পোশাক শিল্পের বর্জ্যের জমজমাট ব্যবসা

0
123

বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দিনে সাড়ে পাঁচশো টনের মতো পোশাক শিল্পের বর্জ্য বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে।

অন্যদিকে এগুলো থেকে দেশেই এখন তৈরি হচ্ছে তুলা, সুতা, এমনকি জামা কাপড়ও।

পোশাক শিল্পের বর্জ্যের জমজমাট ব্যবসাএর সাথে জড়িয়ে রয়েছে বহু মানুষের জীবিকা।

এই ব্যবসার শুরুটা পোশাক কারখানায়।

ঢাকার একটি পোশাক কারখানায় গিয়ে দেখা গেলো সেখানে কাপড়ের মোটা স্তর মেশিন দিয়ে শার্টের প্যাটার্ন অনুযায়ী কাটা হচ্ছে।

তাতে করে যে টুকরো টুকরো কাপড় তৈরি হচ্ছে তা মেঝেতে ফেলে দেয়া হচ্ছে।

ঢাকায় রাইজিং গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ হাসান খান বলছেন, এই গার্মেন্টসে এসব বর্জ্য ফেলার জন্য ভবনের একপাশে তৈরি করা হয়েছে একটি টানেল।

প্রতিটা তলা থেকে বর্জ্যগুলো ঐ টানেলের মাধ্যমে সরাসরি নিচে একটি ঘরে ফেলে দেয়া হয়।

আর সপ্তাহে একবার এগুলো সংগ্রহ করেন ঝুট ব্যবসায়ীরা।

পোশাক শিল্পের বর্জ্য
টুকরো কাপড় বেছে আলাদা করছেন এক কর্মী।

এসব কাপড় অথবা কখনো কখনো সুতো কয়েক হাত ঘুরে পৌছায় দোকানে।

ঢাকার মিরপুর, গাজীপুরের কোনাবাড়ি আর নারায়ণগঞ্জে গড়ে উঠেছে বড় ঝুট পট্টি।

চট্টগ্রামেও রয়েছে এর ব্যবসা।

রাজধানী ঢাকায় মিরপুরে যে যায়গাটি ঝুট পট্টি বলে পরিচিত সেখানে মুল রাস্তা ধরে গেলে আশপাশে অনেক ধরনের টুকরো টুকরো কাপড়ের স্তূপ অথবা বস্তা ভর্তি ঝুট পড়ে থাকতে দেখা যায়।

বাইরে থেকে দেখে হঠাৎ করে বোঝার উপায় নেই যে এখানকার অলি গলি দিয়ে ভেতরে কত শত শত দোকান পুরো এলাকা জুড়ে গড়ে উঠেছে।

এখানে কিছু দুর হেটে একটি দোকানে ঢুকলাম।

টিনের তৈরি অন্ধকার ঘর। ভেতরে বস্তায় ঠাসা ঠাসি।

সুতোর কণায় বাতাস ভারি হয়ে গেছে। তার মাঝে বসে আছেন জিন্না শেখ।

তিনি বলছেন, যেকোনো ধরনের টুকরা কাপড়েই তাদের চলে।

ছোট টুকরা এক কেজি দুটাকায় কেনেন।

টুকরো বড়ে হলে ১০ টাকার মতো।

খবর নিয়ে দেখা গেলো, পোশাক শিল্পের বর্জ্যের বেশ বড় গন্তব্য তুলার মিল।

যেমনটা বলছিলেন, মাহমুদ হাসান খান, যিনি পোশাক মালিকদের সমিতি বিজিএমইএর সহ সভাপতি।

ময়লার সাথে সম্পর্ক রয়েছে বলে অনেকেই এই পেশায় আসতে চান না।

তিনি বলছেন এসব তুলা দিয়ে বালিশ বা লেপ তৈরি হয়। কখনো সুতাও তৈরি হয়।

তুলার মিলে যাওয়া ছাড়াও একটু বড় কাপড় দিয়ে তৈরি হচ্ছে পোশাক যার গন্তব্য ঢাকার বংগ বাজার।

সেখানে সাপ্লাই দেয়ার জন্য প্যান্ট তৈরি করছিলেন, মোঃ শুকুর আলী।

তিনি বলছেন, তাদের পছন্দ গেঞ্জির কাপড়।

ঝুট ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই ব্যবসায় প্রায় ৫০ লাখের মতো মানুষের জীবিকা চলে।

দোকানগুলোতে নারী কর্মীর সংখ্যাই বেশি চোখে পড়লো।

মাজেদা বেগম বলছিলেন তিনি আকৃতি ও রঙ অনুযায়ী কাপড়গুলো আলাদা করেন এবং তারপর বস্তায় ভরে রাখেন আর একাজের জন্য মাজে তিন হাজার টাকার মতো পান।

মিরপুরেই কয়েকটি দোকানে চোখে পড়লো একটি দুটি পুরনো দিনের স্পিন মেশিন।

সেখানে রিসাইকেল করা সুতো স্থানীয় দর্জিরা নিচ্ছেন অথবা সেগুলো আবার কখনো কখনো গার্মেন্টসেই ফেরত যাচ্ছে।

ঝুট দেয়ে বানানো হচ্ছে ম্যাট্রেস।

এতো গেলো ঝুট দিয়ে এখন কি হচ্ছে তার নানা বৃত্তান্ত।

এই ব্যবসার সাথে জড়িতরা বলছেন এই আবর্জনার রয়েছে আরো অনেক সম্ভাবনা।

দেশের ভেতরে এবং দেশের বাইরে রপ্তানিতে।

ঝুট রপ্তানিতে জড়িত আশুলিয়ার মহির হোসেন ভুট্টো।

তিনি বলছেন প্রতিদিন চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দিনে ২০ কন্টেইনারের মতো পোশাক শিল্পের বর্জ্য বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে।

পোশাক শিল্পের বর্জ্য
মিরপুরে একটি দোকানে চলছে সুতো রিসাইক্লিং এর কাজ।

প্রতি কন্টেইনার পণ্যের দাম ১৫ হাজার ডলারের মতো অর্থাৎ দিনে প্রায় আড়াই কোটি টাকা আয় হচ্ছে।

এছাড়া স্থল পথে ভারতে যাচ্ছে আরো অনেক। যার ঠিক পরিপূর্ণ হিসেব নেই।

মি ভুট্টো বলছেন, বাংলাদেশে ঝুটের মূল্য এখনো বোঝেননি অনেকে।

বিশ্বব্যাপী রিসাইকেল করা পণ্যের রয়েছে আলাদা মর্যাদা।

বিজিএমইএর সহ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলছেন, সেই মর্যাদা পেতে পারে বাংলাদেশের ঝুট দিয়ে তৈরি পণ্যও।

শুধু দরকার ব্রান্ডিং এজন্য সহায়তা লাগবে কোন বড় ফ্যাশন হাউজের।

বিসিকের মতো সরকারি সংগঠন সহজেই ঝুট পণ্যকে প্রচার করতে পারে।

বাংলাদেশে ঝুট অথবা এর সাথে জড়িত অন্যান্য ব্যবসা চলছে অগোছালো ভাবে।

ময়লার সাথে সম্পর্ক রয়েছে বলে শিক্ষিতরা এই পেশায় আসতে চান না।

মিরপুরে কাটা কাপড় ব্যবসায়ীর সমিতির নিরীক্ষক মোঃ সেলিম বলছেন এই ব্যবসা দিয়ে তারা পোশাক শিল্পে তৈরি ব্যাপক পরিমাণে যে আবর্জনা তা পরিষ্কারের দায়িত্ব তারাই পালন করছেন কিন্তু তাদের প্রায়ই হেনস্তা হতে হয়।

বাংলাদেশে ঝুটের ব্যবসা নিয়ে প্রায়ই শোনা যায় মারামারি, স্থানীয় প্রভাবশালীদের মাস্তানি আর খুন খারাবির খবর।

কিন্তু ঘিঞ্জি ময়লা ঝুটের দোকানে কাজ করে জীবিকা চলে যাচ্ছে বহু মানুষের।>> বিবিসি