উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্থানীয়রা এখন পরবাসী

0
57
কায়সার হামিদ মানিক,উখিয়া। 
কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জোত জমিতে ভোগদখল ও চাষাবাদ করতে বাধা দেয়া হচ্ছে । এতে করে প্রায় দুই শত একর জমি অনাবাদি হয়ে পড়েছে। শুধু তাই নই ওই জমির উপর রোহিঙ্গাদের জন্য বসবাসের শেড তৈরি করছে এমন অভিযোগ ক্যাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে । এ ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে স্থানীয় জনগোষ্ঠী।
বালুখালী ৯ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্প ইনচার্জের গর্হিত কর্মকাণ্ড বন্ধ ও ব্যক্তিমালিকানাধীন জোত জমিতে ভোগদখলের সুযোগ দেয়া সহ অত্যাচার নির্যাতনের খড়গ থেকে পরিত্রাণ পেতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের নিকট লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসীরা।
স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্থ অনেকেই জানান , প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মানবিক কথা চিন্তা করে রোহিঙ্গাদেরকে জায়গা দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন দেখি আমাদের চাষাবাদের জায়গাও কেড়ে নিচ্ছে ।
সচেতন নাগরিক সমাজ মনে করেন রোহিঙ্গারা সরকারি বনভূমিতে বসবাস করলেও স্থানীয়দের নিজস্ব জায়গাতে বসতি গড়ে তোলার কোনো এখতিয়ার নেই। অথচ রোহিঙ্গারা এখন স্থানীয়দের জায়গায় বসবাস করতে শুরু করেছে ক্যাম্প ৯ এর সিআইসি’র সহযোগীতায়।
আবদুর রহিম নামের এক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বলেন, জোত খতিয়ানভুক্ত জায়গায় দোকান গৃহ নির্মাণ করে ব্যবসা-বাণিজ্য করে আসছিলাম। গত ২২ মার্চ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৪০ টি দোকান পুড়ে গিয়ে ৪০ লাখ টাকার মতো ক্ষতির সম্মুখীন হই । তিনি দুঃখ করে বলেন, অনেক টাকা ধার দেনা করে পুনরায় দোকান তৈরি করলেও ক্যাম্প ইনচার্জ মোহাম্মদ তানজীম বিনা নোটিশে  দোকান গুলো গুড়িয়ে দেয়। মৌলানা গফুর উল্লাহ একই অভিযোগ করে বলেন , ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বালুখালী বলি বাজারের শত শত দোকান ভস্মীভূত হওয়ায় সর্বশান্ত হয়ে বহু লোক পথের ভিখারী বনে গেছে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবরে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় ব্যক্তিরা লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, আগুনে পুড়ে যাওয়া দোকান গুলো পুনরায় সংস্কার করতে গেলে বাঁধা হয়ে দাড়ায় ক্যাম্প ইনচার্জ তানজীম। অভিযান চালিয়ে একাধিক বার দোকান গুলো গুড়িয়ে দেয় । স্থানীয়রা জমির বৈধ কাগজ পত্র ও দলিল দেখালেও কর্ণপাত করছেনা।
চাষিরা জানান, ক্যাম্পের পাশে জোত জমিতে চাষাবাদও করতে দিচ্ছে না। উল্টো রোহিঙ্গাদের পচা বর্জ্য ও মলমূত্রাদির ভাগাড় গড়ে তুলে। বলতে গেলে ক্যাম্প প্রশাসনের সহযোগিতায় জোত জায়গার উপর ৫শতাধিক রোহিঙ্গা ঝুপড়ি স্থাপন করা হয়েছে।
পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এম. গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বালুখালীস্থ ৯নং ক্যাম্প সহ আরো ৭টি ক্যাম্পে প্রায় দুই শত একর জোত রেকর্ডিয় জমি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কাটাতারের ভিতরে ঢুকে গেছে। এসব জমি গুলোতে রোহিঙ্গা বসতি গড়ে উঠেছে। এছাড়াও রোহিঙ্গাদের বর্জের কারণে চাষাবাদ করা যাচ্ছে না।
তিনি এও বলেন, ক্যাম্প প্রশাসন রোহিঙ্গাদের প্রতি অতি প্রীতিভাজন হওয়ার কারণে স্থানীয় জনগোষ্টির মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন
হচ্ছে।
রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সদস্য সচিব আলহাজ্ব নুর মোহাম্মদ সিকদার বলেন, সিআইসি কতৃক স্থানীয়দের জোত জমিতে চাষাবাদ করতে বাধা ও দোকান গৃহ গুড়িয়ে দিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্টানে আর্থিক ভাবে ধ্বংস করে দেয়া খুবই দুঃখ জনক । এমন গর্হিত কর্মকান্ডের প্রতিকারে তদন্ত দাবি জানান তিনি।
সুশীল সমাজ মনে করেন, স্থানীয়দের জোত জমি কাটাতারের ভিতরে ঢুকানো সম্পূর্ণ অবৈধ। যেহেতু কাটাতারে ভিতরে স্থানীয়দের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ। তাই এই প্রতিকারের পাশাপাশি পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে । অবিলম্বে এসব জোত জমি দখলমুক্ত করতে হবে।
বালুখালী ৯নং ক্যাম্পের ইনচার্জ (সিনিয়র সহকারী সচিব) মোহাম্মদ তানজীম তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, ক্যাম্পের কাটাতারের ভিতরে স্থানীয় জায়গা আছে। তবে সেখানে রোহিঙ্গা বসতি স্থাপন করা হয়নি।