কেবল পানাহার বন্ধ রাখাই রোজা নয়

0
462

মহান আল্লাহতায়ালার বিশেষ কৃপায় পবিত্র মাহে রমজানের রোজাগুলো সুস্থতার সঙ্গে অতিবাহিত করার তৌফিক লাভ করছি, আলহামদুলিল্লাহ। আমাদের সবার আত্মবিশ্লেষণ করা উচিত, এই যে রোজাগুলো আমরা পালন করেছি, আল্লাহপাকের সন্তুষ্টির জন্য, আসলেই কি আমরা এ দিনগুলোতে আল্লাহর নির্দেশমতো জীবন পরিচালিত করেছি? আমরা কি মিথ্যা বলাসহ সর্ব ধরনের পাপ থেকে বিরত থেকেছি? আমরা কি আল্লাহর ধ্যানে কিছুটা সময় অতিবাহিত করেছি? যদি আমাদের উত্তর না হয়, তাহলে এই রোজা রাখা আমাদের কোনো কাজে আসবে না।

কেননা রোজা মানুষের মাঝে এক ধরনের বিনয়, ধৈর্য, সব ধরনের পাপ মুক্ত এবং সহ্য-ক্ষমতা সৃষ্টি করে। আর রোজার মাধ্যমে মানুষ তার নিজের নাফসের সংশোধনও করে। যে ব্যক্তি রোজা রেখে বৃথা কাজকর্ম করে, মিথ্যা কথা বলে, ধোঁকা দেয় সেটি তার জন্য রোজা নয়। বরং শুধুমাত্র উপবাস থাকারই নামান্তর।

আমাদের প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা বলা এবং এর ওপর আমল করা থেকে বিরত থাকে না আল্লাহতায়ালার জন্য তার উপবাস থাকা এবং পিপাসার্ত থাকার কোনো প্রয়োজন নেই। অর্থাৎ তার রোজা রাখা বেকার বলে গণ্য হবে (বোখারি, কিতাবুস সওম)। অর্থাৎ যখন মানুষ রোজার প্রকৃত উদ্দেশ্য থেকে গাফেল হয়ে যায় তখন সে শুধু নিজেকে উপবাসই রাখে যা আল্লাহতায়ালার জন্য কোনো প্রয়োজন নেই। আল্লাহ মানুষের অন্তর দেখেন, কোন নিয়তে সে রোজা রাখছে এটাই মূল বিষয়।

হজরত ফাতেমা জাহরা (রা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি নিজের জিহবা, চোখ, কানসহ অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে সংযত করতে পারে না তার রোজা কোনো কাজেই আসবে না (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৯৩, পৃষ্ঠা ২৯৫)। একজন ব্যক্তির কেবলমাত্র অভুক্ত আর পিপাসার্ত থাকাই রোজার মূল উদ্দেশ্য নয়। কেননা মহানবী (সা.) বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন কোনো দিন রোজা রাখে, সে যেন অশ্লীল কথা না বলে এবং গোলমাল ও ঝগড়াঝাটি না করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় অথবা কেউ তার সঙ্গে ঝগড়াঝাটি করে তবে তার বলা উচিত, ‘আমি রোজাদার’ (বোখারি)।

তিনি (সা.) আরেক স্থানে বলেন, যে ব্যক্তি রোজাদার আর সে যদি চুপ থাকে তাহলে সেটাও তার জন্য ইবাদত, তার ঘুমও ইবাদত হিসেবে গণ্য করা হবে। তার দোয়া গ্রহণীয় হবে। আর তার আমলের প্রতিদান বাড়িয়ে দেওয়া হবে। নবী করিম (সা.) আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছেন, যারা রমজান মাসে প্রবেশ করেছে এবং আন্তরিকতার সঙ্গে রোজা রাখছে তাদের চেহারায় এক পবিত্র পরিবর্তন দেখা যায়, তাদের আত্মা নূরানি হয়ে যায় এবং তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয়। আর শয়তানকেও শিকল দিয়ে বেধে রাখা হয়।

কিন্তু যদি কোনো ব্যক্তি রমজান থেকে কল্যাণ না উঠিয়ে কেবল সাহরি আর ইফতার করে তার জন্য এই রোজা কোনো কাজের নয়। তাই আসুন, রমজানের অবশিষ্ট দিনগুলোকে কাজে লাগাই, অনেক বেশি ইবাতদ-বন্দেগিতে রত হই, বেশি বেশি দরুদ শরিফ পাঠ করি, তার ধ্যানে নিজেকে নিয়োজিত করি আর ফিতরা, ফিদিয়াসহ অধিকহারে সদকা-খয়রাত করি। আমরা যদি এমনটি করতে পারি তবেই না এই রমজানে আমাদের আত্মা হয়ে ওঠবে প্রশান্তিপ্রাপ্ত। আর আল্লাহপাকও তাকে সম্বোধন করে আহ্বান জানাবে, হে প্রশান্তিপ্রাপ্ত আত্মা! তুমি তোমার রবের জান্নাতে প্রবেশ কর। হে খোদা! পবিত্র রমজান মাসের বরকত ও কল্যাণ থেকে তুমি আমাদের কল্যাণমন্ডিত কর, আমিন।