মাধ্যমিকে ‘প্রকল্পভিত্তিক শিখন পদ্ধতি’ প্রবর্তিত

0
89

আগামী বছর মাধ্যমিকে ‘প্রকল্পভিত্তিক শিখন পদ্ধতি’ প্রবর্তিত হওয়ার বিষয়টি প্রশংসার দাবি রাখে। এ পদ্ধতিতে অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখনের ওপর গুরুত্ব প্রদানের কথা রয়েছে। পরীক্ষার মোট নম্বরের মধ্যে ২০ শতাংশ থাকবে এই মূল্যায়নের জন্য; বাকি ৮০ শতাংশ নম্বরের ওপর আগের মতোই পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে। এ পদক্ষেপের মাধ্যমে মূলত প্রস্তাবিত শিক্ষাক্রমের রূপরেখার বাস্তবায়ন পর্ব আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে।

এ পদ্ধতি প্রবর্তন করা হলে শিক্ষার্থীরা গণিত, বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিক্ষকের দেওয়া সমস্যা বাস্তবজীবন ও পারিপার্শ্বিকতা থেকে সাক্ষাৎকার ও সরেজমিন গ্রুপভিত্তিক কাজের মাধ্যমে সমাধান প্রস্তাব তৈরি করে তা শ্রেণিকক্ষে উপস্থাপনের সুযোগ পাবে। যে কোনো তাত্ত্বিক আলোচনার সময় শিক্ষক যদি আলোচ্য বিষয়টিকে কোনো প্রতীক বা দৃশ্যমান অবয়বের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরেন, তাহলে তা অল্প সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত করতে সহায়ক হবে; একইসঙ্গে বিষয়টি অনেকদিন শিক্ষার্থীদের মনে থাকবে। আলোচ্য বিষয়ের সঙ্গে উদ্ভাবনের যোগসূত্র থাকলে শিক্ষার্থীরা উদ্ভাবনে আগ্রহী হবে, আশা করা যায়। আগামী বছর যে প্রকল্পভিত্তিক শিখন পদ্ধতি প্রবর্তন হবে সেটির একটি প্রস্তাব ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে। জানা গেছে, বাংলা, ইংরেজি, গণিত, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি- ছাত্রছাত্রীরা যেসব বিষয় পড়ে থাকে, সেগুলোর সমন্বয়ে দশটি মূল থিমের ওপর ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রকল্প ঠিক করে দেবেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষক। থিমগুলো হচ্ছে, আমার পরিবার, প্রকৃতি ও পরিবেশ, আমাদের উৎসব, সব কাজই গুরুত্বপূর্ণ, স্বাস্থ্য সম্পর্কিত স্থানীয় সমস্যার সমাধান, খাদ্য ও পুষ্টি, সম্পদের টেকসই ব্যবহার ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, আমার এলাকার মুক্তিযুদ্ধ, কৈশোরকালীন স্বাস্থ্য ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং কোভিড-১৯ : সমস্যা ও সম্ভাবনা। ‘প্রকল্পভিত্তিক শিখন পদ্ধতি’র মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা বাস্তবসম্মত, অপেক্ষাকৃত জটিল প্রশ্ন, সমস্যা বা চ্যালেঞ্জ অনুসন্ধান, সমাধান বা মোকাবিলা করার জন্য নির্ধারিত সময় ধরে হাতে-কলমে কাজ করে এ সংশ্লিষ্ট জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করবে। এছাড়া প্রকল্পভিত্তিক শিখনে শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত বিষয়ে গভীর জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি সূক্ষ্মচিন্তন, সৃজনশীল, সহযোগিতা ও যোগাযোগ, সমস্যার সমাধান, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রগতির ক্ষেত্রে প্রাথমিক শিক্ষার ভূমিকার বিষয়টি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার প্রবন্ধ ও বক্তব্যে বারবার উল্লেখ করেছেন। অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনও বলেছেন, প্রাথমিক শিক্ষা ও প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সামগ্রিক উন্নয়ন ছাড়া দেশের উন্নয়ন কখনোই পূর্ণতা পেতে পারে না। এ বিষয়ে তিনি তার ধারণাকে বাস্তবে রূপদানের লক্ষ্যে গঠন করেছেন একটি প্রতিষ্ঠান, যা এক্ষেত্রে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা আশা করব, আগামী বছর মাধ্যমিকের পাশাপাশি প্রাথমিকেও উল্লিখিত পদ্ধতিটি প্রবর্তিত হবে। সব স্তরের শিক্ষকদের দক্ষতা বাড়াতে তাদের অব্যাহত প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে হবে। অতীতে আমরা লক্ষ করেছি, নতুন কোনো পদ্ধতি চালু হওয়ার দীর্ঘদিন পরও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিক্ষক নতুন পদ্ধতিতে কাক্সিক্ষত দক্ষতা অর্জন করতে পারেননি। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। মাধ্যমিকে নতুন এ পদ্ধতি শিক্ষার মানোন্নয়নে সহায়ক হবে, এটাই কাম্য।