৭৩ বছর পরে স্মৃতিচারণে চকরিয়া আর্মি ক্যাম্পে নাইজেরিয়ান সৈনিক

0
90

নাইজিরিয়ান সৈনিক
বি,এম হাবিব উল্লাহ, চকরিয়া প্রতিনিধি- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারার অস্থায়ী যুদ্ধ ক্যাম্পে বার্মা ফ্রন্টে যুদ্ধ করেছিলেন মুরদিমি বুরাতাই নামে এক নাইজেরিয়ান সৈনিক। যা বর্তমানে চকরিয়া আর্মি ক্যাম্প। ওই সময় দায়িত্ব শেষে নিজ দেশে ফিরে গেলেও বাংলাদেশের স্মৃতি ভুলতে পারেননি ওই সৈনিকটি। ভুলতে পারেনটি সেই যুদ্ধের স্মৃতিগুলো। তিনি বারবার ফিরে আসতে চেয়েছেন সেই যুদ্ধস্থানে। তাই দীর্ঘ ৭৩ বছর পর সুদূর নাইজেরিয়া থেকে কক্সবাজারের চকরিয়া সেনা ক্যাম্পে এসেছেন ৯০ বছর বয়সী সাবেক নাইজেরিয়ান সৈনিক ইউসুফ মুরদিমি বুরাতাই। আর এই স্মৃতিচারনের স্বপ্ন পূরন করেন তারই সন্তান নাইজেরিয়ার বর্তমান সেনা প্রধান লেফটেনেন্ট জেনারেল টুকুর ইউসুফ বুরাতাই। ১২মে/১৬, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত তারা স্বপরিবারে মুরদিমি বুরাতাইনের স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো ঘুরে দেখেন। এদিকে তাদেরকে মর্যাদার সাথে নিরাপত্তার মাধ্যমে সহযোগিতা করেন কক্সবাজারের সেনা সদস্যরা। তিনি চকরিয়া বিমান বন্দরে যান, যেখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বিমান উঠা নামা করত। ফাঁসিয়াখালীস্থ আর্মি ক্যাম্পের পিছনের জঙ্গল যান। আর যেখানে তিনি নতুনভাবে সনাক্ত করেছেন তৎকালিন সৈন্যদের কবর। আর এই জায়গাটিকে ওয়্যার সেমিট্রি হিসেবে নির্বাচিত করা হয় কক্সবাজার আর্মি’র পক্ষ থেকে। এছাড়া তিনি মালুমঘাট পয়েন্টে যান, যেই পয়েন্টে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাহাজের মাধ্যমে বার্মা ফ্রন্টে যুদ্ধ হত। আরো ঘুরে দেখেন, ডুলহাজারাস্থ বন বিভাগের গেষ্ট হাউস। যেখানে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন ইউসুফ মুরদিমি বুরাতাই। আর্মি মেজর মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান জানান, ১৯৪২-১৯৪৪ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ৮১ ওয়েস্ট আফ্রিকান ডিভিশনের সদস্য হয়ে এই এলাকায় অবস্থান করে বার্মা ফ্রন্টে যুদ্ধ করেন। দায়িত্ব শেষে দেশে ফিরে গেলেও বাংলাদেশের স্মৃতি ভুলতে পারেননি তিনি। তিনি সন্তানদের এই যুদ্ধস্মৃতির কথা বলতেন। আর দীর্ঘ ৭৩ বছর পর এই স্বপ্ন পূর্ন করেছেন তারই যোগ্য সন্তান টুকুর ইউসুফ বুরাতাই। যিনি বর্তমানে নাইজেরিয়ার সেনা প্রধান। বৃহস্পতিবার দুপুরে নাইজেরিয়ান সেনাবাহিনীর প্রধান তাঁর বাবা, স্ত্রী, ভাই ও অপর পদস্থ কর্মকর্তাসহ ৯ জনের একটি টিম নিয়ে কক্সবাজার পরিদর্শনে আসেন। