যৌথ পোল্ট্রি খামারে স্বাবলম্বী পাঁচটি পরিবার

0
133
কায়সার হামিদ মানিক,উখিয়া।
ইচ্ছে করলে বৈধ রোজগার করতে পারে নারীরাও। পাঁচ খামারি নারী মুরগীর খামার করে স্বাবলম্বি হয়েছে উখিয়ায়।
জানা যায়, যৌথভাবে অর্গানিক ব্রয়লার মুরগির খামার করে স্বাবলম্বি হয়েছে উখিয়ার পালংখালী পুটিবনিয়ার নারী উদ্যোক্তা লায়লা বেগম, আনোয়ার বেগম, সাকেরা বেগম, আনোয়ারা এবং রহিমা বেগম৷ আইওএম এর অর্থায়নে ইউনাইটেড পারপাসের সহযোগিতায় ইকরা প্রকল্পের অধীনে ৩৫ হাজার টাকা করে পাঁচ জন নারী উদ্যোক্তা মোট ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা পেয়ে এমন উদ্যোগ গ্রহণ করে। ওই প্রকল্পের আওতায় বাণিজ্যিক উপায়ে মুরগী পালনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। ১ হাজার ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা নিয়ে শুরু অত্যন্ত খুশি। সেখান থেকে মুরগীর খামার করে স্বাবলম্বি হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তারা।
গেল রমজানের শুরুতে আবারও ১ হাজার মুরগীর বাচ্চা নিয়ে শুরু করে দ্বিতীয় ব্যাচ। উদ্যোক্তাদের কঠোর পরিশ্রম ও বিজ্ঞান সম্মত পরিচর্যার ফলে প্রতিটি মুরগি ২৭ দিনে ১হাজার ৪০০ ও ১হাজার ৮০০ গ্রাম ওজন হয়। প্রতি কেজি ১৪০ টাকা বিক্রি করে প্রায় ১ লক্ষ টাকা লাভবান হন। এবারও আশানুরূপ লাভ করতে সক্ষম হয়েছে তারা। এভাবে যৌথ খামারে প্রতিদিন ৫ জনই কাজ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছে। খামারকে রোগব্যাধি থেকে সুরক্ষীত রাখার জন্য নিয়মিত বায়োসিকিউরিটি নিশ্চিত সহ ভ্যাকসিন প্রদান করে থাকে।
মুরগি পালন পদ্ধতি সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে- আনোয়ার বেগম বলেন, দীর্ঘদিন অন্যের খামারে নামমাত্র মজুরিতে কাজ করেছি। সেখান থেকে কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন করি। পরবর্তিতে ইউনাইটেড পারপাসের ইকরা প্রকল্পের কল্যানে বাণিজ্যিক মুরগি পালন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি এবং নগদ ৩৫ হাজার টাকা পাই। এভাবে আমরা পাঁচজন মিলে যৌথ ভাবে কর্মমুখী ব্রয়লার মুরগীর খামার শুরু করি। প্রতিটি ব্রয়লার বাচ্চার সময় ৩০-৫০ টাকা ক্রয় করতে হয়। এই বাচ্চগুলো বিক্রির উপযোগি করে গড়ে তুলতে ২৫-৩৫ দিন সময় লাগে। প্রাণিসম্পদ দফতরের কর্মকর্তা, বেসরকারি সেবাদন সংস্থা এবং ইউনাইটেড পারপাসের কর্মীরা নিয়মিত খামার পরিদর্শন করে সকল প্রকার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আমি সহ খামারে কাজ করে সংসার চালাচ্ছে একই এলাকার পাঁচজন নারী উদ্যোক্তা।
নারী উদ্যোক্তা লায়লা বেগম জানায়, নিজেরা কাজ করে ব্যবসায় লোকসানের চেয়ে লাভের অংশটাই বেশি থাকে। এখন পোল্ট্রি খামার করে স্বাবলম্বি আমরা। বর্তমানে আমাদের পোল্ট্রির খামার দেখে এলাকার নারী সমাজ উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। ইতোমধ্যেই উখিয়ায় অনেকেই এই ব্যবসায় উৎসাহী হয়ে উঠেছে। তিনি আরও বলেন, নারী সমাজ তথা সকল বেকার মানুষ পোল্ট্রি ফার্ম করে নিজেই নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে, সে লক্ষে এনজিওটি সহযোগিতা প্রদান করছে। তাদের মধ্যে আরেকজন উদ্যোক্তা সাকেরা বেগম বলেন, বর্তমানে আমরা পোল্ট্রি করে সংসার চালায়। এখানে কাজ করার আগে সংসারে অভাব ছিল। স্বামীর একার পক্ষে ভালভাবে সংসার চলত না। নুন আন্তে পান্তা ফুরোয় অবস্থা। এখন আমি খামার করে যে টাকা পাই, তা দিয়ে সংসার ভালোভাবে চলছে।
খামার করে ভাগ্য বদলে যাবার কথা স্বীকার করে আনোয়ার বেগম বলেন, আমরা একজন ৩৫ হাজার টাকা করে পাঁচ জন যৌথ ভাবে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলাম। এখন লাভের টাকা দিয়ে পাশে একটি পুকুর খনন করে মাছ চাষ করার পরিকল্পনা করছি। রহিমা বেগম বলেন, আমাদের পোল্ট্রি খামার দেখে এলাকার অনেক নারী-পুরুষ পোল্ট্রি খামার করে তারাও আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বি হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। অবহেলিত নারী সমাজকে এগিয়ে নিতে গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগী, গবাদি পশু পালন, নকশী কাঁথা, টেইলারিং, হস্তশিল্প ও কম্পিউটার প্রশিক্ষন সেন্টার গড়ে তুলতে চাই আমরা।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: সাহাব উদ্দিন বলেন, উখিয়ায় এমন নারী উদ্যোক্তা খুবই কম। লায়লা বেগম, আনোয়ার বেগম, সাকেরা বেগম, আনোয়ারা বেগম এবং রহিমা বেগমের মতো আরও উদ্যোক্তা তৈরি হলে শুধু উখিয়া নয় কক্সবাজার জেলায় বেকার সমস্যা দূর করা সম্ভব। চাকরি নামের সোনার হরিণের পেছনে না ছুটে হাঁস-মুরগী, গরু, ছাগলের খামার করে স্বাবলম্বি হওয়া সম্ভব। এতে বেকার সমস্যা লাঘবের পাশাপাশি আর্থিক ভাবে সাবলম্বী হওয়া যায়৷ আর্থসামাজিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে একজন নারী শুধু চাকরির বাজারে নয়, বরং নিজে উদ্যোক্তা হয়ে অন্যের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।