৯৪ রানের বড় ব্যবধানে হেরে বিশ্বকাপ মিশন শেষ

0
105

পাকিস্তানের কাছে ৯৪ রানের বড় ব্যবধানে হেরে বিশ্বকাপ মিশন শেষ করলো বাংলাদেশ। মূলত ১৯ বছর বয়সী তরুণ পাকিস্তানি পেসার আফ্রিদির বোলিং তোপেই হার মানতে হলো তামিম-সাকিবদের। এই হারে টাইগারদের জয় নিয়ে ফেরার স্বপ্নের এখানেই সমাপ্তি হলো। তবে বড় জয়েও বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয়নি পাকিস্তানেরও। বাংলাদেশকে ৭ রানের মধ্যে অলআউট করতে পারলেই কেবল তা সম্ভব হতো। ফলে ৮ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের সমান ৯ পয়েন্ট নিয়েও নেট রান রেটের ব্যবধানে বাদ পাকিস্তান।

চলতি বিশ্বকাপের বাকি সব ম্যাচে বাংলাদেশ লড়াইয়ের মনোভাব দেখিয়েছে। এমনকি একটা সময় সেমিফাইনালের স্বপ্নও দেখাচ্ছিল। কিন্তু আসরে নিজেদের শেষ ম্যাচে এসে সব উধাও। বাজে বোলিং, বাজে ফিল্ডিং আর শেষে বাজে ব্যাটিং, সব বিভাগেই ব্যর্থ টাইগাররা। একমাত্র উজ্জ্বল তারকা সাকিব আল হাসান। সেটা অবশ্য চলতি আসরের শুরু থেকেই দেখা গেছে। কিন্তু এই ম্যাচে তাকে কেউ সঙ্গও দিতে পারেননি। দলের সেরা পারফর্মার এমনকি পুরো বিশ্বকাপের সেরা পারফর্মার হওয়ার আনন্দ ছাড়া দলের পারফরম্যান্স তার জন্য হতাশারই বটে।

মূলত ১৯ বছর বয়সী শাহিন শাহ আফ্রিদির রেকর্ড গড়া বোলিংয়ের সামনে দাঁড়াতেই পারেননি বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানরা। বিশ্বকাপ ইতিহাসের সবচেয়ে কম বয়সী বোলার হিসেবে ৫ উইকেট তুলে নেওয়ার রেকর্ড গড়েছেন তিনি। এছাড়া সাবেক পাকিস্তানি স্পিনার শহীদ আফ্রিদির রেকর্ড ভেঙ্গে পাকিস্তানের সেরা ওয়ানডে বোলিং ফিগার এখন এই নবাগত বোলারের দখলে। ৯.১ ওভার বল করে ৩৫ রান খরচ করে ৬ উইকেট নিয়েছেন তিনি।

৩১৬ রানের বিশাল লক্ষ্য। কিন্তু শুরুটা মোটেও আশা জাগানিয়া হয়নি বাংলাদেশের। দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার দ্রুত বিদায় নেওয়ার পর চলতি বিশ্বকাপে টাইগারদের বাকি সব ম্যাচের মতো এই ম্যাচেও হাল ধরেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু তাকে সঙ্গ দিতে ব্যর্থ হন মুশফিকুর রহিমও।

১৯ বলে ১৬ রানের ইনিংস খেলে পাকিস্তানি পেসার ওয়াহাব রিয়াজের বলে বোল্ড হয়ে ফিরেছেন মুশফিক। ৪০ বলে ৩২ রান করে আফ্রিদির বলে হারিস সোহেলের হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন লিটন দাসও। ৪১ এরপর ৬৪ রান করে সাকিবও আফ্রিদির শিকার হলে বিপাকে পড়ে যায় বাংলাদেশ।

এরপর আফ্রিদির এক ওভারেই রিয়াদ ও মোসাদ্দেক বিদায় নিলে পরাজয় শুধুই সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। আগের ম্যাচে ফিফটির ইনিংস খেলা মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনও শুন্য রানেই বিদায় নিলে সব আশাই শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের। শেষে ১৪ বলে ২ ছক্কায় ১৫ রান করে শুধু আক্ষেপই বাড়ালেন মাশরাফি। ৪৪.১ ওভার শেষে ২২১ রানেই থেমে যায় বাংলাদেশ।

