দ্রুত কনটেইনার খালাস নিলে বন্দরে জটের শঙ্কা নেই

0
152

দ্রুততম সময়ে আমদানিকারকেরা কনটেইনার খালাস নিলে বন্দরে জট হওয়ার কোনো শঙ্কাই নেই বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান।

মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) তৈরি পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসানের নেতৃত্বে আসা ২২ সদস্যের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ মন্তব্য করেন।

বন্দর ভবনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরের কাজ হলো ২৪ ঘণ্টা সেবা দেওয়া। সেটি আমরা করোনার সময়ও দিয়ে আসছি। আমাদের ধ্যানে-মনে থাকে স্টেকহোল্ডারদের সেবা দেওয়া। কনটেইনারের বৈশ্বিক সংকটে রফতানি বাণিজ্য যখন বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল তখন আমরা সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে আলোচনা করে এর সমাধান বের করার চেষ্টা করেছি, চিঠি দিয়েছি। এর ফলে সুফল মিলেছে। এখন রফতানি বাণিজ্য স্বাভাবিক হয়ে আসছে।

আমদানি কনটেইনার বন্দরে আসার পর যত দ্রুত সম্ভব খালাস করে নিয়ে যেতে হবে। কনটেইনার বন্দরে পড়ে থাকলে সমস্যার সৃষ্টি হয়। পৃথিবীর কোথাও এফসিএল কনটেইনার বন্দর থেকে খালাস হয় না। তারপরও আমরা এটি অ্যালাও করি। তাই যত কম সময়ে কনটেইনার খালাস হবে বন্দরের কাজের গতি তত বেশি হবে।

তিনি বিজিএমই নেতাদের সমুদ্রপথে ক্রেতা দেশসমূহে সরাসরি জাহাজ চালুর বিষয়ে এমএলও’দের সঙ্গে আলোচনা করা, বায়ারদের পণ্য পরিবহনে নির্দিষ্ট শিপিং লাইন নির্ধারণ না করা ও ২৪ ঘণ্টা কাট অফ টাইমের মধ্যে রফতানি পণ্য বন্দরে পৌঁছানোর অনুরোধ করেন।

বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘করোনা শুরুর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আমাদের রফতানি ছিল ৩৪ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার। আর ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা ৬ বিলিয়ন ডলার কমে হয়েছে ২৮ বিলিয়ন ডলার। সর্বশেষ অর্থবছরে এ খাত কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। রফতানি হয়েছে ৩৪ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার। সরকারের সহযোগিতা ও চট্টগ্রাম বন্দরের নিরবচ্ছিন্ন সহযোগিতার ফলেই আমরা এটি অর্জন করতে পেরেছি।

তিনি বলেন, পোশাক রফতানির ক্ষেত্রে যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে, সেটি সমাধানে আমরা শিপিং লাইন ও বায়ার প্রতিষ্ঠানগুলোর এ দেশীয় প্রধানদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছি। যাতে কোনো একটি শিপিং লাইনকে পণ্য পরিবহনে নির্দিষ্ট করে দেওয়া না হয়। বায়াররা ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের কনটেইনারে পণ্য রফতানি চান, সেটি যাতে ২০ ফুট কনটেইনারেও করা যায় সেবিষয়েও আলোচনা চলছে।

তিনি চট্টগ্রাম বন্দরে কোনো জট নেই বলে বিভিন্ন দেশের বায়ারদের জানিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন।

মতবিনিময় সভার শুরুতে বন্দরের বর্তমান কার্যক্রমের ওপর পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন পরিচালক (পরিবহন) এনামুল করিম।

তিনি জানান, গত ১৫ দিন অর্থাৎ ১ থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত অন অ্যারাইভাল বার্থিং পাচ্ছে কনটেইনারবাহী জাহাজ। কনটেইনারবাহী জাহাজ না থাকায় কার্গোবাহী জাহাজের পণ্যও খালাস করা হচ্ছে কনটেইনার জেটিতে। যেখানে কলম্বো ও সিঙ্গাপুর বন্দরে বার্থিং করতে ৭ দিন, চীনে ১০ থেকে ১২ দিন ও আমেরিকার বন্দরগুলোতে ২০ থেকে ২২ দিন লাগছে।

১৮ জুলাই বেসরকারি আইসিডিগুলোতে রফতানি কনটেইনার ছিল ১৭ হাজার ৯৬টি আর খালি কনটেইনার ছিল ২৮ হাজার ২৯৬টি। সেখানে ১৫ আগস্ট এ সংখ্যা কমে রফতানি পণ্যবাহী কনটেইনারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৬৬০টিতে আর খালি কনটেইনার আছে ৪০ হাজার ১০টি।

বক্তব্য দেন বিজিএমইএ’র ১ম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, সাবেক ১ম সহসভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী, মঈনউদ্দিন আহমেদ মিন্টু, সাবেক পরিচালক অঞ্জন শেখর দাশ।

সভায় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. জাফর আলম, সদস্য (অর্থ) মো. কামরুল আমিন, সদস্য (প্রকৌশল) কমডোর এম নিয়ামুল হাসান, সদস্য (হারবার ও মেরিন) কমডোর মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, পরিচালক (প্রশাসন) মো. মমিনুর রশিদ, পরিচালক (নিরাপত্তা) লে. কর্নেল মোস্তফা আরিফ-উর রহমান খান, প্রধান অর্থ ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. ইলিয়াস রেজা, সচিব ওমর ফারুক, প্রধান প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) আমিনুল ইসলাম ও টার্মিনাল ম্যানেজার মো. কুদরত ই-খুদা মিল্লাত।