‘৩৬০ ডিগ্রি’র দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সমন

0
98

জলবায়ু তহবিলের ‘দুর্নীতি’ নিয়ে সংবাদ প্রচার করার অভিযোগে যমুনা টেলিভিশনের ‘ইনভেস্টিগেশন থ্রি সিক্সটি ডিগ্রি’ নামক অনুসন্ধানমূলক অনুষ্ঠানের প্রতিবেদক সাজ্জাদ পারভেজ ও উপস্থাপক মীর আহসানের নামে মানহানি ও তথ্য প্রযুক্তি আইনে দু’টি মামলা হয়েছে। সাবেক পরিবেশ মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ও তার প্রতিষ্ঠিত এনজিও ‘সুখী বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন’কে নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করার দায়ে মানহানির মামলায় বিবাদীদের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছেন আদালত।

সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কুদরত ই এলাহীর আদালতে মানহানি ও তথ্য প্রযুক্তি আইনের অধীনে পৃথক মামলা দুটি করা হয়।

আদালত মানহানির মামলাটি আমলে নিয়ে যমুনা টেলিভিশনের ‘ইনভেস্টিগেশন থ্রি সিক্সটি ডিগ্রি’র প্রতিবেদক সাজ্জাদ পারভেজ ও উপস্থাপক মীর আহসানের বিরুদ্ধে সমন জারি করেন। মামলাটি দায়ের করেন সাবেক পরিবেশ মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের বিশেষ সহকারি এনায়েতুর রহিম। একই অভিযোগে ‘সুখী বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন’র সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের দায়ের করা তথ্য ও প্রযুক্তি আইনের মামলাটি ২৪ ঘন্টার মধ্যে এজাহার হিসেবে নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিতে রাঙ্গুনিয়া থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

বাদীপক্ষের আইনজীবি এপিপি অ্যাডভোকেট নিখিল কুমার নাথ নিউজচিটাগাং বিষয়টি জানিয়েছেন।

মানহানির মামলায় বাদী এনায়েতুর রহিম অভিযোগ করেন, গত ৫ জুন রাত সাড়ে ৯টায় যমুনা টেলিভিশনের ‘ইনভেস্টিগেশন থ্রি সিক্সটি ডিগ্রি’ নামের অনুসন্ধানমূলক একটি অনুষ্ঠানের প্রতিবেদক ও উপস্থাপক পরস্পরের যোগশাজশে সাবেক পরিবেশ মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও সুখী বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনকে তার সাথে জড়িয়ে ‘মিথ্যা উদ্দেশ্যমুলক ও মান হানিকর’ সংবাদ পরিবেশন করেন। আসামীরা ২১ মিনিটের একটি অনুষ্ঠানে ‘জলবায়ু তহবিলে নয়ছয়’ শিরোনামে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করেন। সেখানে তারা বলেন, ৬৩টি এনজিও জলবায়ু তহবিলের টাকা নিলেও তার মধ্যে ১০টি এনজিও টাকা আত্মসাৎ করেছে। সেখানে সুখী বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনকে জড়ানো হয়েছে। কিন্তু সেই ১০টি এনজিও’র মধ্যে সুখী বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ছিলনা। এছাড়া এই প্রতিষ্ঠান যে চার হাজার এনজিও জলবায়ু তহবিলের জন্য আবেদন করেছিল সেই তালিকায়ও এটির নাম নেই।

২০০৮ সাল থেকে এই সুখী বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান পদ থেকে ড. হাছানা মাহমুদ পদত্যাগ করলেও এখনো তার সম্পৃক্ততার কথা বলা হয়েছে প্রচারিত অনুষ্টানে। এছাড়া বলা হয়েছে রাঙ্গুনিয়া শেখ রাসেল এভিয়রি পার্কে পাখি কেনার নামে ৩৫ কোটি টাকা জলবায়ু তহবিলের নামে আত্মসাৎ করা হয়েছে। অথচ এই টাকা ব্যয় করা হয়েছে সরকারি রাজস্ব থেকে। ইছাখালীর রাবার ড্যামে কাজে দুর্নীতি করে টাকা আত্মসাৎ এবং সুখী বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের নামে বরাদ্দ এনে বায়োগ্যাস প্লান্ট ও বনায়ন না করে ২০০ কোটি আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছিল অনুষ্ঠানে।

এমনকি ড. হাছান মাহমুদের কোন বক্তব্য প্রচার না করে তার স্থিরচিত্র প্রচার করা হয়েছে। যেকারণে সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য হিসেবে তার আন্তর্জাতিক ও সামাজিক সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে। মামলায় রাঙ্গুনিয়ার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম তালুকাদার, সুভাষ চন্দ্র বড়ুয়া ও নুরুল আলমকে সাক্ষী করা হয়েছে।

ড.-হাছান-মাহমুদএছাড়া প্রায় একই অভিযোগ আনা হয়েছে সুখী বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের দায়ের করা তথ্য ও প্রযুক্তি আইনের করা মামলাটিতে। সেখানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০১০ (সংশোধিত ২০১৩) এর ৫৭ ধারা ও কেবল টিলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা ও লাইসেন্সিং বিধি ২০১০ এর ৯ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। এই মামলায়ও রাঙ্গুনিয়ার বাসিন্দা মো. আলী তালুকদার, এমরুল করিম রাশেদ ও বিশ্বজিৎ সাহাকে সাক্ষী করা হয়েছে।

এদিকে মামলার প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে যমুনা টেলিভিশনের ‘ইনভেস্টিগেশন থ্রি সিক্সটি ডিগ্রি’র উপ সম্পাদক অপূর্ব আলাউদ্দিন
বলেন, ‘গত ৫ জুন ‘ইনভেস্টিগেশন থ্রি সিক্সটি ডিগ্রি’র প্রচারিত সংবাদের অনুকূলে সব তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে। এখন যেই অভিযোগ তুলে ড. হাছান মাহমুদের পক্ষে মামলা করছেন সেটিও মিথ্যা। জলবায়ু তহবিল নিয়ে নিউজ করতে তার সাথে কথা বলে গত ৪ জুন সংসদ সদস্য ভবনের ১০২ নম্বর ফ্ল্যাটে যায় টিম ‘ইনভেস্টিগেশন থ্রি সিক্সটি ডিগ্রি’। বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে তার সাক্ষাৎকারও আমরা রেকর্ড করতে থাকি।’

তিনি আরো বলেন, ‘একপর্যায়ে যখন তার প্রতিষ্ঠিত এনজিও ‘সুখী বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন’র কথা উঠে তখনই তিনি এই বিষয়ে বক্তব্য না দিয়ে উত্তেজিত হয়ে যান। এতক্ষণ ধারণকৃত সব ভিডিও ফুটেজ মুছে ফেলতে বাধ্য করান আমাদের টিমের সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক ও ক্যামেরাম্যানকে। এক পর্যায়ে তিনি হুমকি দেন, আমি যে তোমাদের সাথে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছি কিংবা এসব করেছি এগুলো অনুষ্ঠানে প্রচার করো তাহলে তোমাদের চাকরি খাবো এবং মামলা করবো। তবে ড. হাছানের এসব কথা আমাদের গোপন ক্যামেরায় এখনো সংরক্ষিত রয়েছে। এরপরও তার মানসম্মানের কথা বিবেচনা করে আমরা সেটি প্রচার করিনি। এখন মামলার বিষয়টি আমরা আইনগতভাবে মোকাবেলা করব।