সৌদি আরবের বিয়েতে ১ দিন

0
431

এক সৌদি যুবকের বিয়েতে নিমন্ত্রণ পেয়েছিলাম। বরের নাম আহমদ আল জাহরানি, আমাদের হাসপাতালের পরিচালকের সেক্রেটারি। সে সুবাদে বরযাত্রী হয়ে অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম কাল। এত বছর ধরে সৌদি আরবে আছি, সৌদিদের বিয়েঅনুষ্ঠানে অতিথি হওয়ার সুযোগ পেলাম এ প্রথম।

আমাদের দেশে বিয়েঅনুষ্ঠানে রঙিন কাগজে মোড়ানো উপহার হাতে নিয়ে যাই আমরা, কিন্তু এখানে কেউ উপহারের প্যাকেট হাতে নিয়ে আসেনি। এখানে বর বা কনেকে উপহার দেয়া হয় নগদ অর্থ। অনুষ্ঠানের কিছুদিন আগেই আমাদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করেছিল আমার কর্মস্থলের একজন। সংগৃহীত অর্থ একত্রিত করে খামে ভরে তুলে দেয়া হয়েছিল বরের হাতে।

আয়োজকরা আমাদের অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন ‘আহলান ওয়া সাহলান’, ‘হায়া কুমুল্লাহ, ‘আল্লায় হাইয়াক’- এমনি বিভিন্ন সম্বোধনে। সম্বোধনগুলোর একই রকমের অর্থ, ‘আপনাকে স্বাগতম’। মূল অনুষ্ঠানকক্ষের বাইরে চা নাস্তার আয়োজন। রয়েছে সৌদি চা ‘গাওহা’, বড় আকৃতির খেজুর, রসে ভেজানো শুকনো ডুমুর, ঘনীকৃত খেজুরের রস,পাশে রাখা রুটি। আমি খেজুরের ঘন রসে কয়েক টুকরো রুটি ভিজিয়ে মুখে পুরলাম। এই শীতের রাতে এক কাপ ‘গাওহা’ হলে মন্দ হয়না।

পুরুষ অতিথিকক্ষে তলোয়ার হাতে নাচতে শুরু করলো বরপক্ষের লোকেরা। মিউজিক বাজছিল উঁচু স্বরে। বরকে গোল করে ঘিরে সারি বেঁধে তলোয়ার উঁচিয়ে নানান বয়সী পুরুষেরা শুরু করলো লম্ফঝম্প নাচ। নাচলো বৃদ্ধরাও। নাচের তাল লয় কিছুই শেখেনি যে শিশুটি, সেও তলোয়ার হাতে নাচের ব্যর্থ চেষ্টা চালাচ্ছিল। নাচ শেষে নৈশভোজ। অপেক্ষা করছে দুম্বার ঝলসানো গোস্ত।

নববধূ দেখার ভীষণ ইচ্ছে হয়েছিল। তা সম্ভব নয়। পুরুষ অতিথিদের জন্য তা নিষিদ্ধ। নারী অতিথিদের জন্য আলাদা অন্দর মহল। সেখানে দেখা যাবে ভিন্ন চিত্র। শরীর থেকে কালো বোরখার আবরণ সরিয়ে ফেলবে নারীরা। বেরিয়ে আসবে পশ্চিমা ধাঁচের পোশাক পরা ভিন্ন নারী। চারপাশে ছড়িয়ে পড়বে কড়া পারফিউমের খুশবু। উলুধ্বনি বাজাবে এরা, পুজো অনুষ্ঠানে হিন্দু রমণীগণ যেমনি কর উলুধ্বনি করেন, ঠিক তেমনি। গভীর রাত পর্যন্ত নেচে নেচে উন্মাতাল হয়ে উঠবে সৌদি নারীগণ। কে বলে নারীরা অবরোধবাসিনী? -সিকদার নাজমুল হক, তায়েফ, সৌদি আরব। ১১ জানুয়ারি ২০২০।