দলের এমন বাজে দিনেও প্রতি ম্যাচের মতোই উজ্জ্বল সাকিব। চলতি বিশ্বকাপে দলের প্রতি ম্যাচেই মাঠে নেমে নতুন নতুন রেকর্ড গড়াকে স্বাভাবিক বানিয়ে ফেলেছেন তিনি। পাকিস্তানের বিপক্ষে ফিফটি করার পথে তিনি বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ১১০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন। এই রান পূর্ণ করতে এই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের দরকার ছিল ১৮ রান। এছাড়া বিশ্বকাপে রান সংগ্রহের তালিকায় সেরা দশে প্রবেশ করেছেন তিনি। ফলে শচীন টেন্ডুলকার, ব্রায়ান লারা, কুমার সাঙ্গাকারাদের মতো লিজেন্ডদের পাশে নাম লেখান সাকিব।

এর আগে ২০১৯ বিশ্বকাপে রোহিত শর্মাকে সরিয়ে আবারও রান সংগ্রাহকদের তালিকায় শীর্ষ স্থানে উঠে আসেন সাকিব । ভারতের ওপেনার রোহিতকে পেছনে ফেলতে সাকিবের দরকার ছিল ৩ রান। মোহাম্মদ হাফিজকে ৪ মেরে পুনরায় সিংহাসন উদ্ধার করেন বিশ্ব সেরা এই অলরাউন্ডার।

৭ ম্যাচে চার সেঞ্চুরিতে ৫৪৪ রান সংগ্রহ করেছেন রোহিত। ৮ ম্যাচে দুই সেঞ্চুরি ও পাঁচ ফিফটিতে সাকিবের রান এখন পযর্ন্ত ৬০৬ । এক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডে তিন নম্বরে আছেন তিনি। ৬৭৩ রান নিয়ে শীর্ষে আছেন ভারতীয় কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকার। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সাবেক অজি ওপেনার ম্যাথু হেইডেনের রান ৬৫৯।

পাকিস্তান ইনিংসে চতুর্থ ক্রিকেটার হিসেবে ৫ হাজার রান, ২৫০ উইকেট আর ৫০টি ক্যাচ নিয়ে অলরাউন্ডারদের অভিজাত তালিকায়ও নাম লেখান অলরাউন্ডার সাকিব।

এর আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ইমাম-উল-হকের সেঞ্চুরিতে ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ৩১৫ রান সংগ্রহ করে সরফরাজ আহমেদের দল। বাংলাদেশের সেমিফাইনালের স্বপ্ন আগেই ভেঙে গেছে। শেষ চারে যেতে হলে টাইগারদের বিপক্ষে পাকিস্তানের জিততে হতো ৩১৬ রানে। কিন্তু তারা থেমে গেছে ৩১৫ রানে।

পাকিস্তানের ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়ে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বকাপে দুই ম্যাচে ৫ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব গড়েন মোস্তাফিজ। শুধু তাই নয়, বিশ্বকাপ ইতিহাসে মোস্তাফিজ দ্বিতীয় বোলার হিসেবে পরপর দুই ম্যাচে পাঁচ উইকেট নেন। এর আগে ১৯৭৫ বিশ্বকাপে গ্যারি গিলমোর প্রথম এই কীর্তি গড়েন। সেই বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে পাঁচ উইকেট নেন এই অজি পেসার। আর মোস্তাফিজ নিলেন ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে।

এছাড়া প্রথম বাংলাদেশি বোলার হিসেবে ও সবমিলিয়ে দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে লর্ডসের অনার্স বোর্ডে নাম লিখিয়েছেন মোস্তাফিজ। তিনি অনার্স বোর্ডে নাম লেখানো ১২তম বোলার।

এর আগে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে অনার্স বোর্ডে নাম লেখান টাইগার ওপেনার তামিম ইকবাল। ২০১০ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচে তামিম সেঞ্চুরি করে এই কীর্তি গড়েন। এছাড়া আজকের ম্যাচে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে লর্ডসের অনার্স বোর্ডে নাম তোলেন পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান ইমাম-উল-হক।

এছাড়া, ৮ ম্যাচে ২০ উইকেটে নিয়ে এবারের বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছেন মোস্তাফিজ। ২৪ উইকেট নিয়ে শীর্ষে রয়েছেন অজি ফাস্ট বোলার মিচেল স্টার্ক। তবে এতো অর্জন সব ম্লান হয়ে গেছে দলের পরাজয়ে।