জিয়াউর রহমানের ৩৩তম শাহাদত বার্ষিকী আজ

0
97

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৩৩তম শাহাদত বার্ষিকী আজ। ১৯৮১ সালের এই দিনে একদল বিপথগামী সেনা সদস্যের হাতে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউজে নিহত হন তিনি। শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে ১৪ দিনব্যাপী নানা কমসূচি পালন করছে বিএনপি। দলের সকল অঙ্গ সংগঠন নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে স্মরণ করছে মুক্তিযুদ্ধের জেড ফোর্সের অধিনায়ক ও অন্যতম সেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ সকাল ১০টায় জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পমাল্য অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল, রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে দরিদ্রদের মধ্যে কাঙ্গালি ভোজ, রক্তদান কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ কেন্দ্রীয় নেতারা এসব কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকবেন। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্ম ১৯৩৬ সালের ১৯শে জানুয়ারি বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বাগবাড়ি গ্রামে। তার শৈশবের কিছুদিন কাটে বগুড়া ও কলকাতায়। ভারত বিভাগের পর রসায়নবিদ পিতার বদলির সুবাদে তিনি করাচি যান। করাচির একাডেমি স্কুল থেকে ১৯৫২ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করেন। ১৯৫৩ সালে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন কাকুল মিলিটারি একাডেমিতে। ১৯৫৫ সালে তিনি সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট পদ লাভ করেন। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে লাহোর সীমান্তের খেমকারান সেক্টরে ক্যাপ্টেন জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে প্রথম ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট ভারতের আক্রমণ ঠেকিয়ে দেয়। বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে দেয়া হয় পাকিস্তানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সামরিক উপাধি। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ রাত ২৭শে মার্চ তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এরপর তার নেতৃত্বে অষ্টম ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট মুক্তিযুদ্ধ শুরু করে এবং যুদ্ধকালে তিনি প্রথমে সেক্টর কমান্ডার ও পরে জেড ফোর্সের নেতৃত্ব দেন। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য স্বীকৃতিস্বরূপ বীরউত্তম উপাধিতে ভূষিত করা হয় তাকে। ১৯৭৫ সালের ২৫শে আগস্ট নিযুক্ত হন চিফ অব আর্মি স্টাফ পদে। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিচারপতি সায়েম পদত্যাগ করলে ১৯৭৭ সালের ২১শে এপ্রিল তিনি প্রেসিডেন্ট পদে অধিষ্ঠিত হন। এরপর ১৯৭৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর গঠন করেন বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি- বিএনপি।
এদিকে বিএনপি দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ জানিয়েছেন, জিয়াউর রহমানের ৩৩তম শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে আজ সকাল ১০টায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা তার মাজারে পুষ্পমাল্য অর্পণ করবেন। পরে জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের উদ্যোগে মাজার প্রাঙ্গণে দোয়া মাহফিল এবং ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)-এর উদ্যোগে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি পালন করা হবে। একই সঙ্গে সকাল থেকে নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ড্যাব-এর উদ্যোগে মেডিকেল ক্যামপ ও বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেয়া হবে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৩৩তম শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে জেলা ও মহানগরীসহ বিএনপির সকল ইউনিটের কার্যালয়ে আজ ভোর ৬টায় দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন, এবং নিজ নিজ এলাকায় আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিল, তবারক বিতরণ হবে। ওদিকে জিয়াউর রহমানের শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে টানা তিন দিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দরিদ্রদের মাঝে খাবার বিতরণ করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আজ মাজারে ফুল দেয়ার পর শেরেবাংলা নগরের রাজধানী উচ্চ বিদ্যালয় এবং মোহাম্মদপুর টাউন হলের সামনে গরিব-দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ করবেন তিনি। বাকি দু’দিনের খাবার বিতরণের স্থান পরে জানানো হবে। এদিকে জিয়াউর রহমানের শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, মহান স্বাধীনতার বীরোচিত ঘোষণা, স্বাধীনতা যুদ্ধে অসামান্য ভূমিকা এবং রাষ্ট্র গঠনে তার অনন্য কৃতিত্বের কথা আমি গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। ৭১ সালে সারা জাতি যখন স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত, যখন রাজনৈতিক নেতৃত্বের সিদ্ধান্তহীনতায় দেশের মানুষ দিশাহারা ঠিক সেই মুহূর্তে ২৬শে মার্চ মেজর জিয়ার কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে স্বাধীনতার ঘোষণা সারা জাতিকে স্বাধীনতা যুদ্ধের অভয়মন্ত্রে উজ্জীবিত করে। ফলস্বরূপ দেশের তরুণ, যুবকসহ নানা স্তরের মানুষ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। স্বাধীনতা-উত্তর দমনমূলক শাসন শোষণের যাঁতাকলে মানুষের প্রাণ হয় ওষ্ঠাগত, দেশের মানুষের একের পর এক গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা হরণ করা হয়, দেশ একদলীয় সামন্ততান্ত্রিক শাসনের নিষ্ঠুর কবলে পড়ে পিষ্ট হতে থাকে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করে মানুষের বাক ও চিন্তার স্বাধীনতাকে খর্ব করা হয়। সেই সময় দেশের সর্বত্র বীভৎস অরাজকতা নেমে আসে। গণতন্ত্র হত্যা ও অরাজকতার অমানিশার দুর্যোগের মুখে দেশের সিপাহি-জনতার মিলিত শক্তির মিছিলে জিয়াউর রহমান জাতীয় রাজনীতির পাদপ্রদীপের আলোয় উদ্ভাসিত হন। ফিরিয়ে দেন বহুদলীয় গণতন্ত্র এবং সংবাদপত্র ও নাগরিক স্বাধীনতা। তিনি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা করেন। উৎপাদনের রাজনীতির মাধ্যমে দেশীয় অর্থনীতিকে সমৃদ্ধশালী করেন। বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ির আখ্যা থেকে খাদ্য রপ্তানিকারক দেশে পরিণত করেন। এই মহান জাতীয়তাবাদী নেতার জনপ্রিয়তা আধিপত্যবাদী শক্তি কখনওই মেনে নিতে পারেনি। ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই দেশী-বিদেশী চক্র তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে থাকে। এই চক্রান্তকারীরা ১৯৮১ সালের ৩০শে মে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে হত্যা করে। এই মর্মান্তিক ঘটনার মধ্য দিয়ে একজন মহান দেশপ্রেমিককে দেশবাসী হারায়। তবে চক্রান্তকারীরা যতই চেষ্টা করুক কোন ক্ষণজন্মা রাষ্ট্রনায়ককে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিলেই তিনি বিস্মৃত হন না বরং নিজ দেশের জনগণের হৃদয়ে চিরজাগরুক হয়ে অবস্থান করেন। জাতীয় জীবনের চলমান সঙ্কটে শহীদ জিয়ার প্রদর্শিত পথ ও আদর্শ বুকে ধারণ করেই আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে এবং জাতীয় স্বার্থ, বহুমাত্রিক গণতন্ত্র এবং জনগণের অধিকার সুরক্ষায় ইস্পাতকঠিন গণঐক্য গড়ে তুলতে হবে। রণাঙ্গনের অনন্য মুক্তিযোদ্ধা, নির্ভীক নির্মোহ রাষ্ট্রনায়ক শহীদ জিয়ার বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী শক্তির ক্রমাগত বিদ্বেষপূর্ণ আক্রমণের পটভূমিতে তার অম্লান স্মৃতিকে বুকে ধারণ করে এবার ৩০শে মে মহান নেতার শাহাদৎবার্ষিকী সর্বস্তরে ব্যাপকভাবে যথাযথ মর্যাদায় উদযাপনের জন্য দল, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী ও বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন সমূহসহ সকল স্তরের জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব।