চোখ ধাঁধানো ফুলের জমজমাট কেনাবেচা

0
562

জিপসি, গ্লাডিওলাস, ডালিয়া, গাঁদা, জারবেরা, কাঠমালতী, কামিনী, বেলি, জবা, গন্ধরাজসহ নানা প্রজাতির ফুলে ছেয়ে গেছে বন্দর নগরীর সবগুলো ফুলের দোকান।
  চট্টগ্রামে প্রতিদিন বাড়ছে ফুলের চাহিদা। নগরীর চেরাগী পাহাড়, মোমিন রোডসহ বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ফুলের দোকান। গত তিন চার বছরের মধ্যে শুধুমাত্র চেরাগী পাহাড় ও মোমিন রোড এলাকাতেই গড়ে উঠেছে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৫০টি ফুলের দোকান।

ভালোবাসা দিবস আর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে ঘিরে এসব ফুল দোকানে চলে রাজ্যের ব্যস্ততা। বসন্তকে স্বাগত জানাতে পহেলা ফাগুনকে নিয়ে আশায় বুক বেঁধেছেন চট্টগ্রামের এসব ফুল ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, ফাগুনের আগামী কয়েকদিনে প্রায় ৮ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করবেন।

নগরীতে আজকাল ফুল পরিণত হয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় নাগরিক পণ্যে। ভোর থেকে গভীর রাত অবধি মোমিন রোডের ফুলের দোকানগুলোতে ফুল বেচাকেনা আর ব্যস্ততা একটি পরিচিত দৃশ্যে পরিণত হয়েছে। সন্ধ্যার পর হরেক রকম বাহারী ফুলের স্তবক, মালা, বুকেট, সাজঝুড়িতে দোকানের বর্ণালী আলো পড়ে এক অপরূপ নান্দনিক দৃশ্যের সৃষ্টি করছে। চট্টগ্রামসহ দেশের নানা স্থানে আজকাল বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ফুলের চাষ হওয়ায় নানা ধরনের ফুলের নিয়মিত সরবরাহ আসছে। অন্যদিকে গত ক’বছরে ফুলের দামও সহনীয় পর্যায়ে নেমে এসছে বলে জানান মোমিন রোডের ফুলের দোকানী ও ব্যবসায়ীরা।

ফুল ব্যবসায়ীরা জানান, জেলার চন্দনাইশের খাগড়িয়া, কক্সবাজারের চকরিয়া, যশোরের গদখালি ও পানিসার এমনকি সিঙ্গাপুর থেকেও ফুল আসছে। রজনীগন্ধা, গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা, গ্লাডিওলাস, জিপসি, রডস্টিক, ক্যালেন্ডুলা, চন্দ্রমল্লিকা, জিপসি, কাঠমালতী, কামিনী, বেলি ফুল বেশি আসছে।

সূরভী ফুল বিতানের আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘লিলি, থাই গোলাপ, কিসিমসিমা মিম, অর্কিড, লিমু, গেলোডিয়াস, রজনীগন্ধা, ক্যালেন্ডুলা, গোলাপ, জারবেরা, গ্লাডিওলাস, জিপসি, চেরিগেণ্ডা, গাঁদা, মাম ফুলসহ দেশি-বিদেশি নানান ফুলে আমরা দোকান সাজিয়েছি। সঙ্গে রয়েছে পহেলা ফাগুনের জন্য মাথায় পড়ার ফুলের তোড়া। এ সময়টা সব ধরনের ফুলের চাহিদা বেশি থাকে, তবে গোলাপের কদর আলাদা। বিশেষ করে ভালোবাসা দিবসে গোলাপের চাহিদা বেশি হয়, দামও বেশি।’

ফুল বিক্রি নিয়ে আশার সঙ্গে রয়েছে হতাশাও। চট্টগ্রামের শঙ্খ নদীর দুই তীরে ফুল চাষের জন্য বিখ্যাত। তবে এবার ফুলচাষীদের মুখে হাসি নেই। প্লাস্টিকের ফুলের কারণে শত শত ফুলচাষী মনের হাসি নিভে গেছে। একই কারণে লোকসান গুনছেন পেশাদার ফুল বিক্রেতারাও।

জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে কিছু মৌসুমী ফুল ব্যবসায়ীরা বিদেশ থেকে প্লাস্টিকের ফুল আমদানি করায় দেশীয় ফুল ব্যবসায় ধস নেমেছে। সেই সাথে ফুল চাষের পরিধিও হ্রাস পেয়েছে। একই কারণে চলতি বছর দেশের বিভিন্ন এলাকায় উৎপাদিত ফুল বিক্রিও কমে গেছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, শুধু বিশেষ বিশেষ দিবস ছাড়া ফুলের কদর খুবই কম।

চট্টগ্রাম ফুল ব্যবসায়ী দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. নাছের গনি চৌধুরী বলেন, ‘গত কয়েক বছর ধরে কিছু অসাধু ফুল ব্যবসায়ী বিদেশ থেকে নানা রকমের প্লাস্টিকের ফুল আমদানি করায় দেশি তাজা ফুলের বাজারে ধস নেমেছে। এ কারণে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে ফুলচাষ ও বিক্রির সাথে জড়িত কয়েক লাখ মানুষের জীবন জীবিকা হুমকির মুখে। সরকারিভাবে বিদেশ থেকে প্লাস্টিকের ফুল সম্পূর্ণ নিষেধ করা প্রয়োজন। তা না হলে দেশের সম্ভাবনাময় ফুলশিল্প হারিয়ে যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘চেরাগী পাহাড় এলাকায় ৩০টির বেশি ফুলের দোকান আছে। এছাড়া রাঙ্গামাটি-কক্সবাজারসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামে ফুলের দোকান আছে প্রায় দেড় হাজার। জাতীয় নির্বাচনের কারণে এবার বিজয় দিবস ও ইংরেজি নববর্ষে ফুলের ব্যবসা জমেনি। ফলে ফাল্গুন মাসকে কেন্দ্র করে সারা বছরের মন্দা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন ব্যবসায়ীরা। আশা করেছি, সামনের কয়েক দিনে বৃহত্তর চট্টগ্রামে ৮ কোটি টাকার ফুল বিকিকিনি হবে।’