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বিদেশী এ পরিদর্শক টিম ইউসুফ মুরদিমি বুরাতাই-এর বিশ্ব যুদ্ধকালীন কর্ম এলাকা চকরিয়া উপজেলার চিরিংগা, ডুলহাজারা এবং রামু ও মরিচ্যার বিভিন্ন এলাকা এবং সেনানিবাসের উল্লেখযোগ্য স্থাপণা সমূহ ঘুরে দেখেন। স্মৃতিচারন কালে আবেগী হয়ে উঠেন সাবেক সৈনিক ইউসুফ মুরদিমি বুরাতাই। তাঁর স্মৃতি বিজড়িত স্থানগুলোর দিকে অপলক তাকিয়ে থাকেন। আর খতিয়ে দেখেন সেই স্থনগুলো। যেখানে তিনি বিচরণ করেছিলেন। এসময় তিনি পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের কুনে থেকে পায়ে হেঁটে এই যুদ্ধ ক্যাম্পে আসার স্মৃতিগুলো বর্ণনা করেন। ওই এলাকার বাসিন্দা মৃত মোহাম্মদ সিরাজুল হক চৌধুরীর ছেলে মহিউদ্দিন চৌধুরী জানান, তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালিন ১২ বছরের কিশোর ছিলেন। তিনি মুরদিমি বুরাতাইকে ছিলেন। তার যতটুকু মনে আছে ওই সৈনিক খুব বেশি ফুটবল খেলা পছন্দ করেন। আর সাহসী ছিলেন। বাবার ইচ্ছাপূর্ণ করতে আসা নাইজেরিয়ার সেনা প্রধান লেফটেনেন্ট জেনারেল টুকুর ইউসুফ বুরাতাই বাংলাদেশের প্রশংসা করেন। আর বাবার যৌবন কালের যুদ্ধ করা স্থানগুলো দেখে তিনি আনন্দিত। এসময় তিনি সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশের সাথে একসাথে কাজ করতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ইউসুফ মুরদিমি বুরাতাই বলেন, যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে নিজ দেশে ফিরে কর্মব্যস্ততায় সব কিছু ভুলে যান তিনি। কিন্তু অবসরে যাবার পর একাকি সময়গুলো সেনাজীবনের নানা কর্মব্যস্ততার চিত্র চোখে ভাসতো। এরমাঝে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বাংলাদেশে কাটানো সময়টাও নানান ভাবে নাড়া দিত। তখন খাঁ খাঁ করে উঠতো বুকটা। ইচ্ছে করতো সবুজে ঘেরা সে এলাকা একবার দেখে আসি। তিনি আরো বলেন, কিন্তু তা আমার জন্য অসম্ভব ছিল। কখনো কল্পনাও করিনি ৭৩ বছর আগের কর্ম এলাকায় ফেরা হবে। সে সময়ে যোদ্ধা হিসেবে বীরদর্পে পাহাড় সমতল দাপিয়ে বেড়ানো হয়েছে। কিন্তু বয়সের ভারে আজ হুইল চেয়ার ছাড়া হাটাও সম্ভব হচ্ছে না। এরপরও সন্তানের কর্মপরিধির কারণে স্মৃতিময় এলাকায় আসতে পেরে খোদার কাছে শোকরিয়া জ্ঞাপন করেন ইউসুফ মুরদিমি বুরাতাই। নাইজেরিয়ান এ টিমটি বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন শেষে হেলিকপ্টার যোগে ঢাকার উদ্দেশ্যে বিকেলে কক্সবাজার ত্যাগ করেন। তাঁরা চলে যাবার পর রামু সেনাবাহিনী থেকে দেয়া এক তথ্য বিবরণীতেও ইউসুফ মুরদিমি বুরাতাই এর বিষয়টি তুলে ধরা হয়। সেখানে আরো বলা হয়েছে, নাইজেরিয়ান সেনাবাহিনীর এ সফর ছিল দুদেশের মাঝে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সেতুবন্ধন তৈরী করা।