বাড়ি আরও কৃষি ৩০ মন ওজনের গরু এলো বিমান চড়ে

৩০ মন ওজনের গরু এলো বিমান চড়ে

0
244

লাল ও কালোর সংমিশ্রণে প্রকাণ্ডদেহী। হাতির সঙ্গে তুলনা করলে খুব বেশি বেমানান হবে না। গোল মাথায় শিং নেই। তাতে কি! যে কেউ সামনে গেলেই ভড়কে যাবে। শিং না থাকলেও অচেনা মানুষ দেখে তেড়ে আসে সে। গলার ঝুল, লেজ মাটি ছুঁই ছুঁই। বিশাল দুটি কান নেমে গেছে ঘাড়ের কাছে। চলনবলনে রাজার মতো। হাঁটলে মনে হবে যেন হাতি হেঁটে আসছে।

ওর কাছে কেউ ভিড়তে গেলেই লাথি মারে। এই প্রকাণ্ডদেহীর নাম বাদশা । কোরবানি উপলক্ষ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেশ যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস থেকে বাংলাদেশে এসেছে বাদশা। কার্গো বিমানে প্রায় ৩৩ ঘণ্টা আকাশপথ পাড়ি দিয়ে সরাসরি হযরত শাহ্‌জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পৌঁছে বাদশা। মোহাম্মদপুরের সাদিক অ্যাগ্রো ফার্মে রাখা হয়েছে বিশালদেহী ব্রহ্ম জাতের এরকম ৭টি গরু। বাদশাহ এদেরই একটি। তবে বাদশাই সবচে বেশি নজরকাড়া।

সাতটিই শংকর করা ব্রহ্ম জাতের গরু। মার্কিন মুলুকেই বেড়ে উঠেছে বাদশাসহ সবাই। বাদশার বয়স দুই বছর, বাকিগুলোর ১৮ থেকে ১৯ মাস। চলতি বছরের ২১ মে সরাসরি মার্কিন মুলুক থেকে উড়ে এসেছে বাদশা। কোরবানি উপলক্ষ্যে এবারই প্রথম আমেরিকা থেকে সরাসরি আকাশপথে এক সঙ্গে সাতটি ব্রহ্ম জাতের গরুর বাংলাদেশে আসা। গত কোরবানির ঈদে মাত্র একটা গরু আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে আসে।

সাতটি গরুর জন্য বিমান ভাড়া বাবদই খরচ পড়েছে ১৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে বাদশাকে এরই মধেই ২৯ লাখ টাকায় কিনে নিয়েছেন এক ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। তবে কোরবানির ঈদের আগ পর্যন্ত বাদশা থাকবে সাদিক অ্যাগ্রো ফার্মে।

ফার্মের ভেতর ছয়টি রশির সাহায্যে লোহার দণ্ডে বেঁধে রাখা হয়েছে বাদশাকে।

ফার্মের লোকদের দাবি, বাদশার ওজন ১ হাজার ২০০ কেজি। উচ্চতা সাত ফুট, দৈর্ঘ্য ১২ ফুটের কম নয়। তবে অন্য ছয়টি আমেরিকান গরুর প্রতিটির ওজন গড়ে ১১’শ কেজি হবে। বাদশার দাম ২৯ লাখ টাকা হলেও অন্য গরুগুলোর দাম ২২ থেকে ২৫ লাখ টাকা হাঁকা হচ্ছে।

কোরবানি উপলক্ষ্যে আমেরিকা থেকে কোরবানির গরু আমদানি প্রসঙ্গে সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক ইমরান হোসেন  বলেন, সরাসরি কার্গো বিমানে সাতটি গরু আমেরিকা থেকে ঢাকায় এনে ইতিহাস সৃষ্টি করেছি। গতবছর সাহস করে একটি ব্রহ্ম জাতের গরু ঢাকায় এনেছিলাম। দেশের বড় ব্যবসায়ীদের মধ্যে এই জাতের গরুর চাহিদা বেশি। আশা করি পরের বছর আরও বেশি গরু আমেরিকা থেকে কেনা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কার্গো বিমানে তিনটি কন্টেইনারে সাতটি গরু আনা হয়েছে পাঁচ রমজানে।’

পাঁচ থেকে ছয় জন মানুষ গরুগুলোর পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রতিটা গরুকে দৈনিক ৩০ কেজি গম,ভুট্টা, খেসারির ভুসি মিশিয়ে খেতে দেয়া হয়। এর পাশাপাশি খাবার মেন্যুতে রাখা হয় ২৫ কেজি ঘাস ও ৮ কেজি খড়। শুধু তিনবেলা নয়, যখনই বোঝা যায় বাদশার খাই মেটেনি তখনই খাবার দেওয়া হয় ওকে। ঘুমানোর স্থান সব সময় পরিষ্কার রাখা হয়। ২৪ ঘণ্টা সিলিং ফ্যান ঘোরে মাথার উপরে।
লাল ও কালোর সংমিশ্রণে প্রকাণ্ডদেহী গরু। ছবি ও ভিডিও: জিএম মুজিবুর
সাদিক অ্যাগ্রো ফার্মের ম্যানেজার মোহাম্মদ শরিফ বলেন, ‘ট্রাম্পের দেশ থেকে বাদশাসহ সাতটি গরু বিমানে দেশে এসেছে। হাবভাবও রাজকীয়। অপরিচিত কাউকে কাছেপিঠে ভিড়তে দেয় না ওরা। যখন তখন তেড়েফুঁড়ে আসে। সব সময় মারমুখী তেজি ভাব ওদের। তবে পরিচিত হয়ে গেলে কোনো সমস্যা নাই, কাছে গেলেই জিভ দিয়ে শরির চেটে দিতে পছন্দ করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ এমন অনেকেই আছেন যারা সব থেকে বড় গরুটি কোরবানি দিতে পছন্দ করেন। একারণে আমেরিকা থেকে সব থেকে বড় গরু দেশে এনে আমরা ইতিহাস সৃষ্টি করেছি।’>>বাংলানিউজ