মুখরিত সিঙ্গাপুর মার্কেট, লাকি প্লাজা, আখতারুজ্জামান ও সাউথল্যান্ড সেন্টার

0
638

উৎসবের আমেজ, মুখরিত আগ্রাবাদ ফুটপাত থেকে শুরু করে অভিজাত শপিং মল- সর্বত্রই জমজমাট ঈদের বাজার। সকাল থেকে সেহেরি পর্যন্ত সরগরম থাকছে ঈদ বাজার। কেনাবেচা জমে উঠায় খুশি জনপ্রিয় সিঙ্গাপুর ব্যাংকক মার্কেট,  ঐতিহ্যবাহী লাকি প্লাজা, অভিজাত শপিং সেন্টার আখতারুজ্জামান সেন্টার ও সাউথল্যান্ড সেন্টার এবং আশপাশের ফুতপাতের ব্যবসায়ীরা ব্যবসায়ীরা।
আখতারুজ্জামানআগ্রাবাদ, হালিশহরবাসীর কেনাকাটা করতে আসতেই হবে বাদামতলী মোড়ে। শপিংয়ের জন্য এলাকাবাসীর রয়েছে ৪টি জনপ্রিয় বিকল্প- জনপ্রিয় সিঙ্গাপুর ব্যাংকক মার্কেট, ঐতিহ্যবাহী লাকি প্লাজা, অভিজাত শপিং সেন্টার আখতারুজ্জামান সেন্টার ও সাউথল্যান্ড সেন্টার।
১৯৮৫ সালে আগ্রাবাদ এলাকার একমাত্র শপিং সেন্টার ছিল লাকি প্লাজা। প্রতিষ্ঠা করেছিলেন দেলোয়ার হোসেন। তবে ১৯৯১ সালে পুরোদমে চালু হয় মার্কেটটি। ১৯ বছর পরে ২০০৪ সালে গড়ে ওঠে সিঙ্গাপুর ব্যাংকক মার্কেট। নগরে বিদেশি পণ্যের জন্য একমাত্র স’ান ছিল এটি। জানা যায়, সিঙ্গাপুর ব্যাংকক মার্কেট পূর্বে পরিচিত ছিল ‘দুবাই মার্কেট’ হিসেবে। বিদেশ থেকে জাহাজের পণ্য আসতো এখানে। আর নগরবাসী হুমড়ি খেয়ে পড়তো বিদেশি জিনিসপত্র কিনতে। বিদেশি পণ্য পাওয়ার ঐতিহ্য থেকেই এ মার্কেটের নাম রাখা হয় ‘সিঙ্গাপুর ব্যাংকক মার্কেট’। ২০১০ সালে বাদামতলী মোড়েই প্রতিষ্ঠিত হয় আগ্রাবাদ ও হালিশহর ওয়ার্ডের একমাত্র অভিজাত শপিং সেন্টার ‘আখতারুজ্জামান সেন্টার’। এ অভিজাত শপিং সেন্টারের পর আগ্রাবাদ এলাকার চেহারাই বদলে যায়।

নগরীর বাণিজ্যিক কেন্দ্র আগ্রাবাদে আখতারুজ্জামান সেন্টারের অবস্থান। ঐ অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য কোন শপিংমল না থাকায় আখতারুজ্জামান সেন্টারকেই দূরত্ব ও চাহিদার সমন্বয়ক হিসেবে বেছে নেন ক্রেতারা। আর ঈদকে ঘিরে সে চাহিদা যেন আকাশ তুঙ্গে। নগরীর দেওয়ানহাট, চৌমুহনী, আগ্রাবাদ, বারিক বিল্ডিং, বন্দরটিলা, হালিশহর, ইপিজেড, স্টিল মিল, কাটগড় ও পতেঙ্গা এলাকা মিলিয়ে বিশাল সংখ্যক ক্রেতা সমাগম ঘটে এই মার্কেটে। শেষ মুহুর্তের কেনাকাটায় এখন জমজমাট শপিংমলটি। ক্রেতারা যেমন তাদের পছন্দের পোশাক কিনতে মরিয়া তেমনি বিক্রেতারাও চাইছেন, কাস্টমার যেন খালি হাতে না ফেরেন। এবারের ঈদ বেচাকেনায় সন্তোষ প্রকাশ করে আখতারুজ্জামান সেন্টার দোকান মালিক ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব হুমায়ুন কবির বলেন, এখন পর্যন্ত ভালোই বিক্রয় হচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীরাও খুশি। শনিবার বিকেলে আখতারুজ্জামান সেন্টার ঘুরে দেখা যায়, নানা বয়সী ক্রেতায় মুখর মার্কেটের প্রতিটি ফ্লোর। তরুণী ও মহিলাদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো দোকানদারও বিপুল ক্রেতা সমাগম দেখে উচ্ছ্বসিত।

