যে গাছ রাতের জোনাকী… !

0
177

রাতের জোনাকীসূর্য ডুবে গেলে যদি গাছগুলো জ্বলে উঠত তাহলে কেমন হত? ঘুটঘুটে অন্ধকারে প্রয়োজন হবে না বৈদ্যুতিক বাতি। রাস্তার দু’পাশে থাকবে সাদা, হলুদ, নীলাভ আর সবুজ আলোয় আলোকিত গাছ। অনেকটা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী নির্ভর চলচ্চিত্র ‘অ্যাভাটার’ এর গাছের মত। কেমন হবে সেই আলো?

বাস্তবে ঠিক এ জাতীয় জ্বলন্ত গাছ দেখার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এই ‘গাছ’ আসলে বিশেষ প্রজাতির ছত্রাক। এরা জোনাকির মতো, সামুদ্রিক প্রাণীর মতো এবং অণুজীবের মতো রাতের বেলায় আলো দিতে পারে।

বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘কারেন্ট বায়োলজি’-র জুন সংখ্যায় এই আলোকিত গাছ সংক্রান্ত গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হওয়ার পর সেটা রীতিমত আলোড়ন ফেলে দিয়েছে।

প্রধান ২ গবেষক সাইবেরিয়ার ‘ইনস্টিটিউট অফ বায়োফিজিক্স’-এর কনস্তানন্তিন পুর্তোভ ও মস্কোর ‘ইনস্টিটিউট অফ বায়ো-অরগ্যানিক কেমিস্ট্রি’র ইলিয়া ইয়ামপোলস্কি দেখিয়েছেন, শুধু জোনাকি, মাশরুম বা কয়েকটি অণুজীবই নয়, রাতে, ঘুটঘুটে অন্ধকারে আলো জ্বালানোর চমকে দেওয়া ক্ষমতা রয়েছে কয়েকটি বিশেষ প্রজাতির ছত্রাকেরও। যা, আক্ষরিক অর্থেই, একটি বিরলতম ঘটনা।

ব্রাজিলের গহীন আমাজন অরণ্যে দেখা গেছে বিশাল বিশাল বৃক্ষের গোড়ার দিকে আলোর দ্যুতি বেরিয়ে আসছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মাশরুম থেকে। দু’টোরই কারণ- ‘বায়োল্যুমিনিসেন্স’।

এতদিন জানা ছিল, কিছু প্রাণী বা অণূজীবের কিছু কিছু ‘পিগমেন্ট’ই তাদের ওই আলো-বিচ্ছুরণের ক্ষমতা দেয়। কিন্তু মাশরুম বা ছত্রাক কী ভাবে ওই আলোর জন্ম দেয়, সেটা রহস্যই ছিল। ইয়ামপোলস্কি-পুর্তোভের গবেষণা সেখানেই আলোকপাত করেছে।

তারা দেখিয়েছেন, লুসিফেরিন নামে একটি বিশেষ ধরনের প্রোটিন রয়েছে ছত্রাক আর মাশরুমে। আলো জ্বালাতে পারে যে সব ছত্রাক, ওই প্রোটিন সেই সব ছত্রাকে তো রয়েছেই, যে ছত্রাকগুলো মোটেই আলো জ্বালাতে পারে না।

চিন্তা করুন, রাস্তার মোড়ে মোড়ে এই জাতীয় ছত্রাক সমৃদ্ধ গাছ! এগুলো হয়তো বদলে দেবে সৌন্দর্যের সংজ্ঞাও। আগামী দিনে ল্যাম্পপোস্টের বদলে হয়তো রাস্তার দু’পাশে এই ছত্রাকদের দিয়েই আলোকস্তম্ভ গড়ে উঠবে। তাতে বিদ্যুতের চাহিদা অনেকটাই কমবে। ব্রিটেনে ইতিমধ্যেই সেই স্বপ্নের ‘গ্লোয়িং প্ল্যান্ট প্রোজেক্ট’-এর প্রস্তুতি শুরু করেছে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়।