২০১৫ এর ফ্যাশন সচেতনতা কেমন হতে পারে

0
290

সজীব আহমেদ::
প্রত্যেকটা মানুষ বলতে গেলে ফ্যাশন সচেতনতা নিয়ে মোটামুটি একটু চিন্তা ভাবনা করে। গত ২০১৪ সালটা আমরা পার করে এসেছি। আসুন দেখা যাক এবার কি রকম পরিবর্তন আসতে পারে এই ২০১৫ সালের ফ্যাশনে।বছরের শুরুতে ফ্যাশন কোন লুকে আমাদের দেখাতে চাইছে? কোন ট্রেন্ড পেছনে ফেলে নতুন আউটফিটের মধ্যে প্রবেশ করছি আমরা? নিকট-অতীত আর বর্তমান বুঝে সে ভাবনা চলতেই তো পারে
আন্তর্জাতিক ফ্যাশন জগতে বছরজুড়ে চলে নানান আয়োজন। গত সেপ্টেম্বরেই আভাস পাওয়া ফ্যাশনগেছে এবারের স্প্রিং-সামার ২০১৫ এর ফ্যাশন ট্রেন্ড কেমন হতে পারে। সত্তরের খাকি ও আশির ডিসকো লুক ফিরেছে একটু নতুন ধাঁচে। জাম্পস্যুটে লেদারের ওয়েস্টবেল্ট আর ডেনিম নিয়ে হয়েছে প্যাচওয়ার্কের খেলা। পোলকা ডট এবার সাদা-কালোর মাঝেই সীমাবদ্ধ, যেখানে লেসের তৈরি ফ্যাব্রিক এখনো জনপ্রিয়তার শীর্ষে। আর মেয়েদের জন্য ট্রেন্ডি কালার হিসেবে নীলের ব্রাইট শেডের পাশাপাশি পেল প্যাস্টেল আর ন্যাচারাল নিউট্রাল যেমন বটল গ্রিন প্রাধান্য পেয়েছে। ছেলেদের জন্য নীল, কালো ও সবুজের ডিপ শেডগুলো বেশি দেখা যাবে। এ ছাড়া শিশুদের রঙে রয়েছে হলুদ, গোলাপি ও নীলের উজ্জ্বল মিশেল।
ট্রেন্ড নিয়ে মাতামাতি থাকেই। আমাদের দেশীয় ডিজাইনাররাও কিন্তু বসে নেই। তবে গত দু-এক বছরে চোখে পড়ার মতো কোনো নতুন ফ্যাশন ব্র্যান্ড দেখা যায়নি। হাউজগুলো ঢিমেতালে এগিয়ে যাচ্ছে। যদিও আমাদের দেশে কোন ট্রেন্ড নতুনভাবে আসবে, আগাম ধারণা পাওয়া সহজ নয়। তার পরও আমরা গত কয়েক বছরের ট্রেন্ড পর্যবেক্ষণ করে পূর্বাভাস দিতে পারি। ফাল্গুনের রঙিন বাতাসে আমাদের উৎসব শুরু হয়। লাল-কমলা রঙগুলো এতে প্রাধান্য পেলেও ইদানীং নতুন নতুন রঙ যুক্ত হচ্ছে। লালের সঙ্গে নীল কিংবা কমলা-সবুজের মিশেল উৎসবের আয়োজনকে করবে আরও রঙিন। তবে এবার মনে হচ্ছে, ডিজাইনাররা তাঁতের শাড়িতে জ্যাকারড ডিজাইনগুলোকে বেশি প্রাধান্য দিতে পারেন। আর ছেলেদের পাঞ্জাবিতে থাকতে পারে অল্প কিছু হাতের কাজ। শিশুদের পোশাকে নতুনত্বের চেয়ে বড়দের মিনিয়েচার ভার্সনই বেশি চলবে। ২১ ফেব্রুয়ারি আর ২৬ মার্চের জন্য সাদা-কালো ও লাল-সবুজের ছোঁয়া শুধু পুরো পোশাকের রঙে সীমাবদ্ধ না রেখে কোনো এক বিশেষ দিক যেমন, কামিজের ইয়ক, পাঞ্জাবির হাতা কিংবা শাড়ির কুঁচিতে করা যেতে পারে। এতে যেমন দিবসের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শিত হবে, ব্যক্তিগত সৌন্দর্যও প্রকাশ পাবে।