লাকি প্লাজাআগ্রাবাদ, হালিশহর, পতেঙ্গা ওয়ার্ডের একমাত্র অভিজাত ও আধুনিক শপিং সেন্টার আখতারুজ্জামান সেন্টার। শুধু এ তিন ওয়ার্ড নয়, পুরো চট্টগ্রামের গুটিকয়েক অভিজাত শপিং সেন্টারের মধ্যে এটি অন্যতম। ২০১০ সালে ২৮০টি দোকান নিয়ে শুরু হয় এ শপিং সেন্টারটি। আধুনিক ও ব্র্যান্ডের সব ধরণের পণ্য রয়েছে এ মার্কেটে। আধুনিক খাবারের দোকানের জন্য তরুণদের আনাগোনা লেগেই থাকে সবসময়।
তবে অভিজাত মার্কেট বলে এখানে জিনিসের দাম মোটেও আকাশছোঁয়া নয়। আখতারুজ্জামান সেন্টার শুরু থেকে টার্গেট করে এসেছে ক্রেতাদের সুলভমূল্যে উন্নত সেবা। জানালেন আখতারুজ্জামান সেন্টার দোকান মালিক ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক। তিনি সুপ্রভাতকে বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের ন্যূনতম লাভ রেখে পণ্য বিক্রি করা হয়। আমাদের দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প রয়েছে। এখানে কিডস পার্ক, জিমসহ নতুন নতুন সেবা যোগ করা হবে। ক্রেতাদের সেবা বেশি দেয়ার ক্ষেত্রেই নজর দেয়া হয় বেশি।’
সরেজমিনে দেখা যায়, তিনটি মার্কেটের চিত্র ভিন্ন হলেও ভিড় সমান। নারীদের ব্যবহার্য সকল পণ্যের জন্য সুপরিচিত লাকি প্লাজা। আর সিঙ্গাপুর ব্যাংকক মার্কেট বর্তমানে প্রসিদ্ধ সুলভমূল্যে মোবাইল ফোনের জন্য। আখতারুজ্জামান সেন্টার বর্তমানে আধুনিক পণ্য ও সেবার মাধ্যমে ক্রেতা আকৃষ্ট করছে।
বহু সংস্কার কাজের পরও অবকাঠামোগতভাবে একই চিত্র লাকি প্লাজার। বর্তমানে এখানে রয়েছে ২৫২টি দোকান। প্রায় সবগুলোই নারী ক্রেতাদের জন্য। মধ্য ও নিম্নবিত্তের মার্কেট হিসেবে পরিচিত লাকি প্লাজায় রয়েছে থান কাপড়, শাড়ি, স্বর্ণালঙ্কার, যাবতীয় পোশাক, জুতো, দর্জি ও খাবারের দোকান। জানা যায়, সিঁড়িগুলো টাইলসের করা হয়েছে ক’বছর আগে। এছাড়া লাকি প্লাজা দোকান মালিক সমিতির পক্ষ থেকে মার্কেটের দেওয়ালে ফলস সিলিং দেয়াসহ পুরো মার্কেটে জেনারেটরের ব্যবস’া করা হয়।
আলাপ হয় লাকি প্লাজা দোকান মালিক ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘লাকি প্লাজাতে সাশ্রয়ী মূল্যে সব পণ্য পাওয়া যায়। আমাদের নির্দেশনা দেয়া আছে ক্রেতার সঙ্গে যাতে ভালো ব্যবহার করা হয়। পণ্য পেতে যাতে ক্রেতাদের কোনো অসুবিধা না হয় এদিকে সর্বক্ষণ দৃষ্টি রাখা হয়।’

লাকি প্লাজা৩তবে সুলভমূল্যের সঙ্গে সংকটও রয়েছে। ক্রেতাদের অভিযোগ, মাত্র একটি ব্র্যান্ডের দোকান রয়েছে লাকি প্লাজায়। এছাড়া পোশাক ও অলংকার ছাড়া বিশেষ কোনো পণ্য পাওয়া যায় না এখানে। এ ব্যাপারে শফিকুল বলেন, ‘ব্র্যান্ডের দোকান বড় জায়গা চায়। মার্কেটে দোকানের জায়গা কম। আমাদের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কোনো বড় ব্র্যান্ডের দোকানকে জায়গা দেয়া যায় না। তবে কোনো দোকান খালি হলে আমরা ব্র্যান্ডের দোকান খোলার চেষ্টা করবো।’

