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৬০ ফুট চওড়া এ সড়ক পাল্টে দেবে নগরীর যাতায়াত ব্যবস’ার চিত্র।
বাকলিয়া এক্সেস (সিরাজ-উদ-দৌলাহ রোড ও শাহ আমানত সেতু সংযোগ সড়ক) নামের এই সড়কটি বাস্তবায়িত হলে কর্ণফুলী সেতু দিয়ে আসা দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষকে আর বহদ্দারহাট দিয়ে ঘুরে শহরে প্রবেশ করতে হবে না। বাকলিয়া বগারবিল ও ডিসি রোড দিয়ে সহজেই সিরাজ-উদ-দৌলাহ রোডে আসতে পারবে।

২০০৯ সালে ডিপিপি (বিস্তারিত প্রকল্প প্রস্তাবনা) প্রণয়নের পর পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদন না পাওয়া প্রকল্পটি এতদিন ঘুমিয়ে ছিল। একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদনের মাধ্যমে ঘুম ভেঙেছে প্রকল্পটির। আজ চুড়ান্ত অনুমোদনের পর অনেকেই সন্তোস প্রকাশ করেছেন।

এর আগে এই এলাকায় যাতে কোনো ভবন নির্মাণ হতে না পারে সেজন্য ২০১৫ সাল থেকে কোনো ভবনের অনুমোদন দিচ্ছে না চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)।
সড়কটি নির্মাণের জন্য ১৯৯৫ সালে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের পর নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাহ রোড থেকে ডিসি রোড, শান্তিনগর ও বগার বিল এলাকা থেকে বহদ্দারহাট-শাহ আমানত সংযোগ সেতু সড়ক পর্যন্ত এলাকায় ভবন নির্মাণের অনুমোদন দিচ্ছে না সিডিএ।
‘বাকলিয়া এক্সেস’ নামের এই সড়কের ডিপিপি (বিস্তারিত প্রকল্প প্রস্তাবনা) ২০০৯ সালে তৈরি করা হলেও এখনো তা আলোর মুখ দেখেনি।

অথচ এই রোডের পরে নগরীর অভ্যন্তরে অনেক নতুন সড়ক নির্মাণ ও সম্প্রসারণ এবং একাধিক ফ্লাইওভার নির্মাণ বাস্তবায়ন হয়েছে। নগরীর উন্নয়নে সিডিএ’র মাধ্যমে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হয়েছে বলে সিডিএ চেয়ারম্যান বিভিন্ন সভা সেমিনারে বক্তব্য দিলেও ২০৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ১ দশমিক ৫৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটির কোনো অগ্রগতি হয়নি।
অভিযোগ রয়েছে, চট্টগ্রামের তৎকালীন একজন সরকারদলীয় রাজনীতিবিদ নিজের আবাসিক এলাকার সামনের রাস্তাটি সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের জন্য বাকলিয়া এক্সেস রোডের অনুমোদন করতে দেয়নি। সেই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে প্রকল্পের নাম পরিবর্তন করে ২১ কোটি ২ লাখ টাকায় ‘ডিসি রোডের সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন’ নামে একটি প্রকল্প একনেক থেকে অনুমোদন করিয়ে নেয়। এই প্রকল্পের অধীনে এখন দিদার মার্কেট থেকে ডিসি রোড হয়ে মিয়ার বাপের মসজিদ পর্যন্ত (প্রায় ইউ আকৃতির) সড়কটি সম্প্রসারণের কাজ সম্প্রতি শেষ হয়েছে।

এতদিন প্রকল্পটির অগ্রগতি না হওয়াকে দুঃখজনক আখ্যায়িত করে সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেন, ‘আমি তিন বছর আগে এই প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য অনেক চেষ্টা করেছিলাম, কিন’ সফল হইনি। বাকলিয়াবাসীর জীবনমান উন্নয়নে ও নগরবাসীর যাতায়াত ব্যবস’ার উন্নয়নের জন্য আবারো প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সক্রিয় হওয়ার পর একনেক সভায় অনুমোদন পাওয়া যায়। ২০৬ কোটি টাকার পুরো অর্থায়ন হবে সরকারি বরাদ্দ থেকে।’