পয়লা বৈশাখ নিয়ে হাউজগুলোতে চলে থিমেটিক কাজ। এই বছরটাতেও এমন কাজ নিয়েই ডিজাইনাররা হাজির হবেন বলে আশা করা যায়। তবে মোটিফ হিসেবে একতারা, হাতপাখা কিংবা মাটির পুতুলের হুবহু আদলের চেয়ে হাফ ড্রপ ও ফুল ড্রপ হিসেবে এর একাংশ ব্যবহার করা হতে পারে। পুরনো ব্লক ও স্ক্রিন প্রিন্টের ডিজাইন বছরের পর বছর ব্যবহার হয়ে আসছে। নতুন নতুন ডিজাইনের দিকে মনযোগী হয়ে ডিজাইনাররা সৃজন মুনশিআনা দেখাবেন, নতুন বছরে এমন প্রত্যাশা রইলো। এতে সৃষ্টিশীলতায় বৈচিত্র্যের পাশাপাশি নতুন নতুন কাজের ক্ষেত্র তৈরি হবে।
ঈদ আর পূজার উৎসব যখন দরজায় কড়া নাড়ে, তখন ডিজাইনারদের টনক নড়ে। গত দুই বছরে কামিজের লং লেন্থ নিয়ে যখন ভারতবর্ষ তোলপাড়, তখন শেষ মুহূর্তে কিছু ফ্যাশন হাউজে দেখা মিলেছিল জোড়াতালির হিড়িক। সে কারণেই আগে থেকে ট্রেন্ড পর্যবেক্ষণ করে স্থানীয় রীতি অনুযায়ী নির্ধারণ করা উচিত। এতে যেমন আমদানি করা পণ্য কেনা থেকে দেশীয় ক্রেতাদের ফিরিয়ে আনা যাবে, তেমনি দেশীয় ফ্যাশনও চালু হবে। এ ছাড়া ট্রেন্ড নির্ধারণ নিয়ে উন্নয়নমূলক আয়োজন নিয়মিত করা হলে স্থানীয় ফ্যাশন হাউজের পাশাপাশি ফ্যাশন উদ্যোক্তারাও এগিয়ে আসবেন।
গত ঈদে কামিজের প্যাটার্নে অনেকটা পরিবর্তন এলেও ডিজাইনারদের একাংশ সেটা গ্রহণ করেনি। ফ্রক স্টাইল কামিজ ও সিঙ্গেল কামিজ/কুর্তিগুলো প্রতি হাউজে পাওয়া যায়নি। তবে কামিজের এই স্টাইলগুলো ক্রেতাদের কাছে ক্রেজ হিসেবে ছিল। ফলে আগাম ট্রেন্ড নিয়ে ভাবনা যে কতোটা জরুরি, সেটা বেশ টের পাওয়া গেছে।
হাতের কাজের উপর আমাদের ডিজাইনাররা বেশি নজর দিয়ে থাকেন। আসছে ঈদেও তার ব্যতিক্রম হবে না বলেই মনে হয়। কাঁথা সেলাই, ক্রস স্টিচ, যশোর স্টিচ, চেইন স্টিচসহ নানা রকমের হাতের কাজ ভিন্ন ভিন্ন মোটিফের মাধ্যমে পোশাকে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে মোটিফে যদি ভিন্নতা আসে, তাহলে হাতের কাজও হয়ে উঠতে পারে আরও ব্যতিক্রমী ও আকর্ষণীয়। সে ক্ষেত্রে মনে রাখা জরুরি, একই সঙ্গে ব্লক/স্ক্রিন প্রিন্ট, এম্ব্রয়ডারি/হাতের কাজ ব্যবহার করে কাপড়ের দৃঢ়তা না কমিয়ে অর্নামেন্টেশনের পরিমিত ব্যবহার করাটাই ভালো। এতে পোশাকে সিম্পলিসিটি আসে, ক্লাসিক দেখায়।
লেখক: ফ্যাশন ডিজাইনার