ঈদ শপিং। একই এলাকায় অনেক মার্কেট থাকলেও লাকি প্লাজায় কেন এলেন জানতে চাইলে সাদিয়া বলেন, ‘কারণটা সবারই জানা। এখানে নারীদের পছন্দের সবকিছুই পাওয়া যায় স্বল্প খরচে। তাই সবাই মিলে একসঙ্গে এখানে চলে এলাম।’
শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, বোরকা, স্কার্ফ, ওড়না কিংবা এসবের সঙ্গে মিলিয়ে কসমেটিক ও গয়না সবই একই মার্কেট থেকে সাশ্রয়ী দামে পাওয়া যায় জানিয়ে মার্কেটের দ্বিতীয় তলার লাকি স্টোরের বিক্রেতা জমির বলেন, ‘লাকি প্লাজা অনেক আগে থেকেই নারীদের পছন্দের শীর্ষে। কারণ এ মার্কেটে তুলনামূলক কম দামে ভালো মানের প্রয়োজনীয় জিনিস কেনা যায়।’
বিষয়টি স্বীকার করে লাকি প্লাজা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বলেন, ‘ঈদে আমাদের মার্কেটে ব্যবসায়ীরা নতুন বিনিয়োগ করেছে ২০০ কোটি টাকা। এ সময় বিকিকিনি অনেক বেড়ে যায়। রমজানে খেলনা বা ছোটখাটো দোকানে বিক্রি করা হয় পাঞ্জাবি।’
এ মার্কেটে নারীদের পছন্দের মধ্যে শাড়ি আছে শীর্ষে। শাড়ির মধ্যে বেশি বিক্রি হচ্ছে কাতান, বালুচুরি, টাঙ্গাইল, লেহেঙ্গা স্টাইলের দুই পার্টের শাড়ি। এছাড়া সালোয়ার কামিজের মধ্যে রয়েছে শারারা, লাসা, রাই কিশোরী, কোটি স্টাইলের ফ্লোর টাচ, কিরনমালা ও জলপরী।

একযোগে সব দোকান চালু হওয়ার মাধ্যমে শুরু হয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পরিচালিত সিঙ্গাপুর ব্যাংকক মার্কেট। ৩০২টি দোকানের মধ্যে ৫০টিরও বেশি ব্র্যান্ডের দোকান। মার্কেটে অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে মোবাইল ফোনের বিক্রি ও সরবরাহ বেশ ভালো। এছাড়া সব পণ্যের ব্র্যান্ডেড দোকান রয়েছে এ মার্কেটে। মার্কেটের ব্যবসায়ীদের অভিমত, মার্কেটে নামী সব ব্র্যান্ডের মোবাইল ফোনের শো-রুম থাকার কারণে এর প্রসার এতো বেড়েছে।

সিঙ্গাপুর ব্যাংকক মার্কেটের দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘খুব অল্পসময়ে দ্রুত প্রসার ঘটেছে মার্কেটটির। এখানের পরিবেশ ভালো। মার্কেটে সব ব্র্যান্ডের মোবাইল ফোন সুলভমূল্যে পাওয়া যায়। বিখ্যাত অনেক মোবাইল ফোন ব্র্যান্ডের শো রুমও রয়েছে এখানে। এতবড় আধুনিক মোবাইল মার্কেট চট্টগ্রামে আর কোথাও নেই।’

তিনি বলেন, ‘ব্র্যান্ডের দেশি-বিদেশি পোশাক, ঘড়ি, জুতা, ক্রোকারিজও পাওয়া যায় মার্কেটে। একসময় এখানে জাহাজ থেকে বিদেশি পণ্য আনা হতো। সেই ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় এখনও মার্কেটে দুষ্প্রাপ্য শো পিস পাওয়া যায়।’
বাদামতলী মোড়ের অদূরে সাউথল্যান্ড সেন্টারও এলাকাবাসীর নিত্যপণ্যের চাহিদা মেটাচ্ছে। তাহলে একই স’ানে চারটি মার্কেট থাকায় প্রতিযোগিতা কেমন? প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলেও তা নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করেন না লাকি প্লাজার ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, ‘আমাদের মার্কেট সারা বছর চলে। অন্যান্য মার্কেটগুলোতে মৌসুমভিত্তিক বিক্রি হয়ে থাকে। তাই সেবাটাকেই মুখ্য বিবেচনা করা হয় এখানে।’

ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে ঈদ উপলক্ষে দোকানগুলোতে দেখা যায় বাড়তি সাজ। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়।

মার্কেটে ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতাদের ভারে টালমাটাল প্রতিটি দোকান। বিক্রয়কর্মীদের দম ফেলানোর যেন ফুরসত নেই। ক্রেতারাও সময় নষ্ট না করে সাধ আর সাধ্যের সমন্বয় ঘটিয়ে পছন্দের জিনিসটি কিনে নিচ্ছেন। অন্যবারের তুলনায় দাম কিছুটা বেশি- এমন অভিযোগ করলেও পছন্দের জিনিসটি কিনতে পেরে খুশি ক্রেতারা।