করোনার টিকা স্পুটনিক-ভি: জবাবের অপেক্ষায় মস্কো

0
70

রাশিয়ার কাছ থেকে করোনার টিকা স্পুটনিক-ভি ক্রয়ে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝিতে নন-ডিসক্লোজার এগ্রিমেন্ট সই করে বাংলাদেশ। সেই মাসেই মস্কোর সঙ্গে সাপ্লাই এগ্রিমেন্ট নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। দু’মাসে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। প্রস্তাবিত খসড়ায় নানা শর্তও যুক্ত হয়েছে কিন্তু এখনো তা চূড়ান্ত হয়নি। কূটনৈতিক সূত্রের দাবি মস্কো প্রস্তাবিত খসড়াটি পর্যালোচনার জন্য বাংলাদেশ সরকারের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে রয়েছে। ঢাকার গ্রীন সিগন্যাল বা জবাব পেলেই মস্কো চুক্তিটি চূড়ান্ত করবে। অবশ্য অন্য একটি সূত্র বলছে, সরবরাহের বিষয়ে নির্ধারিত সময় ক্ষণ ঠিক না হওয়ায় রাশিয়ার সঙ্গে টিকা কেনা সংক্রান্ত দরকষাকষি আটকে আছে। সরকার টু সরকার (জি টু জি) ওই চুক্তির নেগোসিয়েশনে রাশিয়া জানিয়েছে, বিশ্বের অর্ধশতাধিক রাষ্ট্রের সঙ্গে তারা টিকা বিক্রির চুক্তি করেছে।

অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে চুক্তিবদ্ধ দেশগুলোর চাহিদা অনুযায়ী ধাপে ধাপে তারা টিকা উৎপাদন এবং সরবরাহ করছে। চুক্তি হলে বাংলাদেশও কোনো একটি ধাপ বা স্ল্লটে ঢুকবে। অন্য দেশ যেভাবে টিকা পাবে বাংলাদেশ সেভাবেই পাবে। অর্থাৎ প্রথম একাধিক চালানে প্রথম ডোজ এবং নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজের টিকা সরবরাহ করবে রাশিয়া। কিন্তু বাংলাদেশ কম্প্রিহেনসিভ ডিল। অর্থাৎ প্রথমে ৫০ লাখ টিকার প্রথম ডোজ এবং নির্ধারিত সময়ে সমান সংখ্যক টিকার দ্বিতীয় ডোজের নিশ্চয়তা। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য যে কোনো টিকার চেয়ে রাশিয়ার টিকা সম্পূর্ণ আলাদা। তাদের প্রথম এবং দ্বিতীয় সম্পূর্ণ ভিন্ন। ফলে দুই ডোজের সমন্বয় এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এর সাপ্লাই করার বিষয়টি চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়া জরুরি। অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশ স্পুটনিক ভি’র দ্বিতীয় ডোজপ্রাপ্তি নিয়ে সব ধরনের শঙ্কা দূর করেই রাশিয়ার টিকা ক্রয়ের চুক্তিতে সই করছে ঢাকা। উল্লেখ্য, টিকা ক্রয়-বিক্রয়ের মতো স্পর্শকাতর নেগোশিয়েশনে আগাম নন ডিসক্লোজার চুক্তি সইয়ের বাধ্যবাধকতা রয়েছে দুনিয়াজুড়ে। যে কোনো দেশের সঙ্গে নন-ডিসক্লোজার সই করেই বাকি আলোচনা শুরু করতে হয়। বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা বন্ধুরাষ্ট্র রাশিয়ার সঙ্গেও তাই করেছে বাংলাদেশ। দেশটির কাছ থেকে করোনার টিকা কিনতে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে আগ্রহপত্র পাঠায় ১৬ই এপ্রিল। চারদিনের মাথায় নন-ডিসক্লোজার এগ্রিমেন্ট সই হয়। এরপরই সাপ্লাই এগ্রিমেন্টের খসড়া নিয়ে নেগোসিয়েশন শুরু হয়। এ বিষয়ে গত ৬ই জুন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, বাংলাদেশ রাশিয়া থেকে দ্রুত ৫ মিলিয়ন করোনার টিকা স্পুটনিক ভি কিনতে আগ্রহী। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ.কে. আব্দুল মোমেনকে উদ্ধৃত করে এ তথ্য জানানো হয়। সেগুনবাগিচা জানায়, ঢাকাস্থ রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার আই ইগ্নটভের বিদায়ী সাক্ষাৎকালে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন মন্ত্রী। অনুমোদন পেলে বাংলাদেশের কয়েকটি কোম্পানি রাশিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে টিকা উৎপাদন করতে পারবে বলেও সেদিন জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। স্মরণ করা যায়, জুন মাসে রাশিয়ার সঙ্গে টিকা কেনার আলোচনা শেষ করে জুলাই থেকে টিকার প্রথম চালানপ্রাপ্তির টার্গেট ঠিক করেছিল ঢাকা। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট টিকা রপ্তানি বন্ধ করার প্রেক্ষাপটে পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার বিকল্প উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের লক্ষ্যে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছিল। সে হিসাবে এপ্রিলের শেষে এবং মে মাসের শুরুতে যথাক্রমে রাশিয়ার স্পুটনিক-ভি এবং চীনের সিনোফার্মের টিকা জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেয় সরকার। চীন টিকার প্রথম চালান এরইমধ্যে ঢাকায় পৌঁছেছে।