জানা যায়, বাকলিয়া এক্সেস রোডটি সিরাজ দৌলাহ রোডের চন্দনপুরা মসজিদের বিপরীত পাশের গলি দিয়ে ডিসি রোড ক্রস করে বগারবিল হয়ে বাকলিয়া থানার পাশ দিয়ে বহদ্দারহাট-শাহ আমানত সংযোগ সেতুতে যুক্ত হওয়ার কথা।
সেই অনুযায়ী রোড এলাইনমেন্টের জায়গায় কাউকে ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে না। এই সড়কটি নির্মাণ করা গেলে পুরো এলাকার চিত্র বদলে যাবে। এ কথা স্বীকার করে ডিসি রোডের পাশে ১৯৯৬ সালে জায়গা কিনে বাড়ি করেছেন সাবেক সিভিল সার্জন ডা. আবদুল করিম।
তিনি বলেন, ‘আমি জায়গা কেনার সময় শুনেছি এখান দিয়ে একটি ৬০ ফুটের রোড হবে, তখন রোডের এলাইনমেন্ট দেখে রাস্তার পাশে জায়গা কিনেছিলাম। একইভাবে পুরো এলাকায় রাস্তা নির্মাণের জায়গাটির কোথাও বৈধ ভবন নেই। এই সড়কটি হলে কর্ণফুলী ব্রিজ থেকে সহজে চলে আসা যাবে এবং বহদ্দারহাট ঘুরে চলাচল করতে হবে না। পাল্টে যাবে ঘনবসতিপূর্ণ এই এলাকার জীবনচিত্র।’

এদিকে ৬০ ফুট চওড়া এই সড়কটি বাস্তবায়নের জন্য দেওয়ানবাজার, ডিসি রোড, শান্তিনগর ও বগারবিল এলাকার যেখান দিয়ে রোডটি যাবে সেখানে জায়গা খালি পড়ে রয়েছে। আবার কোথাও সেমিপাকা ঘর উঠেছে।

দীর্ঘদিন ধরে এলাইনমেন্টের মাধ্যমে ভবন নির্মাণ করতে না দেয়ায় শুধু ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ ৮০ শতাংশ টাকা খরচ হচ্ছে জানিয়ে সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘মাত্র দেড় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের প্রকল্পে খরচ এত বেশি পড়ার কারণ হলো, মৌজামূল্যের কারণে ভূমি অধিগ্রহণে টাকা বেশি চলে যাচ্ছে। সড়ক নির্মাণ খরচ মাত্র ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকা হলেও ভূমি অধিগ্রহণে চলে যাচ্ছে প্রায় ১৮০ কোটি টাকা।’

২০০৮ সালে ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যানপ্রণেতা ও নগর পরিকল্পনাবিদ স’পতি জেরিনা হোসেনের মতে, এই সড়কটি নির্মাণের জন্য বহু আগেই উদ্যোগ নেওয়ার কথা ছিল। আর সেই উদ্যোগ না নেয়ায় মাস্টারপ্ল্যানে থ্রাস্ট এরিয়া হিসেবে বিবেচিত বাকলিয়া এখন প্রায় অবহেলিত। এই রোড নির্মাণের পাশাপাশি নগরীর ভেতরের রিং রোড ও আউটার রিং রোডগুলো নির্মাণ করা হলে নগরীতে ফ্লাইওভারের প্রয়োজন নেই। বিকল্প রোড নির্মাণ হলে স্বাভাবিকভাবেই যানজট কমে যাবে।’
কোথা দিয়ে যাবে এই রোড?

নগরীর সিরাজ-উদ-দৌলাহ রোডে চন্দনপুরা মসজিদের বিপরীত পার্শ্বে আয়েশা খাতুন লেইন (প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আতাউর রহমান খান কায়সারের বাড়ির পাশে) দিয়ে আড়াআড়িভাবে রোডটি চাক্তাই খালের ওপর দিয়ে চলে যাবে। ৬০ ফুট চওড়া এই রোডটি চন্দনপুরা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের পুকুরের কর্নার দিয়ে আরো কয়েকটি পুকুরের ওপর দিয়ে গিয়ে মিলিত হবে ডিসি রোডের সাথে।

ডিসি রোড থেকে বর্তমানে খালি পড়ে থাকা গনি বেকারির পৈত্রিক সম্পত্তির জায়গার ওপর দিয়ে সোজা চলে যাবে শান্তিনগর মোড়ে। সেখানে একটি জংশন হবে। সেই জংশন থেকে একটি রোড যাবে উত্তর দিকে এবং অপরটি যাবে দক্ষিণ দিকে। আর বাকলিয়া এক্সেস নামের রোডটি যাবে একটু উত্তর-পশ্চিম কোণে বেঁকে বগারবিল। সৈয়দশাহ রোড অতিক্রম করে বাকলিয়া থানার পাশ দিয়ে বহদ্দারহাট-কর্ণফুলী সংযোগ সড়কে মিলিত হবে।

আর উত্তর দিকের রোডটি শান্তিনগর থেকে বগারবিল হয়ে ওমর আলী মাতব্বর রোড অতিক্রম করে এক কিলোমিটারের কাছে বহদ্দারহাট-কর্ণফুলী সেতু সংযোগ সড়কে গিয়ে মিলিত হবে। দক্ষিণ দিকের রোডটি পশ্চিম বাকলিয়া হয়ে কালামিয়া বাজারের পাশ দিয়ে বহদ্দারহাট-কর্ণফুলী সেতু সংযোগ সড়কে গিয়ে মিলবে।